দেরিতে হলেও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে উন্নতির পথ খুঁজে পেয়েছে বাংলাদেশ। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে আগ্রাসন এবং দক্ষতার অভাবে নিয়মিতভাবে ম্যাচ জিততে না পারার কারণে এক সময় সকলেই বাংলাদেশকে বাতিলের খাতায় ফেলে দিয়েছিলো ক্রিকেট বোদ্ধারা।
এছাড়াও পার্থক্য গড়ে দেওয়ার মত পাওয়ার হিটারের অভাব ছিল বাংলাদেশের। বিশ্বের প্রতিটি দলে অন্তত একজন পাওয়ার হিটার আছে। যিনি দলকে চিন্তামুক্ত রাখে। কিন্তু বাংলাদেশ দলে এমন কেউ না থাকাতেই তাদের বাতিলের খাতায় ফেলে দেওয়াটা সহজ ছিল।
গত বছর অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর সাকিব আল হাসান স্পষ্ট করেছিলেন, টি-টোয়েন্টি দল হিসেবে গড়ে তুলতে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা এবং নিজেদের সংস্কৃতির সাথে মানানসই ক্রিকেট খেলার লক্ষ্য ছিলো তার। শারীরিকভাবে বাংলাদেশিরা খুব বেশি শক্তিশালী নয়। এজন্য এটি খুব স্বাভাবিক যে, আন্দ্রে রাসেল বা ক্রিস গেইলের মতো পাওয়ার হিটার খুঁজে পাবে না বাংলাদেশ।
প্রতিপক্ষের উপর চাপ সৃষ্টি করতে স্কিল হিটিং এবং আগ্রাসনের উপর জোর দিবে বলে নিশ্চিত করেন সাকিব ও প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে এশিয়া কাপ এবং নিউজিল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের সব ম্যাচ হেরে যাওয়ার পর দলের দায়িত্ব নেয় সাকিব। সাকিব দায়িত্ব নেওয়ার পর দ্রুতই সাফল্য পায়নি বাংলাাদেশ।
কিন্তু প্রতিটি ম্যাচেই খেলোয়াড়দের মধ্যে আগ্রাসন লক্ষ্য করা গেছে। প্রথম বল থেকেই প্রতিপক্ষের উপর আগ্রাসী হওয়ার চেষ্টা করেন তারা। যদিও দুর্ভাগ্যবশত, ভুল পথেই হেটেছেন তারা।
যে প্রক্রিয়ার কারণে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সাফল্য আসলেও শক্তিশালী দলকে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। কিন্তু নেদারল্যান্ডস এবং জিম্বাবুয়েকে হারানোর পাশাপাশি ভারতের বিপক্ষে জয়ের অবস্থায় পাওয়া যায় টাইগারদের।
যদিও এখনও অনেকেই মনে করেন, বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স বিপর্যয়কর ছিলো। তবে সাকিব বলেছেন, তাদের মিশন সফল হয়েছে। আসলে সাকিব বোঝাতে চেয়েছিলেন, দলের প্রক্রিয়া সঠিক ছিল এবং তিনিও শেষ পর্যন্ত সঠিক ছিলেন।
বিশ্বকাপের পর প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি সিরিজে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হয়েছিলো বাংলাদেশ। ওয়ানডে ফরম্যাটে ইংল্যান্ডের কাছে ২-১ ব্যবধানে হারের পর টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে নামে টাইগাররা। কয়েক মাস আগে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয় করা ইংল্যান্ডকে তিন ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ।
নিজ মাঠে বাংলাদেশ এর আগে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েছে। তবে সে সময়কার মন্থর গতির পিচে এ জয়গুলো খুব বেশি একটা হিসেবে ধরা হয়নি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে স্পোর্টিং পিচে খেলা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পিচগুলো টি-টোয়েন্টির জন্য যথার্থ। অনেক পাওয়ার হিটার ও আক্রমণাত্মক বোলার নিয়ে দল গঠন করা সত্ত্বেও বাংলাদেশের স্মার্ট ক্রিকেটের কাছে কঠিন সমস্যায় পড়তে হয়েছে ইংল্যান্ডকে।
ফলাফলের দিকে না তাকিয়ে বাংলাদেশ নিজেদের স্বাভাবিক ও আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলেছে এবং এ কারণেই সাফল্য পেয়েছে। এরপর তুলনামূলক দুর্বল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে একটি ম্যাচ হারলেও টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। তবে একই ধারচের ক্রিকেট খেলেছে টাইগাররা।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের আগে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং বিষয় ছিল রশিদ খানের নেতৃত্বাধীন স্পিন আক্রমন মোকাবেলা। এ বিষয়ে সাকিব স্পষ্ট করেই জানিয়েছেন, বোলার যেই হোক না কেন তাদেও একই অ্যাপ্রোচ থাকবে। সাকিব এমন একজন অধিনায়ক যিনি পাওয়ার প্লেতেই দল তিন-চার উইকেট পড়ে গেলেও কখনো বিচলিত হন না। তবে সব সময়ই তার চাওয়া একই ধরনের অ্যাপ্রোচ ও আগ্রাসন অব্যাহত থাকুক।
আফগানিস্তানের করা ৭ উইকেটে ১৫৪ রানের জবাবে টপ অর্ডারের ব্যর্থতায় ৩৯ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। টপ অর্ডারের এমন অ্যাপ্রোচে এ সময় সাকিবকে বেশ রাগান্বিত দেখা গেছে। মূলত সাহসী পদ্ধতি কিংবা আগ্রাসনের করণে এই টপ অর্ডারটি ছিলো দলের সাফল্যেও মূল চাবিকাঠি। এরপর সাকিব দায়িত্ব নিয়ে ইনিংস বেগবান করেন। অধিনায়ক নিজে মাত্র ১৯ রানে আউট হলেও কিভাবে ব্যাটিং করতে হবে, তাওহীদ হৃদয় ও শামিম পাটোয়ারিকে সেটা দেখিয়েছেন। এমন ধরনের বাজে শুরুর পর বাংলাদেশ খুব কম ম্যাচেই জিততে পেরেছে। তবে ফলাফলের চিন্তা না করে ইতিবাচক ক্রিকেট খেলেছে হৃদয় ও শামিম।
হৃদয় বা শামিমের কেউই স্বাভাবিক পাওয়ার হিটার হিসেবে খুব বেশি অভিজ্ঞ নয়। তবে সাকিব ও কোচ হাথুরুর চাওয়া ঠিকই পূরণ করেছে তারা।
সূত্র: ইত্তেফাক