আঘাতমূলক সম্পর্ক বা ট্রমা বন্ডিং ধারণাটি সম্প্রতি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। ধারণাটি আমাদের মধ্যে নতুন হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুর রহমান জানান, এটি এমন এক মানসিক বন্ধন যেখানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানুষ যাকে আপন মনে করছে তার কাছ থেকেই আঘাত পায়। ভালোবাসা, নির্ভরশীলতা, অসম সম্পর্ক, একপাক্ষিক সম্পর্কই এর কারণ।
ট্রমা বন্ডিং কী
এই ধরনের সম্পর্কে একজন সঙ্গী তার সঙ্গীর ওপর কর্তৃত্ববাদী আচরণ করেন, সঙ্গীকে অপমান করেন। তারপর আবার ভালো ব্যবহার, উপহার, অনুশোচনা প্রকাশের মাধ্যমে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। সম্পর্কে থাকা অপর ব্যক্তিও একসময় অনেককিছুই মেনে নেন। ভাবতে শুরু করেন এটি হয়তো বা সঙ্গীর ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। চাইলেও সে সম্পর্ক থেকে তিনি বের হয়ে আসতে পারেন না। তারা নিজেরাই নিজেদের বোঝান যে, তার সঙ্গী সংগত কারণে তার ওপর বিরক্ত ছিলেন। নিজের ওপরই তখন দোষ চাপান। আবার ফিরে আসেন সম্পর্কে। বুঝতেও পারেন না তিনি আবার টক্সিক সম্পর্কেই ফিরছেন।
এমনটা কোথায় দেখা যায়
ভালোবাসার সম্পর্কে, দাম্পত্যে ট্রমা বন্ডিং দেখা যায়। তাছাড়া শিশু, বন্ধু, অফিসের সহকর্মী, এমনকি পরিবারেও ট্রমা বন্ডিং দেখা যায়। মানুষ সহজাতভাবেই পারস্পরিক বন্ধন ভাঙতে চায় না। যারা খুব দ্রুত অন্যের ওপর মানসিকভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়েন তাদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই ট্রমা বন্ডিংয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। নারী-পুরুষ, এমনকি শিশুরাও এই ধরনের সম্পর্কের মধ্য দিয়ে যেতে পারে। তবে নারীরাই এ ধরনের সম্পর্কের শিকার হন বেশি।
কেন এমন হয়
উত্তর হলো, নির্ভরশীলতা। সম্পর্কের ক্ষেত্রে মানুষ একটা পর্যায়ে অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। সম্পর্কের শুরুতে সুন্দর একটি সময় কাটানো হয় বলে সঙ্গীর ছেড়ে যাওয়ার ভয় তার মধ্যে কাজ করতে শুরু করে। সঙ্গীকে হারিয়ে একাকী হয়ে পড়ার ভয় পান তিনি। তাই তিনি অবচেতন মনে নিজেকে বোঝান, দোষটি আসলে তারই। এ জন্যই তিনি ওই সম্পর্কের স্বার্থে থেকে যান। টিকে থাকতে চান। আর এভাবেই একটা চক্রে আটকে যান। এই চক্র থেকে আর বের হতে পারেন না।
বের হওয়া যায় কীভাবে
আত্নসম্মানবোধ ভেঙে গেলে এ ধরনের সম্পর্ক থেকে বের হওয়া কঠিন। নির্ভরশীলতাই এখানে সবচেয়ে বড় সমস্যা। নিজের মধ্যে আত্নসম্মানবোধ বাড়ানো এখানে জরুরি।
সূত্র: ইত্তেফাক