ট্রাম্পের সফরের মধ্যেই দিল্লিতে সংঘর্ষে পুলিশসহ নিহত ৫
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার প্রথমবার ভারত সফরে এসেছেন। কিন্তু এর মধ্যেই দিল্লিতে নাগরিকত্ব আইনের পক্ষে-বিপক্ষে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্র হয়ে উঠে উত্তর-পূর্ব দিল্লির বিভিন্ন এলাকা।
এ ঘটনায় এক পুলিশসহ ৫ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১০০ জন। খবর এনডিটিভি ও বিবিসির।
এই নিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় দ্বিতীয়বার রণক্ষেত্র হলো দিল্লির রাজপথ। নাগরিকত্ব আইনের পক্ষে-বিপক্ষে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে পাথর ছোড়া, যানবাহনে অগ্নিসংযোগ এবং দোকানে আগুন লাগিয়ে দেয়ার অভিযোগ ওঠে।
এর আগে রোববার নাগরিকত্ব আইনের পক্ষে সভা করেন বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র। তখন প্রথমবার নাগরিকত্ব আইনের পক্ষে-বিপক্ষে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ বেধে যায়।
ফলে রণক্ষেত্রে পরিণত হলো দিল্লির বিভিন্ন এলাকা। পরে পরিস্থিতি সামাল দিতে নামানো হয় আধাসামরিক বাহিনী। ওই এলাকায় বড় জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
এ ছাড়া রোববার বিকালে জাফরাবাদে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। শনিবার রাত থেকে সেখানে জড়ো হন প্রায় শতাধিক নারী এবং নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখান তারা।
সোমবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব অজয় ভাল্লা বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, উদ্ভূত পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হয়েছে।
উত্তর-পূর্ব দিল্লির চাঁদবাগে নিহত হন পুলিশের হেড কনস্টেবল রতন লাল। গোকুলপুরীতে এক ডেপুটি পুলিশ কমিশনার আহত হন।
সোমবার দিনভর সংঘর্ষের বিভিন্ন ভিডিও প্রকাশ্যে আসে। সন্ধ্যায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, গোকুলপুরীতে বাজারে আগুন জ্বলছে।
সংঘর্ষের আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে যে, ভজনপুরা, মৌজপুর, জাফরাবাদে যানবাহন ও দোকানপাটে আগুন জ্বলতে।
ভজনপুরায় একটি পেট্রলপাম্পে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীরা পেট্রল বোমা ছুড়লে আগুন ধরে যায়।
জাফরাবাদে লাল শার্ট পরা এক ব্যক্তিকে নিরস্ত্র দিল্লি পুলিশ কর্মকর্তার দিকে যেতে দেখা গেছে। তার হাতে বন্দুক ছিল বলে দেখা গেছে।
অন্য একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, কংক্রিটের ডিভাইডার ভেঙে একে অপরের দিকে ছুড়তে। আরেকটি ভিডিওতে ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান শোনা গেছে। শনিবার রাতে জাফরাবাদে বিক্ষোভ শুরু করেন প্রায় এক হাজারের বেশি নারী।
উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে ১৪৪ ধারা জারি করে বড় জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া দিল্লি পুলিশের সদর দফতরের বাইরেও ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।
এদিন জেএনইউর শিক্ষার্থীরা সংঘ পুলিশের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে নির্মম আচরণ এবং উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে সংঘর্ষের ঘটনায় বিক্ষোভ মিছিল করেন।
দিল্লি পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যুতে দুঃখ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। সংঘর্ষের ঘটনাকে খুবই দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা, শান্তি ও সম্প্রীতি ফেরানোর জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে অনুরোধ করেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। দিল্লি পুলিশ রয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে।
দিল্লির উপরাজ্যপাল অনিল বায়জল বলেন, তিনি আইনশৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য দিল্লি পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন।
পরিস্থিতির দিকে কঠোর নজর রাখা হয়েছে। আমি সবাইকে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।
সোমাবর সংঘর্ষ চলাকালে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার কিছু আগে দিল্লি পৌঁছান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আহমেদাবাদের সর্দার প্যাটেল স্টেডিয়ামে ভারতকে সব ধর্মাবলম্বীর দেশ বলে মন্তব্য করেন।
সূত্র-যুগান্তর