প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিছুদিন আগে ভারতের একটি সম্মেলনে মজা করে বলেছিলেন “আমি আমার রাধুনীকে তরকারিতে পেঁয়াজ দিতে নিষেধ করেছি” প্রধানমন্ত্রীর সেই কথা মেহেরপুরসহ সারা দেশের রান্না ঘর গুলোতে সত্যতে পরিণত হয়েছে। ৫ কেজি চালের দামে ১ কেজি পেঁয়াজ কেনা আমার পক্ষে সম্ভবনা এমন কথা বলছে অনেকেই।
হ্যা, সব রেকর্ড ভেঙ্গে পেঁয়াজ এখন দুইশো ছাড়িয়েছে। মেহেরপুরের খোলা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২১০ টাকা দরে। পেঁয়াজের লাগামহীন দামে ক্রেতারা পড়েছে বিপাকে। কেউ কেউ বন্ধ করে দিয়েছে পেঁয়াজ খাওয়া।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত পেঁয়াজ রপ্তানী বন্ধ করে দেওয়ার পর থেকেই দাম বাড়তে শুরু করে। প্রথম অবস্থায় দেশের বাজারে ৪০-৫০ টাকা দরে পেয়াজ বিক্রি হলেও গত দুই মাসে বেড়ে দাড়িয়েছে ২০০ টাকায়।
মেহেরপুর সহ দেশের কাচা বাজারে সরকারি তদারকি না থাকায় পেঁয়াজের দাম অস্থির হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ করছে অনেক ক্রেতা বিক্রেতারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে মেহেরপুরের বড় বাজার কাঁচা পট্টিতে গিয়ে দেখা যায় বিক্রেতারা পেয়াজের দাম নিচ্ছে ১৮০-২০০ টাকা। দাম বেশি কেনো জানতে চাইলে বিক্রেতারা জানাই বাজারে ভারতীয় পেয়াজ নেই। যা আছে দেশি পেঁয়াজের সাথে সাথে সেগুলোরও দাম বেশি নিতে হচ্ছে।
বড় বাজার কাঁচা ব্যাবসায়ী রাশেদ বলেন, আমাদের কি দোষ, আমরা বেশি দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করছি। এ গুলো বড় বড় সিন্ডিকেটের ব্যাপার আমরা সহ ক্রেতারা সবাই তাদের হাতে বন্দি।
মেহেরপুর হোটেল বাজার কাঁচা পট্টিতে দাম আরও বেশি। এখানে প্রতি কেজি পেয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৯০-২১০ টাকা পর্যন্ত।
বিক্রেতা আক্তারুজ্জামান বলেন, আমরা বড় বাজার থেকে পেঁয়াজ কিনে নিয়ে আসি তাই সেখানের চেয়ে আমাদের কাছে দাম একটু বেশি।
শহরের হাসপাতাল পাড়ার আজিজুল পেশায় অটো চালক, বাজার করতে এসে কথা হয় তার সাথে। এ সময় তিনি পেঁয়াজের দাম শুনে মলিন মুখে বলেন, এসব আমাদের খাবার না। সারাদিন অটো চালিয়ে খরচ বাবদ ২০০-৩০০ টাকা থাকে আমরা কিভাবে এতো দামে পেঁয়াজ কিনবো।
মিয়া পাড়ার স্কুল শিক্ষক মোস্তাক আহমেদ আফসোস করে বলেন, তরকারিতে পেঁয়াজ দেওয়া আজ থেকে বাদ। ১ কেজি পেঁয়াজ কিনতে যদি ২০০ টাকা গুনতে হয় তবে বাকি সবজী কি দিয়ে নেবো।
বড় বাজারের আড়তদার ইয়ারুল ইসলাম বলেন, আমদের বাইরে থেকে পেঁয়াজ আনতে হচ্ছে বেশি দামে। তাছাড়া এল সি পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না এ জন্য দাম বেশি। নতুন পেঁয়াজ না ওঠা পর্যন্ত কিংবা ভারতীয় পেঁয়াজ না আসলে পেঁয়াজের দাম কমার কোন সম্ভাবনা দেখছিনা।
মেহেরপুর তহ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ বলেন, আমরা ভারতীয় পেঁয়াজের উপর নির্ভরশীল। এটা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পেঁয়াজের দাম লাগামহীন ভাবে বেড়ে চলেছে। বাজারের চাহিদা অনুযায়ি পেঁয়াজ সরবরাহ করতে পারছি না। তাই যে যা পারছে ইচ্ছে মত দাম হাকাচ্ছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদুল আলম বলেন, জেলা প্রশাসকের সাথে বাজার মনিটরিং কমিটির সভা হয়েছে। সভায় পেঁয়াজের দাম নিয়ে আলোচনা হয়। মেহেরপুরের আড়তদার যারা আছেন তারা বেশি দামে বাইরে থেকে পেঁয়াজ কিনে আনছে সে ক্ষেত্রে স্থানীয় খোলা বাজারে দাম বেশি হচ্ছে।
মেহেরপুর জেলা মার্কেটিং অফিসার জিবরাইল বলেন, পেঁয়াজের দাম শুধু মেহেরপুর না সারা দেশে সমস্যা। এখানে আমাদের তেমন কিছু করার থাকে না। কবে আমরা আশা করছি আগামী এক মাসের মধ্যে পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
-মর্তুজা ফারুক রুপক