শতবর্ষ পূরণ করতে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। শিক্ষা-সংস্কৃতি ও বাঙালির আন্দোলন-সংগ্রামের সূতিকাগার উপমহাদেশের প্রাচীন এই বিদ্যাপীঠের শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষ্যে নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
শতপূর্তি ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বর্ণিল সাজে সেজেছে ক্যাম্পাস। নানান রঙে আলোকিত করা হয়েছে বিভিন্ন স্থাপনা। ক্যাম্পাসজুড়ে সাজ সাজ রব।
শতবর্ষ পূর্তির অনুষ্ঠান শুরু হচ্ছে আজ থেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যাঞ্চেলর মো. আবদুল হামিদ এ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন।
করোনা মহামারির কারণে জাঁকজমকভাবে শতবর্ষ পূর্তির অনুষ্ঠান করতে না পারার আক্ষেপ ঘুচাতে আয়োজনের কমতি রাখেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়ক, টিএসসি, কার্জন হল, উপাচার্য চত্বর, স্মৃতি চিরন্তন, কলা ভবন এবং আবাসিক হলগুলোকে নানা রঙের আলোয় আলোকিত করা হয়েছে। ঢাবি ক্যাম্পাস রীতিমতো উৎসবে পরিণত হয়েছে। নবীন প্রবীণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎসাহের কমতি নেই।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি শুভেচ্ছা বক্তব্য দেবেন ভূটানের প্রধানমন্ত্রী এবং ঢাবির অ্যালামনাই লোটে শেরিং। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। সভাপতিত্ব করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে শতবর্ষের তথ্যচিত্র প্রদর্শন এবং ‘থিম সং’ পরিবেশন করা হবে। এ ছাড়া রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ ও ওয়েবসাইটের উদ্বোধন করবেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ এবং ঢাবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশেনের সভাপতি এ কে আজাদ।
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনকালে স্বাধীন জাতিসত্তার বিকাশের লক্ষ্যে বিশ শতকের দ্বিতীয় দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া শুরু হয়।
১৯২১ সালের ১ জুলাই শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টির দ্বার উন্মুক্ত হয়। সে সময়কার ঢাকার সবচেয়ে অভিজাত ও সৌন্দর্যমণ্ডিত রমনা এলাকায় প্রায় ৬০০ একর জমির ওপর পরিবেশ গড়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রতিষ্ঠাকালে তিনটি অনুষদ ও ১২টি বিভাগ নিয়ে একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এর যাত্রা শুরু হয়। প্রথম শিক্ষাবর্ষে বিভিন্ন বিভাগে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিল ৮৭৭ জন এবং শিক্ষক সংখ্যা ছিল মাত্র ৬০ জন।
আজ শতবর্ষ ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ।
এদিন বিকাল ৪টায় ঢাবির ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা হবে। এতে সম্মানীয় অতিথি থাকবেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. সোনালী চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়। সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রথম দিনের কর্মসূচি সমাপ্ত হবে।
আয়োজনের দ্বিতীয় দিনে বিকাল ৪টায় ঢাবির ইমেরিটাস অধ্যাপক ও সাবেক উপাচার্য ড. একে আজাদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, ডাক-টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠান সমাপ্ত হবে।
৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠানের তৃতীয় দিন ঢাবির বঙ্গবন্ধুর চেয়ার ও অনারারি অধ্যাপক ড. আতিউর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচক হিসাবে উপস্থিত থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
সম্মানীয় অতিথি থাকবেন কলম্বো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক চন্দ্রিকা এন বিজয়ারত্নে। এদিন সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিনের অনুষ্ঠানের সমাপ্ত হবে।
৪ ডিসেম্বর বিকাল ৪টায় ঢাবির সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শাহাদত আলীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় উপস্থিত থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী।
১২ ডিসেম্বর বিকাল ৪টায় ঢাবির সাবেক উপ-উপাচার্য ড. নাসরীন আহমদের সভাপতিত্বে আলোচক থাকবেন রেলমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী প্রমুখ।
১৬ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আতশবাজি ও লেজার শোর মাধ্যমে ঢাবির শতবর্ষের কর্মসূচির সমাপ্ত হবে।