মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান। মেহেরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক (ধর্ম)। তাঁর স্ত্রী আরিফা মোস্তারি সদর উপজেলার তেরঘরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক।
মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান এর বাড়ি বাগেরহাট জেলার সদর উপজেলার দশানি গ্রামে এবং স্ত্রী আরিফা মোস্তরীর বাড়ি খুলনার মুন্সিপুরে।
দু’জনেই জেলা কোটার তথ্য গোপন করে সরকারি চাকরি নিয়েছেন। যা সরকারি চাকরি বিধি অনুযায়ী গুরুতর অপরাধ। এমন অপরাধের ক্ষেত্রে তথ্য গোপনকারীর চাকরি চলে যাওয়ার বিধান রয়েছে। একই ভাবে মেহেরপুর জেলা থেকেও দু’জন চাকরি প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৯৪ সালে মেহেরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষক (ধর্ম ) হিসেবে যোগদান করেন মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান। সিদ্দিকুর রহমানের স্ত্রী আরিফা মোস্তারি সহকারি শিক্ষক (নব সৃষ্ট পদ) হিসেবে তেরঘরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন ২০০৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর। চাকরির উদ্দেশ্যে সিদ্দিকুর রহমান মেহেরপুর জেলার নাগরিক হয়েছেন সদর উপজেলার বুড়িপোতা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে। ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের মৃত জমির উদ্দিন মাস্টারের ছেলে বন্ধু হিসেবে তার নাগরিকত্ব নেওয়ার ব্যাপারে সহযোগীতা করেন। এছাড়া মেহেরপুরের কোন এলাকায় তার কোন আত্মীয় আছে বলে জানা যায়নি।
চাকরিতে দেওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমানের চাকুরির গেজেটে জন্ম তারিখ ০২-০১-১৯৭২ ইং, রোল খু/মে ৬৫৭৮(খু/মে অর্থ খুলনা-মেহেরপুর)। শিক্ষাগত যোগ্যতা দাখিল দ্বিতীয় শ্রেণী, আলিম ১ম শ্রেণী, ফাজিল ১ম শ্রেণী, কামিল ২য় শ্রেণী।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান ১৯৯৪ সালে চাকুরীতে যোগদানের পর ২০১৫ সালে যশোর টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে বিএড করেন। নিয়ম অনুযায়ী মাদ্রাসার সমমানের সার্টিফিকেট দিয়ে বিএড করা যায় না। তাকে অবশ্যই সাধারণ শিক্ষায় বিএ পাশ করার পর বিএড করতে হতো। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে এ নিয়ম পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু সিদ্দিকুর রহমান ১৯৯২ সালে ইসলাম শিক্ষায় এমএ পাশ করেন।
একই সালে মাদ্রাসায় সমমানের সার্টিফিকেট অর্জন করেন। শিক্ষক হিসেবে চাকরী পেয়েছেন মাদ্রাসার সার্টিফিকেট দিয়ে। অথচ বিএড করেছে ইসলাম শিক্ষার (সাধারণ শিক্ষা) সার্টিফিকেট দিয়ে। দুই প্রতিষ্ঠানের দুই রকম সার্টিফিকেট একই সময়ে কিভাবে অর্জন করা সম্ভব হলো সেটি একটি বড় প্রশ্ন?
তবে তথ্য গোপন করে চাকরি নেওয়ার দায় স্বীকার করে মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ওই সময় ভুল হয়ে গেছে। সেই দায় থেকেই আর মেহেরপুর ছাড়তে পারিনি। যে কারণে মেহেরপুরে স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করেছি। যাতে কিছুটা পাপ মোচন হয়।
মেহেরপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফজলে রহমান বলেন, চাকুরী বিধি অনুযায়ী কেউ যদি তার তথ্য গোপন করেন, সেটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আরিফা মুস্তারি যদি এমন কাজ করে তাহলে সেটা অপরাধ হবে। আমি উনার কাগজ পত্র যাচাই বাছাই করে উর্দ্ধতন কতৃপক্ষকে জানাবো।
মেহেরপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র মোতাচ্ছিম বিল্লাহ মতু বলেন, পৌর এলাকার নাগরিক হতে হলে তার অবশ্যই জমিজমা বা নিজ নামে বাড়ি থাকতে হবে এবং বসবাস করতে হবে। এর বাইরে কেউ পৌর নাগরিক হতে পারবে না। সরকারি বিভিন্ন পদে চাকরির প্রশ্নে জেলা কোটা দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে বিষয়টি অধিক গুরুত্বপূর্ণ। এটা মানা না হলে জেলা কোটা থেকে অনেকেই বঞ্চিত হবে।
মেহেরপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম মুরাদ আলী বলেন, ভেরিফিকেশনের সময় কাগজ পত্র দেখেই করা হয়। নাগরিক সনদ পত্র প্রসঙ্গে বলেন, এক জেলার মানুষ অন্য জেলাতে গিয়ে স্থায়ী বসবাস এবং জমি বা বাড়ি নিজ নামে না থাকলে পৌর সভা বা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নাগরিক সনদ পাওয়ার কথা না। যদি কেউ তথ্য গোপন করে চাকরি পেয়ে থাকেন তাহলে সেটা প্রমান হলে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো: আতাউল গনি বলেন, এই ধরনের তথ্য গোপন করে চাকরি নিলে তার চাকরি থাকার কথা নয়। সংস্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে এলে চাকরিবিধি অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। তথ্য গোপন একটি মারাত্মক অপরাধ, এতে তার চাকরী চলে যাওয়ার সম্ভাবনায় বেশি।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় উপ-পরিচালক নিভা রানী পাঠক মেহেরপুর প্রতিদিনকে বলেন, যে কোন সময়ে নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষক/শিক্ষিকা কর্তৃক সরবরাহকৃত যে কোন তথ্য/সনদ পত্র মিথ্যা/ভুয়া/ক্রুটিপূর্ণ প্রমাণিত হলে তাহার বা তাহাদের সংশ্লিষ্ট নিয়োগ আদেশ বাতিল করা হবে এবং প্রচলিত আইনের বিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এটা চাকরির অন্যতম শর্ত।