ভারতের অর্থায়নে বাস্তবায়িত তিনটি উন্নয়ন প্রকল্প যৌথভাবে উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বুধবার ভার্চুয়ালি এই প্রকল্পগুলো উদ্বোধন করা হয়। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং নয়াদিল্লি থেকে যুক্ত হন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রকল্প তিনটি হলো—আখাউড়া-আগরতলা আন্তসীমান্ত রেলসংযোগ, খুলনা-মোংলা বন্দর রেললাইন এবং মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্টের দ্বিতীয় ইউনিট।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘উন্নয়ন প্রকল্পগুলো উভয় দেশের জনগণের সমৃদ্ধি নিশ্চিত করবে। এছাড়া আঞ্চলিক যোগাযোগ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর উদ্বোধন পারস্পরিক বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার বহিঃপ্রকাশ। এজন্য আমি নরেন্দ্র মোদিকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে আমরা দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করেছি। বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ খাতে আমাদের অর্জন দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত লাভ করেছে। চট্টগ্রাম বন্দর, মোংলা বন্দর এবং চট্টগ্রাম বিমানবন্দর ভারতের জনগণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।’
বাংলাদেশ এখন পৃথিবীর ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশে চরম দারিদ্র্যের হার ২০০৬ সালে ছিল ২৫.১ শতাংশ। ২০২২ সালে ৫.৬ শতাংশে নামিয়ে এনেছে আওয়ামী লীগ সরকার। মাথাপিছু আয় ২০০৬ সালে ৫৪৩ মার্কিন ডলার থেকে ২৭৬৫ মার্কিন ডলারে উন্নীত করা হয়েছে।’
যৌথ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘এটা আনন্দের বিষয় যে আমরা আবারও ভারত-বাংলাদেশ সহযোগিতার সাফল্য উদযাপন করতে সংযুক্ত হয়েছি। আমাদের সম্পর্ক ক্রমাগত নতুন উচ্চতায় পৌঁছে যাচ্ছে। গত ৯ বছরে আমরা একসঙ্গে যে কাজ করেছি, তা আগের কয়েক দশকেও করা হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সীমান্তে শান্তি, নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা স্থল সীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করেছি। এটি কয়েক দশক ধরে ঝুঁলে ছিল। আমরা সমুদ্রসীমার বিরোধও সমাধান করেছি। গত ৯ বছরে ৩টি নতুন বাস পরিষেবা চালুর মাধ্যমে ঢাকা, শিলং, আগরতলা, গুয়াহাটি এবং কলকাতার মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘গত ৯ বছরে ৩টি নতুন ট্রেন পরিষেবাও শুরু হয়েছে। ২০২০ সাল থেকে পার্সেল এবং কন্টেইনার ট্রেনগুলোও ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে চলছে, গঙ্গা বিলাস নামে বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রমোদতরী চালু করে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে পর্যটনও চাঙ্গা করা হয়েছে। গত ৯ বছরে আমাদের (বাংলাদেশ ও ভারতের) অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য তিনগুণ বেড়েছে।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে প্রচুর উন্নয়ন হয়েছে। বাংলাদেশের এই উন্নয়নে অংশীদার হতে পেরে আমরা গর্বিত।’ তিনি বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে বর্তমান সরকার। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভারত সব সময় বাংলাদেশের পাশে থাকবে।’ বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে ভারত সব সময় বাংলাদেশের পাশে আছে এবং থাকবে বলেও প্রতিশ্রুতি দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
আখাউড়া-আগরতলা আন্তসীমান্ত রেলসংযোগ প্রকল্পটি ভারত সরকারের ৩৯২ কোটি ৫২ লাখ টাকার অনুদান সহায়তার আওতায় বাস্তবায়িত হয়েছে। রেলসংযোগের দৈর্ঘ্য ১২ দশমিক ২৪ কিলোমিটার এবং বাংলাদেশে ৬ দশমিক ৭৮ কিলোমিটার ডুয়েল গেজ রেললাইন এবং ত্রিপুরায় ৫ দশমিক ৪৬ কিলোমিটার।
খুলনা-মোংলা বন্দর রেললাইন প্রকল্পটি ভারত সরকারের ছাড়ের লাইন অব ক্রেডিটের আওতায় ৩৮৮ দশমিক ৯২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে বাস্তবায়িত হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় মোংলা বন্দর ও খুলনার বিদ্যমান রেল নেটওয়ার্কের মধ্যে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ করা হবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বন্দর মোংলা ব্রডগেজ রেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।
মৈত্রী সুপার থার্মাল বিদ্যুৎ প্রকল্পে ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ভারতীয় ঋণসহায়তার আওতায় বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের রামপালে অবস্থিত একটি ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট (২x৬৬০) সুপার থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট (এমএসটিপিপি) প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়। এই পাওয়ার প্ল্যান্টের প্রথম ইউনিটটি ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে উভয় প্রধানমন্ত্রী যৌথভাবে উদ্বোধন করেন এবং ইউনিট-২ চলতি বছরের ১ নভেম্বর উদ্বোধন করবেন।