তিনটি হত্যা, হত্যা প্রচেষ্টা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত, চুরিসহ একাধিক মামলার আসামী আতিয়ার রহমান গাংনী উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। আর সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় এলাকায় আবারও শুরু হয়েছে আতংক।
তবে, মেহেরপুর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও গাংনী উপজেলা চেয়ারম্যান এমএ খালেক ও জেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়াসিম সাজ্জাদ লিখন বললেন তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা ষড়যন্ত্রমুলক।
দীর্ঘ ৫ বছর পর গত ২৯ জুলাই শুক্রবার বিকেলে গাংনী পাইলট হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ চত্বরে সম্মেলন শেষে রাতে কমিটি গঠণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। রাত ৮ টা থেকে শুরু হয়ে রাত ২ টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলে। ৩৫০ জন কাউন্সিলর ভোট প্রদান করেন।
কাউন্সিলে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় কৃষকলীগের নেতৃবৃন্দ ও মেহেরপুর জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এমপি, সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেকসহ আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের উপস্থিত ছিলেন।
কমিটিতে আতিয়ার রহমানকে সভাপতি ও মশিউর রহমান পলাশকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়েছে।
আতিয়ার রহমান গাংনী উপজেলার লক্ষিনারায়নপুর ধলা গ্রামের সাইফুল ইসলাম ওরফে সইফুদ্দীনের ছেলে।
গাংনী থানা সূত্রে জানা গেছে, আতিয়ার রহমানের নামে ১৪৩/৩২৩/৩২৪/৩২৫/৩২৬/৩২৬-৪/৩০৭/৩০২/৫০৬/১১৪/৩৪ দন্ডবিধিতে গাংনী থানার মামলা নং ৯. তারিখ ৯/১১/২০২১ ইং।
গাংনী থানার মামলা নং ৩৪. তারিখ ৩০/০৭/২০১৭ ইং, দন্ডবিধি ১৪৩/৩৪১/৩২৬/৩০২/
গাংনী থানার মামলা নং ১৬, তারিখ ১২/০৬/২০১৭ইং ধারা ১৪৩/৩২৩/৩২৬/৩০৭/৩৭১/৫০৬/১১৪ দন্ডবিধি।
মেহেরপুর সদর থানার মামলা নং ৯, তারিখ ৬/১০/২০১০ ইং, ধারা ৩৭৯/৪১১ দন্ডবিধি।
স্থানীয় মেম্বর ও লক্ষিনারায়নপুর ধলা গ্রামের টুটুল মেম্বর জানান, আতিয়ার নওপাড় গ্রামের ওমর আলীকে হত্যা প্রচেষ্টা চালায়। সে মামলার নং জিআর ১২/৯০। মামলায় ৭ বছর কারাদন্ড হয়। ২০০৩ সালের কাথুলি ইউনিয়নের সংরক্ষিত নারী সদস্য আলেয়া খাতুনকে প্রকাশ্যে দিবালোকে মাথায় কিরচি দিয়ে মারে। বর্তমানে আলেয়া মেম্বর পঙ্গু জীবন যাপন করছে। সে মামলায় ১ নং আসামী। ৯১ সালে ধলা গ্রামের নজিবুরকে পেটে ফলা দিয়ে ভুড়ি বের করে দেয়। ২০১৭ সালে বর্তমান মেম্বর টুটুলের বাড়িতে হামলা দলবল নিয়ে চলায় আতিয়ার ও তার লোকজন। এঘটনায় আতিয়ারকে ১ নং আসামীকে করে একটি মামলা হয়। মামলা নং ১৮৭/১৭ ইং। ২০১৭ সালের ২৯ জুলাই এনামুল হক নইলুকে হত্যা করে। হত্যা মামলার ১ নং আসামী। মামলা নং সেসন ১৬৯/১৮ ইং। ২০১১ সালের ৮ নভেম্বর সকালে দুই সহোদর জাহারুল ও সাহারুল ইসলাকে প্রকাশ্যে দিবালোকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। মামলায় ১ নং আসমী সে। ধলার বিল নিয়ে আতিয়ারের সাথে বিরোধের জের ধরে ২০০০ সালে সাইদুল হোসেন খুন হন। সাম্প্রতিক সময়ে জোড়া খুন মামলায় কারাবন্দী থেকে জামিনে মুক্ত হন তিনি।
সরকার দলীয় কয়েকজন নেতা ও কৃষকলীগের নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, একাধিক হত্যা, চুরিসহ বেশ কয়েকটি মামলার প্রধান আসামী আতিয়ার। এসব হত্যা মামলায় সে বারবার জেল খেটেছেন। এধরনের মানুষকে সভাপতি দেওয়া ঠিক হয়নি। আতিয়ারকে সভাপতি করাই দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। তাকে সভাপতির পদে দাঁড়াতে দেওয়াই ঠিক হয়নি।
গাংনী সরকারী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আব্দুর রশিদ বলেন, হত্যা মামলার আসামী ও ও জেল খাটা আসামী যদি একটা রাজনৈতিক দলের সহযোগী সংগঠণের সভাপতি হয় এর চেয়ে খারাপ কিছু হতে পারেনা। ভবিষ্যাতে এর খারাপ ফল রাজনীতিবিদদেরই ভোগ করতে হবে।
মেহেরপুর জেলা সুজনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ জাকির হোসেন বলেন, রাজনীতিতে ফ্রেস এবং নির্ভেজাল মানুষকে নেতৃত্ব দেওয়া উচিৎ। হত্যা মামলার একজন আসামীকে রাজনৈতিকভাবেই বেমানান দেখাবে। তাকে মানা না মানা নিয়ে রাজনৈতিক দলের মধ্যেই কথা উঠবে। এছাড়া ভবিষ্যতে রাজনৈতিক বিশৃংখলা দেখা দেবে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও গাংনী উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ খালেক বলেন, কৃষকলীগের আলাদা গঠনতন্ত্র রয়েছে। গঠণতন্ত্র মোতাবেক কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতাদের উপস্থিতিতে কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৩৫০ জন কাউন্সিলরের মধ্যে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে আতিয়ার রহমান সভাপতি নির্বাচিত হয়েছে। হত্যাসহ ৮ মামলার আসামি কিভাবে কৃষকলীগের সভাপতি হলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আতিয়ারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে এসকল মামলা করা হয়েছে।
জেলা কৃষক লীগের সাধরণ সম্পাদক ওয়াসিম সজ্জাদ লিখনও অভিন্ন সুরে বলেন,আতিয়ারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে মামলার আসামি হয়েছেন। কাউন্সিলদের প্রত্যক্ষ ভোটে তাকে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন।