সময় সীমা তিন বছর পার হলেও শেষ হয়নি ভবন নির্মানের অনেক কাজ। ভবন হস্তান্তর না পেয়ে পুরাতন ভবনে গাদাগাদি করে ক্লাশ করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এতে লেখাপড়া বিঘ্নিত হচ্ছে দাবী শিক্ষার্থীসহ শিক্ষকদের। এদিকে নির্মান কাজের অনেক বাকী থাকলেও , অতিরিক্ত ৩২ লাখ টাকা তুলে নিয়ে লাপাত্তা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। তবে এসবের দায় নিচ্ছেন না শিক্ষা প্রোকৌলী বিভাগ। এমন তথ্য পাওয়া গেছে মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার করমদি দারুসুন্নাহ নেছারিয়া দাখিল মাদ্রাসার বহুতল ভবন কাজে।
২০২১ সালে কাজ শেষ হবার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। হস্তান্তর হয়নি মাদ্রাসা ভবন। এক প্রকার বাধ্য হয়ে পরিত্যক্ত ভবনে ও মেঝেতে ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা। অভিযোগ রয়েছে, জেলা শিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী সার্বিক সহযোগিতায় অতিরিক্ত বিল দেয়া হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। তবে এসবের দায় নিতে চান না বর্তমান জেলা শিক্ষা প্রকৌশলী।
প্রাপ্ত তথ্য মতে. ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে মাদ্রাসা উন্নয়ন প্রকল্পে আওতায় মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার করমদি দারুসুন্নাহ নেছারিয়া দাখিল মাদ্রাসার ৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যয় ৪ তালা বহুতল ভবনের কাজ পায় কুষ্টিয়ার আনিসুর রহমান নামের এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে কাজটি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৭৫ ভাগ। তার বিপরীতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বিল দেয়া হয়েছে ২ কোটি ৬৭ লাখ ৫ হাজার টাকার। কাজ শেষ না করার পরও ২০২২ সালের ১২ এপ্রিল ২৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকা প্রদান করেন। এছাড়াও কাজ শেষ হওয়ার আগেই পিজি (পার্সোনাল গ্যারান্টেড) থাকা প্রায় ১৬ লাখ ১৫ হাজার টাকা উত্তোলন করতে সহযোগিতা করেন সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মুত্তাকিন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাদ্রাসায় পর্যাপ্ত বিল্ডিং না থাকায় শিক্ষার্থীরা মান্দার মেঝে ও পরিত্যক্ত বিল্ডিং গুলোতে ক্লাস করছেন। শিক্ষার্থীরা জানান, বিল্ডিং না থাকাই শিক্ষা কার্যক্রম ও বিভিন্ন ব্যবহারিক ক্লাস থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছে। এক রুমেই অনেকজন গাদাগাদি করে আবার কখনও কখনও খোলা আকাশের নিচে ও মেঝেতে বসে ক্লাস করতে হয়। সঠিকভাবে লেখাপড়ার পরিবেশ না থাকায় অনেক শিক্ষার্থীরা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছেন বলে জানান তারা। শিক্ষার্থীদের দাবী, নব নির্মিত ভবনের কাজ শেষ করে শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হোক।
মাদ্রাসার সুপার আবু জাফর জানান, পরিত্যাক্ত বিল্ডিং এর শিক্ষা পরিবেশ না থাকায় শিক্ষার্থীদের ক্লাস করাতে অনেক কষ্ট হয়। অনেক সময় ঝড় বৃষ্টির সম্মুখক্ষণ হতে হয়। অন্যদিকে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা ব্যবহারিক ক্লাসসহ অন্যান্য ক্লাস থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে যোগাযোগ করেও কোন লাভ হয়নি। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিল্ডিংয়ের কাজ দ্রুতই শেষ করে হস্তান্তর করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।
এ বিষয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সাথে বলতে চাইলে কোন কথা বলতে রাজি হননি।
মেহেরপুর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারি প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান জানান, কত টাকা বিল কিভাবে দেওয়া হয়েছে এ বিষয়ে আমার জানা নেই। আমার কাজ বিদ্যালয় পরিদর্শন করে তথ্য দেওয়া বাকিটা নির্বাহী প্রকৌশলী জানেন বলে জানান সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী।
মেহেরপুর শিক্ষা প্রকৌশলী অধিদপ্তরের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মুস্তাকিন জানান, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান লোকজন দুই থেকে তিনটি কাজ নেওয়ার ফলে এই বিল্ডিং এ কাজ করতে পারেননি। নিজের কিছুটা দায় গাফেলতি স্বীকার করে সংবাদটি প্রচার না করার অনুরোধ জানান সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী।
মেহেরপুর শিক্ষা প্রকৌশলী অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল আহসান বলেল, যোগদানের পর থেকে একাধিকবার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে দ্রুত কাজটি শেষ করার জন্য। সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী কি কারণে অতিরিক্ত ৩২ লাখ টাকা বিল দিয়েছেন বিষয়টি আমার জানা নেই। এ দায়ভার আমি নিতে চাই না বলে জানান বর্তমান এই নির্বাহী প্রকৌশলী।