মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার তেরাইল-জোড়পুকুরিয়া কলেজের কোটি টাকা লুটপাটের খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাখে নানা অনিয়মের খবরও উঠে আসছে। গতকাল মেহেরপুর প্রতিদিনে “শিক্ষক নিয়োগের কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় পর এলাকায় সাধারণ মানুষের মাঝে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। চায়ের দোকান, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মেহেরপুর প্রতিদিন পড়ার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েন উৎসুক জনতা। অতিরিক্ত পত্রিকা এলাকায় বিক্রির খবর জানিয়েছেন আমাদের স্থানীয় এজেন্ট।
সরেজমিন ও বিভিন্ন অভিযোগের মাধ্যমে জানা গেছে, ২০২১ সালে কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফার মৃত্যুর পর থেকে অনিয়ম আর দুর্নীতি ভরে গেছে কলেজটিতে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বিধিকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে ব্যবস্থাপনা পরিষদের সভাপতির মন মত চালানো হয়েছে কলেজটিকে। গোলাম মোস্তফার মৃত্যুর পর আওয়ামী দলীয় প্রভাষক মাসুম উল হক মিন্টুকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেন তৎকালীন সভাপতি বামন্দি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শহিদুল ইসলাম। ৫ জন সিনিয়র শিক্ষককে বাদ দিয়ে ৬ নম্বর সিনিয়র শিক্ষক মাসুম উল হককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর পর থেকে শুরু হয় নানা দুর্নীতি ও অনিয়ম।
আর্থিক দুনীতি নিয়ে থেমে থাকেনি প্রতিষ্ঠানের গভর্ণিং বডির সভাপতি ও অধ্যক্ষরা। ক্ষমতার বলয়ে ধরাকে সরা জ্ঞান করে নিজের মত অন্যের জমি দখল করে নিমার্ণ করেছেন গেইট ও প্রাচির। তাদের ক্ষমতার কাছে নস্যি হয়ে বিচারের আশায় বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ভুক্তভোগীরা। এনিয়ে আদালতে একটি মামলাও চলমান রয়েছে।
জানা গেছে, কলেজের দক্ষিণপাশে ফিদাহ হাসান নামের এক ব্যক্তির ৯ শতক জমি দখল করে নতুন গেইট নির্মাণ ও রাজিব নামে এক ব্যক্তির সাড়ে ১০ শতক জমি দখল করে প্রাচির নির্মাণ করার অভিযোগ উঠেছে । সাবেক এমপি সাহিদুজ্জামান, সাবেক সভাপতি শহিদুল ইসলাম ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাসুম উল হক জমি ক্রয় না করেই এসকল নির্মাণ কাজ করে অর্থ তছরুপাত করেছেন।
ফিদাহ হাসান গাংনী বাশবাড়িয়া টেকনিক্যাল ও বিএম কলেজের প্রভাষক। তাঁর বাড়ি তেরাইলের পার্শ্ববর্তি গ্রাম জোড়পুকুরিয়াতে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, মেহেরপুর-কুষ্টিয়া মহাসড়কের পাশে কলেজ সংলগ্ন তার ৯ শতক জমি রয়েছে। সেই জমি দখল করে সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাসুম উল হক, সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপির সাহিদুজ্জামানের ক্ষমতা ব্যবহার করে তার জমি দখল করে সেখানে বড় একটি গেইট নির্মাণ করেছেন। ওই জমির বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৯০ লাখ টাকা হবে। গেইট নির্মাণের সময় বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করা হলে সাবেক এমপির ক্ষমতার কারণে আমরা কথা বলতে পারিনি। ফলে তারা জবরদখল করে আমার জমির উপর গেইট নির্মাণ করেন। তিনি জমিটি ফেরত পাওয়ার দাবি করেন।
এছাড়া, ২০২২ সালে তেরাইল মৌজার ৪৮২৫, ৪৮০০, ৬০০৮ দাগে খাস কাবলা দলিল মূলে তেরাইল গ্রামের রেজাউল হকের ছেলে রাজিব হোসেন, তার মা মিনারা খাতুন, ভাই রাজু আহমেদ ও নিজ নামে ১০.২৫ শতক জমি কিনেন আজগর আলীর সাথে। এবং জমির নামজারিও ও খাজন প্রদান করেন। জমিটি রাজিবদের দখলে থাকলেও চলতি বছরের ৯ মার্চ তারা পাকা প্রাচির দিতে গেলে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাসুম উল হক ও কলেজ গভর্নিং কমিটির সভাপতি শহিদুল ইসলাম তাদের কাজে বাঁধা দেন এবং তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেন। পরে তারা কলেজের পক্ষ থেকে জমির মাঝ দিয়ে প্রাচির নির্মাণ করেন। এনিয়ে মেহেরপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে রাজিব একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য জেলা লিগ্যাল এ্ইড কর্মকর্তার দেওয়া প্রতিবেদনে জমিটি রাজিবদের বলে উল্লেখ করা হয় এবং কলেজ কর্তৃপক্ষ কোন কাগজপত্র দাখিল করতে পারেননি বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন।
এ বিষয়ে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জিনারুল ইসলাম বলেন, আগের অধ্যক্ষ সাবেক সভাপতিকে নিয়ে অন্যদের জমি দখল করে কলেজের গেইট ও প্রাচির নির্মাণ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে নতুন গভর্নিং বডির সভাপতিকে জানানো হয়েছে। এবারের মিটিংয়ে বিষয়টি উত্থাপন করা হবে।
অন্যের জমিতে গেইট ও প্রাচির নির্মাণ প্রসঙ্গে বর্তমান গভর্ণিং বডির সভাপতি জুলফিকার আলী ভুট্টো বলেন, দুইজনের জমিতে এসকল পার্কা নির্মাণ করা হয়েছে বলে জেনেছি। আগের কমিটির উচিত ছিলো তাদের সাথে মিমাংসা করার পর পাকা নির্মাণ করার। তবে আমরা চেষ্টা করছি তাদের জমিগুলো নিয়ে মালিক পক্ষের সাথে একটা মিমাংসার প্রক্রিয়া চালানোর।
অন্যের জমিতে গেইট ও প্রাচির নির্মাণের বিষয়ে সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাসুম উল হক বলেন, কলেজের পাশে দুই জনের জমি আছে, তবে যেখানে গেইট ও প্রাচির করা হয়েছে ওটা তাদের জমি না। তিনি আরও বলেন, সাবেক এমপির নির্দেশে গেইট করা হয়েছে এবং সভাপতি শহিদুল ইসলাম এলাকার লোকজনকে নিয়ে প্রাচির করিয়েছেন।
এ ব্যাপারে সাবেক সভাপতি শহিদুল ইসলাম গেইট ও প্রাচির নির্মাণের বিষয়ে বলেন, কলেজের যায়গা না হলে কলেজ ছেড়ে দেবে বলে ফোন কেটে দেন।