বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম দেশ যেখানে অসংখ্য মানুষ থাইরয়েড গ্রন্থি ও থাইরয়েড হরমোনজনিত সমস্যা নিয়ে বসবাস করছে। এটি দুই ধরণের। হাইপোথাইরয়ডিজম ও হাইপারথাইরয়ডিজম।
হাইপোথাইরয়ডিজম মূলত তিনটি কারণে দেখা যায়। এক. সদ্যোজাত শিশুদের মধ্যে থাইরয়েড গ্ল্যান্ড তৈরি না হলে কনজেনিটাল হাইপোথাইরয়ডিজম দেখা যায়। দুই. থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি সক্রিয় হলে, থাইরয়েড গ্ল্যান্ড খারাপ হয়ে যায়। তখন থাইরয়েড গ্ল্যান্ড কাজ করে না।
এটা অটোইমিউন হাইপোথাইরয়ডিজম। তিন. অপারেশনের কারণে থাইরয়েড গ্ল্যান্ড বাদ দিতে হলে বা ‘রে’ দেওয়ার কারণে থাইরয়েড নষ্ট হয়ে গেলে হাইপোথাইরয়ডিজম হতে পারে। আর শরীরে অ্যান্টিবডি অতিরিক্ত মাত্রায় থাইরয়েড গ্ল্যান্ডকে স্টিমুলেট করলে হাইপারথাইরয়ডিজমের সমস্যা দেখা যায়।
চূড়ান্ত পর্যায়ের পর ওষুধের ডোজ বেশি হলে, তার থেকে হাইপারথাইরয়ডিজম হতে পারে। থাইরয়ডাইটিস বা রক্তে ইনফেকশন হলে থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়। যেসব অঞ্চলে আয়োডিনের অভাব রয়েছে, সেখানে আয়োডিনের অভাবজনিত কারণে হাইপোথাইরয়ডিজম দেখা যায়।
থায়রয়েডের লক্ষণ ও চিকিৎসা নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম।
* হাইপোথাইরয়ডিজমে যে লক্ষণগুলো দেখা যায়-
ভালো না লাগা ও সঙ্গে লেথার্জিক ভাব, ত্বক খসখসে হয়ে যায়, পা অল্প ফুলে যায়, খিদে ভাব কমে যায়, চুল পড়তে শুরু করে, ওজন অল্প বেড়ে যায় (৫-৬ কিলোগ্রাম), স্মৃতিশক্তি কমে যায়, খিটখিটে ভাব, কনস্টিপেশনের সমস্যা হয়, ব্লাড প্রেশার বাড়তে পারে, বন্ধ্যাত্বর সমস্যা হতে পারে, প্রেগনেন্সির সময় অ্যাবরশন হতে পারে, কনজেনিটাল হাইপোথাইরয়ডিজমে শিশুর ব্রেনের বিকাশ হয় না, শীতশীত ভাব দেখা যায়, পিরিয়ডে সমস্যা হতে পারে।
* হাইপারথাইরয়ডিজমে যে লক্ষণগুলো দেখা যায়
খিদে বেড়ে গেলেও ওজন কমতে থাকে, প্রচণ্ড গরম লাগে, বুক ধড়ফড় করে, মেজাজ খিটখিটে হয়ে পড়ে, পিরিয়ডের সমস্যা হয়, ত্বক কালো হয়ে যায়, হার্টের সমস্যা হতে পারে, ব্লাড প্রেশার বেড়ে যায়, হাড়ের ক্ষয় শুরু হয়, বেশি বয়সে অস্টিওপোরোসিস হতে পারে, চোখ ঠেলে বেরিয়ে আসে, বন্ধ্যাত্ব হতে পারে।
* চিকিৎসা
থাইরয়েডের সমস্যা নির্ধারণের জন্যে ব্লাড টেস্ট করা হয়। হাইপোথাইরয়ডিজমের চিকিৎসা ওষুধের মাধ্যমে করা হয়। হাইপারথাইরয়ডিজমের চিকিৎসায়ও ওষুধ দেওয়া হয়। তবে ওষুধে কাজ না করলে, তখন সার্জারি বা রেডিওঅ্যাক্টিভ আয়োডিন থেরাপির কথা ভাবা হয়। গয়টারের সমস্যা হলে ফোলা অংশ ম্যালিগনেন্ট কি না তা নির্ণয় করা হয়। FNAC টেস্ট করা হয়। ম্যালিগনেন্ট নির্ধারিত হলে এবং শুরুর দিকে ধরা পড়লে রেডিওঅ্যাক্টিভআয়োডিন পদ্ধতির মাধ্যমে থাইরয়েড ক্যানসার নিরাময় সম্ভব। আয়োডিনের অভাবজনিত কারণে থাইরয়েডের সমস্যা হলে আয়োডাইজড সল্ট খাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
সূত্র: যুগান্তর