অবশেষে মাত্র ৭ ঘন্টার মাথায় উৎঘাটিত হয়েছে দর্শনার গৃহবধু মনজুরা খাতুন মিমের হত্যার রহস্য। বোনকে হত্যা করে নাটক সাজিয়ে রেহায় পেলোনা কুলাঙ্গার বড় ভাই আলমগীর।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা অকপটে স্বীকার করলে পুলিশ আলমগীরকে আদালতে নেয়। বিজ্ঞ আদালত তার স্বীকারোক্তি মৃলক জবানবন্দি রেকর্ড করে।
গত রবিবার চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় মিম আক্তার মনজুরা নামে এক নারীকে শ্বাসরোধ করে ও গলা কেটে হত্যার ঘটনায় তার ভাই আলমগীর কবীরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত আলমগীর তার বোন হত্যার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে গতকাল সোমবার দুপুরে আদালতে জবানবন্দী প্রদান করেছেন।
এ ঘটনার রহস্য উদঘাটন করে প্রেসব্রিফিং করেছে জেলা পুলিশ। গ্রেফতারকৃত আলমগীর কবীর (৩৮) দর্শনার মোহাম্মদপুরের মৃত আরমান আলীর ছেলে।
বিকাল ৪ টার দিকে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজিম উদ্দীন আল আজাদ (ক্রাইম এন্ড অপস্) বলেন, এক নিকট আত্মীয়ের সাথে বোনের পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক জেনে যায় ভাই। সেই অবৈধ সর্ম্পক থেকে বোনকে সরে আসার জন্য বারবার সতর্ক করে ভাই আলমগীর। কিন্তু বোন মনজুরা ভাইয়ের কথা না শুনে পরকীয় প্রেম চালিয়ে যায়। এ কারণে ক্ষুব্ধ ছিল ভাই।
এরই মধ্যে আলমগীরের সাবেক স্ত্রীর আত্মীয় স্বজনের সাথে বিবাদ সৃষ্টি হয়। শ^শুর বাড়ির লোকজন মোবাইল ফোনে হুমকি দিলে তা রেকর্ড করে বোনকে হত্যার জন্য প্রেক্ষাপট তৈরি করে ভাই আলমগীর।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, পরিকল্পনা মতো গত শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বোনকে কৌশলে বাড়ীর পাশের আমবাগানে ডেকে নিয়ে যায় ভাই। এসময় কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে বোনের নিজের ওড়না দিয়ে গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে লাশ বেগুন ক্ষেতে নিয়ে গিয়ে ধারালো দা দিয়ে গলাকেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে আলমগীর।
অনুসন্ধানের তথ্য থেকে পুলিশ কর্মকর্তা উদ্দীন আল আজাদ আরও জানান, হত্যার পর ঘটনা অন্যদিক প্রবাহিত করার জন্য আসামী আলমগীর ধারালো দা দিয়ে নিজের মাথায় নিজেই তিনটি পোচ দেন এবং আমগাছে থাকা রশি নিয়ে নিজেই নিজের হাত-পা বেঁধে চিৎকার করতে থাকে। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করলে অপহরণের নাটক সাজিয়ে বিভ্রান্ত করে আলমগীর। এসময় তার প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, এ ঘটনায় নিজেকে দায়ী করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন আলমগীর। এর আগে গতকাল সোমবার সকালে আলমগীরকে আসামী করে দর্শনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন বোন জামাই সুরুজ মিয়া।
পুলিশের প্রেস ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন সহকারি পুলিশ সুপার (দামুড়হুদা সার্কেল) জাকিয়া সুলতানা ও ডিবি পুলিশের ইনচার্জ ফেরদৌস ওয়াহিদ।
উল্লেখ্য, গত রবিবার (২২ অক্টোবর) ভোর সাড়ে ৫ টার দিকে দর্শনা মোহাম্মদপুরে বাড়ির পাশের একটি বেগুন ক্ষেত থেকে মিম আক্তার মনজুরার গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে পুলিশ আলমগীরকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশের একাধিক টিম আলমগীরকে জিজ্ঞাসাবাদে সে এ হত্যা কান্ডের ঘটনা স্বীকার করে। গতকালই মনজুরা খাতুন মিমের লাশের ময়না তদন্ত শেষে স্থানীয় কোবরস্থানে দাফন সম্পর্ন হয়েছে।
এদিকে স্থানীয় সুত্রে জানাগেছে বসত বাড়ির ২ কাটা জমি নিয়ে ভাই বোনের মধ্যে প্রায় ঝকড়া হতো। এ ধরনের ঘটনার জের ধরে এ হত্যাকান্ড ঘটতে পারে বলে এলাকাবাসির ধারনা।