দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনার দুটি ইটভাটার কারনে ৬ গ্রামের মানুষ অতিষ্ট হয়ে পড়েছে। এতে করে দিন-রাত ২৪ ঘন্টা মাটিদস্যুদের খাল- পুকুর ও কৃষি জমির মাটি কাটার মহোৎসব চলছে। যে কারণে মাটি বহনের ট্রাক্টরের শব্দে রাতের ঘুম হারাম হয়ে পড়েছে ৬টি গ্রামের বসবাকারী মানুষের। এর প্রতিকার চেয়ে প্রশসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে ভুক্তভোগীরা।
সরেজমিনে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা পৌরসভার পাশাপাশি দুটি গ্রামে আধা কিলোমিটার দুরত্ব দুটি ইট ভাটা গড়ে উঠেছে। এ ভাটা দুটির মধ্যে দর্শনা পৌরসভার ঈশ্বরচন্দ্রপুর গ্রামে ও দর্শনা আন্তজার্তিক চেকপোষ্ট শামসুল ইসলাম সড়কের সাথে আকন্দবাড়িয়া গ্রামে। এ দুটি ইটভাটার কারনে দর্শনা বাসষ্ট্যান্ড, দক্ষিণচাঁদপুর, আকন্দবাড়িয়া, রতিরামপুর, রাঙ্গিয়ারপোতা, সিংনগর, ঈশ্বরচন্দ্রপুর সহ কয়েক গ্রামের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। দিন-রাত ২৪ ঘন্টা মানুষের ঘুম হারাম করে দিয়েছে ভাটা মালিক পক্ষ। সড়কজুড়ে অবৈধ ট্রাক্টরের দৌরাত্ম্যের কারনে অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ফেসবুকেও করছে পোষ্ট। তাই ৬ গ্রামের মানুষ কোন উপায়ন্ত না পেয়ে প্রশাসনের কাছে হস্তক্ষেপ কামনা করছে। গত বছরের ২০২২ সালের ৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয় পর্যালোচনা সভা। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সন্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় অংশ নেওয়া কর্মকর্তাদের অধিকাংশই আইনটি সংশোধনের আগে আরও পর্যালোচনার তাগিদ দিয়েছেন। সেই সাথে
পাশাপাশি ২০১৯ সালের ইটভাটা আইনে বলা হয়েছে আপাতত বলবৎ অন্য কোন আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোন ব্যক্তি ইটভাটায় ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানি হিসাবে কোন জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করিতে পারিবেন না। তাহলে কিসের বলে কিসের জোরে জ্বালানী কাঠ ব্যাবহার করছে। তাহলে কি চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন টাকা খেয়ে অনুমোদন দিয়েছে পশ্ন তুলছে সাধারন মানুষ। সংশোধনী আইনে পরিস্কার বলা হয়েছে কোন ভাটা কয়লা ছাড়া কোন জ্বালানী কাঠ ব্যাবহার করতে পারবে না। তাহলে এদের খুটির জোর কোথায়। কোন আইন তোয়াক্কা না করে চালিয়ে যাচ্ছে অবৈধ ইট পোড়ানো ব্যাবসা। এ ভাবে চলতে থাকলে পরিবেশ পড়ছে হুমকির মুখে। একদিকে মাটিকাটার দৌরাত্ম্য অন্যদিকে কাঠ পোড়ানোর মহাউৎসব।এ মাটিদস্যুদের কৃষি জমির মাটি কাটার মহোৎসব। এই দুটি ভাটার মাটি কাটার প্রায় ১৫/২০ টা অবৈধ ট্র্যাক্টরের দৌরাত্ম্যে করছে সড়কজুড়ে। দর্শনা আন্তজার্তিক চেকপোষ্ট দিয়ে পাসপোর্ট যাত্রীসহ বিপাকে পড়ছে যানবাহন চলাচল নিয়ে। প্রতিদিন ঘটছে ছোট বড় দৃর্ঘটনা। দুটি ইটভাটার মালিক ইদ্রিস আলী ও ফরমান মিয়ার নের্তৃত্বে চলছে মাটি কাটার মহােৎসব। ফলে দুটি ইটভাটার মালিক দিনের বেলায় ও রাতের আঁধারে কৃষি জমির মাটি ট্রাক্টর যোগে কেটে নিচ্ছে তাদের ইটের ভাটায়।
জানা গেছে, দামুড়হুদা উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রায় অর্ধশতাধিক মাটি ব্যবসায়ী এই কৃষি জমির মাটি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়েছেন। ওরা স্থানীয় প্রভাবশালীদের যোগসাজশ্যে তাদের ছত্রছায়ায় থেকে এ ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছে। কেউ বাধা দিচ্ছে না তাদের, হরহামেশায় কৃষি জমির মাটি বিক্রি হচ্ছে। কৃষি জমির মাটি যেভাবে কাটা হচ্ছে এতে করে কৃষি জমি হুমকির মুখে পড়েছে। ভবিষ্যতে যেসব জমিগুলোতে মাটিকাটা হচ্ছে, স্তরের মাটি অপসারণ করা হয়, তখন ওইসব জমিগুলোতে ফসল উৎপাদনে ব্যর্থ হবে বলে ভবিষ্যৎ ধারনা কৃষি কর্মকর্তাদের। যেভাবে মাটিকাটা হচ্ছে, এভাবে রাস্তাঘাটসহ প্রতিনিয়ত ধ্বংসের মুখে পড়ে যাচ্ছে কৃষি জমি। তাই এলাকার সর্বস্তরের জনগণ বর্তমান সময় এই মাটি ব্যবসায়ীদের রুখে দিতে প্রশাসনের সদয় দৃষ্টি কামনা করছেন।
স্থানীয় একাধিক কৃষক ও সচেতন ব্যক্তিরা জানান, যেভাবে মাটিকাটা শুরু হয়েছে যেন কে/বা কারা তাদেরকে লাইসেন্স দিচ্ছে। মাটিকাটার জন্য রাস্তাঘাট যেমন ধ্বংস হচ্ছে তেমনি ধ্বংস হচ্ছে কৃষি জমি। বর্তমানে কোন ধরনের বাধা-বিপত্তি ছাড়াই ব্যবসায়ীরা মাটি কাটছে যা সত্যি দুঃখজনক ব্যাপার। তারপরও প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, এ মুহূর্তে যদি মাটি কাটা বন্ধ করা না যায় তাহলে ভবিষ্যতে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হবে বলেও জানিয়েছেন তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অভিযোগ করে বলেন, প্রত্যকটা জিনিসের নিদ্রা আছে, কিন্তু দুই ভাটার মালিক নিজেদের আখের গোছানোর জন্য সারারাত মাটি কাটছে। বাবা এরা টাকার জন্য মাটিকেও নিদ্রা দিচ্ছে না। এদের বিচার এ দেশে হবে না।
ছেলে মেয়েদের অভিভাবকদের কাছে জানতে চাইলে তারা আরও জানান, এখন স্কুল কলেজ খোলা রয়েছে। নতুন বই হাতে পাবে তাই ছেলে মেয়েদের নিয়ে কিছুটা চিন্তায় রয়েছি। যে কোন সময় ঘটতে পারে দৃর্ঘটনা। স্কুল, কলেজে যাবে ছেলে মেয়েরা তাদের সড়কে চলাচল করা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছি। গত বছরে দর্শনা রামনগরে স্কুল ছাত্র, রাঙ্গিয়ারপোতায় মোটরসাইকেল চালক ও সিংনগরে মাটিকাটা এক শ্রমিক মাটিকাটা ট্র্যাক্টরের চাকায় পিষ্ট হয়ে সড়কেই তরতাজা প্রান গিয়েছে এ তিনজনের।
এ বিষয়ে দর্শনা ষ্টার ব্রিকসের সত্বাধিকারী ইদ্রীস আলীকে ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেনি। সুপার ব্রিকসের সত্বাধিকারী ফরমান মিয়া বলেন, আমি একটু বাইরে যাচ্ছি গাড়ির মধ্যে রয়েছি, দু’দিন পর এসে কথা হবে। এ বিষয়ে দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সানজিদা বেগম বলেন, এ ধরনের কর্মকান্ড না করার নির্দেশনা দিয়েছি। না মানলে প্রয়োজনে মোবাইল কোর্টর মাধ্যমে আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।