চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় যুবলীগ কর্মী পল্টু হত্যাকান্ডের ঘটনায় মামলার এজাহারভুক্ত আসামী তোতা, বাংলা ও আশিক জামিনে বের হতে না হতেই তাদের দলবল নিয়ে বাদী পক্ষকে হুমকি ধামকি দিতে শুরু করেছে।
গতকাল সকালের দিকে পল্টু হত্যার বাদী মঈন উদ্দীন মন্টুকে বাজারে একা পেয়ে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য ভয়ভীতি দেখায় এবং প্রাণনাশের হুমকি পর্যন্ত দেয় বিবাদী পক্ষের লোকজন। এ বিষয়ে দামুড়হুদা মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরী করা হয়েছে।
বাদী পক্ষের থেকে জানাযায়, গত ২৩ আগস্ট দর্শনা পুরাতন বাজার রেল ইয়ার্ডে যুবলীগ কর্মী পল্টুকে প্রকাশ্যে জনসম্মুখে হত্যাকান্ডের ঘটনায় মামলার এজাহারভুক্ত আসামী স্বর্ণ ও মাদক চোরাকারবারী এবং একাধিক মামলার আসামী আব্দুল মান্নান খাঁন ও শেখ আসলাম আলী তোতা, দিপু, বাংলা, আলম, সোহেল ও আশিক এই ৭ জন কিছুদিন পালিয়ে আত্ম গোপন করে থাকার পর প্রশাসনের চিরনি অভিযানের প্রেক্ষিতে কৌশলে হাই কোর্ট থেকে আগাম জামিন নিয়ে নিম্ন আদালতে হাজির হলে, নিম্ন আদালত তাদেরকে আটকে দেয়।
এরপর কয়েক মাস জেলের ভিতর থেকে একাধিকবার নিম্ন আদালতে ও উচ্চ আদালতে জামিনের চেষ্টা অব্যাহত রাখে বিবাদী পক্ষ।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৩ই জানুয়ারি সোমবার উচ্চ আদালত ৭ জন আসামীর মধ্যে তোতা, বাংলা ও আশিকের জামিন মঞ্জুর করেন। সেখান থেকে কাগজপত্র চুয়াডাঙ্গায় নিম্ন আদালতে পৌঁছায় গত বৃহস্পতিবারে ওই দিনেই সন্ধার দিকে তারা ৩ জন চুয়াডাঙ্গা জেলা কারাগার হতে বের হয়।
আর জেল থেকে বের হতে না হতেই শুরু করেছে বাদী পক্ষের উপর বিভিন্ন ভাবে হুমকি ধামকি।
বাদী পক্ষ আরও জানান, প্রায় প্রতিনিয়তই বিবাদী পক্ষের লোকজন বিভিন্ন মাধ্যম দিয়ে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য বাদী পক্ষের লোকজনকে হুমকি ধামকি অব্যাহত রেখেছে।
এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে ১০ টার দিকে পল্টু হত্যার বাদী তার বড় ভাই দর্শনা পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মঈন উদ্দীন মন্টুকে দর্শনা রেলবাজারের কাঁচা বাজারে একা পেয়ে মোবারক পাড়ার মৃত: কবীর খালাসীর ছেলে পল্টু হত্যা মামলার ২ নং আসামী শেখ আসলাম আলী তোতা, তার বড় ভাই পিন্টু,
মৃত: রাজ্জাক কম্পাউন্ডারের ছেলে ৪ নং আসামী সাইদ খাঁন বাংলা, ইমারতের ছেলে ৭ নং আসামী আশিক ও ১ নং আসামী মান্নান খাঁনের ছোট ভাই হাসু খাঁন সহ অজ্ঞাতনামা ২/৩ জন মামলা তুলে নেওয়ার জন্য ভয়ভীতি দেখায় এবং প্রাণনাশের হুমকি পর্যন্ত দেয়। এতে করে বাদী পক্ষের লোকজন আশঙ্কা জনক অবস্থায় জীবন যাপন করছে। তাই বাদী পক্ষের মঈন উদ্দীন মন্টু বাদী হয়ে দামুড়হুদা মডেল থানায় এ বিষয়ে সাধারণ ডায়েরী করেছে।
উল্লেখ্য, গত ২৩ আগষ্ট-২০১৯ তারিখে প্রকাশ্যে ঈশ্বরচন্দ্রপুর গ্রামের মৃত: আব্দুর রউফ এর ছেলে যুবলীগ কর্মী নঈমউদ্দিন আহম্মেদ পল্টু (৩৫) কে প্রকাশ্যে জনসম্মুখে পিস্তুল উচিয়ে সাধারণ মানুষকে ভয় দেখিয়ে এবং ড্রেগার দিয়ে নৃশংস ভাবে খুঁচিয়ে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে যুবলীগের নামধারী কিছু সন্ত্রাসীরা এবং একই গ্রামের মৃত: ফরজ আলীর ছেলে মঞ্জুর আহম্মেদ (৩৪) কে মারাত্মক ভাবে পিটিয়ে আহত করে।
এ ঘটনায় নিহত পল্টুর বড় ভাই মঈনউদ্দীন বাদী হয়ে গত ২৪ আগষ্ট-২০১৯ তারিখে দামুড়হুদা মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
আসামীরা হচ্ছে, দর্শনা মোবারক পাড়ার আলী হোসেনের ছেলে আব্দুল মান্নান খাঁন (৪২), মৃত: কবির খালাসীর ছেলে শেখ আসলাম আলী তোতা (৪৩), দর্শনা পুরাতন বাজারের মৃত: জিয়াউল হকের ছেলে দিপু রেজা (৪১), মোবারক পাড়ার মৃত: আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে সাইদ খাঁন ওরফে বাংলা (৪১), বাদল খানের ছেলে মোঃ আলম (৪৩), ডাঃ শামসুল ইসলামের ছেলে মোঃ সোহেল (৪০) ও ইমারত আলীর ছেলে আশিক (২১) এ সাতজন সহ অজ্ঞাত আরো ১০/১২ জনকে আসামী করে দামুড়হুদা থানায় মামলা করা হয়।
এদিকে স্থানীয়দের মধ্যে অনেকে বলেছেন, পূর্বেও উক্ত মামলার আসামী মান্নান, তোতা, দিপু, বাংলা ও আলম হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটিয়েও টাকার জোরে ও ক্ষমতার দাপটে বের হয়ে আসে। এবং মোটা টাকার বিনিময়ে বিএনপি থেকে এসে আওয়ামী লীগের মত একটি বড় দলের একাংশ যুবলীগে পদ দখল করে নেয়।
ফলে ক্ষমতার দাপট আরো বেড়ে যায়। দিনে দিনে বাড়তে বাড়তে এতোটাই বেড়ে যায় যে দর্শনার ইতিহাসে যা ছিলোনা ঠিক তাই করে তারা রেকর্ড গড়ে তোলে শুধু ক্ষমতার লোভে। যার বহিঃপ্রকাশ শোকাবহ আগস্টের ২৩ তারিখ বিকাল সাড়ে ৫ টায় পল্টুর তাজা জীবন ও মঞ্জুর এর রক্তাক্ত জখম। যা আওয়ামী লীগ দলকেও কলঙ্কিত করেছে।
কি দোষ ছিলো নিহত সেই পল্টুর এবং আহত মঞ্জুরের? কেউ জানে না। শুধুই আধিপত্য বিস্তার করাকে কেন্দ্র করে এই ঘটনা। এর আগে দর্শনার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলামকে হত্যা করে এই মান্নান গ্যাং।
তার পরেও তারা বীর দর্পে প্রকাশ্যে চলাফেরা করে। তবে এবার দিনে-দুপুরে প্রকাশ্যে জনসম্মুখে এই পল্টু হত্যাকান্ডের ঘটনার পরেও যদি ছাড় পেয়ে যায় তাহলে দর্শনায় আর কোন দিন শান্তি ফিরে আসবে না। বরং একের পর এক এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকবে। তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটতে চলেছে আবারও।
উক্ত মামলার আসামীদের মধ্যে ৩ জন জামিনে বের হতে না হতেই বাদী পক্ষের লোকজনকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি ধামকি দিতে শুরু করেছে। তাই বিচার বিভাগের নিকট আকুল আবেদন এই হত্যাকান্ডের সঠিক ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। যাতে করে পরবর্তীতে এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর সাহস কারো না হয়।
মেপ্র/ আরপি