দীর্ঘদিন ধরেই বিনা পুজির ব্যবসা করছে এই ব্যাক্তি। যেমন ভিক্ষা করা একটি বিনা পুজির ব্যবসা তেমনি কোর্টে মামলা ঠুকে দেওয়া একটি বিনা পুজির মতই ব্যবসা। এ বিনা পুজির ব্যবসা করতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে ৪টি গ্রামে বসবাস করেছে এই ব্যাক্তি। আবার বসবাসসূত্রে এসকল গ্রামগুলির প্রতিবেশীদের সাথে কারনে অকারনে কয়েক বছরের ব্যাবধানে ৪২ জনের বিরুদ্ধে কোর্টে বিভিন্ন ধরনের মামলা ঠুকেছে এই ব্যাক্তি। আসামী পক্ষ মান মর্যাদা হারানোর ভয়ে বিভিন্ন সময়ে আর্থিক লেনদেনে বেশ কয়েকটি মিমাংসাও করেছে। আরও অনেক মামলা খারিজ হয়েছে ও অনেক মামলা চলমান রয়েছে।
এমনই এক ব্যাক্তির খোজ পাওয়া গেছে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা পৌর এলাকার পরানপুর গোরস্থান পাড়ায়। ফজল কানা বলেই তাকে সবাই এক নামে চেনে। এই ব্যাক্তির ২ চোখ অন্ধ হলেও প্রতিবেশী ও গ্রামবাসী তাকে দেখে বাঘের মতই ভয়পায়। আর ভয়পাওয়ার একমাত্র কারন ফজল কানার প্রধান অস্ত্র কারনে অকারনে মামলা ঠুকে দেওয়া। এলাকাবাসী সূত্রে জানাযায়, দির্ঘদিন ধরেই দর্শনা পৌর এলাকার পরানপুর রিফুজী কোলনী পাড়ায় বসবাস করে আসছিলো মৃত মজিবার রহমানের ছেলে ফজলুর রহমান ওরফে ফজল কানা (৬৫)। এসময় সে ভিক্ষা করে সংসার চালাতেন। সংসার জিবনে তার ৪ ছেলে ও ১ মেয়ে। ভিক্ষা করার সুবাধে বছর পাঁচেক আগে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের দোস্ত গ্রামে বসবাস শুরু করে। সেখানে কয়েক বছর বসবাস করে ঐ গ্রামের প্রতিবেশীসহ গ্রামের বিভিন্ন মানুষের সাথে বাধে দ্বন্দ। পরে গ্রামবাসী সকলে একজোট বেধে ফজল কানার ঘর ভেঙ্গে দোস্ত গ্রাম থেকে তুলে দেয়।
পরে দোস্ত গ্রাম থেকে পরিবার নিয়ে দর্শনা পৌর এলাকার ঈশ্বচন্দ্রপুর গ্রামে এসে বসবাস শুরু করে। এসময় ঈশ্বচন্দ্রপুর গ্রামের তার প্রতিবেশীসহ আনুমানিক ২০ জনের নামে বিভিন্ন কারনে অকারনে কোর্টে মামলা দায়ের করার অভিযোগ পাওয়া যায় গ্রামবাসীর কাছে। এর মধ্যে মরজেম ফকিরের ছেলে খবির উদ্দিন, কাবা মন্ডলের ছেলে ইলাহি, মরজেম মন্ডলের ছেলে মাহাবুর, মুজামের হকের ছেলে ইমার আলী, ইমার আলীর ছেলে ইদ্রিস, কাছেদের ছেলে বদর উদ্দিন, মহির ছেলে শাহিন, লতিফ, আনছার, মোজাম্মেল হকের ছেলে মমিন, নঈমুদ্দিনের দুই ছেলে রহিম ও ইদ্রিস, আজিম মন্ডলের ছেলে হালিমসহ আনেকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কারনে অকারনে কোর্টে মামলা ঠুকে দেয়। এদের মধ্যে কাবা মন্ডলের ছেলে ইলাহির কাছ থেকে ২১হাজার টাকা ও মরজেম মন্ডলের ছেলে মাহাবুরের কাছ থেকে ৭ হাজার টাকা নিয়ে মিমাংসা করে।
একই গ্রামের মুজামের ছেলে ইমান আলী জানায় ফজল কানা তার স্ত্রীকে বটি দিয়ে কোপ মারে আমরা ঠেকাতে গেলে সে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করলে আমরা তার কথার প্রতিবাদ করায় সে তার স্ত্রীকে নিয়ে আমার বিুদ্ধে কোর্টে মামলা করে। পরে গ্রামের কাউন্সিলরসহ মন্ডল মাতব্বাররা একজোট হয়ে ফজল কানাকে গ্রাম থেকে উঠিয়ে দেওয়া হয়। এর পরে ফজল কানা একই পৌর এলাকার আজিমপুর গ্রামে আশ্রয় নিয়ে বসবাস শুরু করে। এখানেও একই ভাবে দর্শনা পৌরসভার দুই পৌর কাউন্সিলরসহ ৫ জনের নামে কোর্টে মিথ্যা মামলা করে। এর মধ্যে সাবেক কাউন্সিলর ফয়েজ উদ্দিনের ছেলে কবির, শহর আলী মোল্লার ছেলে বর্তমান কাউন্সিলর রবিউল হক সুমন, মজিবর রহমানের ছেলে কুটি, ইদ্রিস আলী মিয়ার ছেলে খোকন ও বন্দর ব্যাপারীর ছেলে জলিলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যা কারন দেখিয়ে কোর্টে মামলা করে। পরে আজিমপুর থেকেও তাকে একই ভাবে বিতাড়িত করে গ্রামবাসী। পরে আজিমপুর থেকে বর্তমানে দর্শনা পৌরসভার পরানপুর গ্রামের গোরস্থান পাড়ায় বসবাস করছে।
এখানেও একই ভাবে কয়েকবছরের মধ্যে প্রায় ২২ জনের বিরুদ্ধে কোর্টে মামলা ঠুকেছে। এর মধ্যে পরানপুর গ্রামের সমশের আলীর ছেলে রবিউলের বিরুদ্ধে মিথ্যা নারী নির্যাতনের মামলা করে। পরে মান-সন্মান বাচাতে ১লক্ষ টাকায় মিমাংসা করে ফজল কানা। প্রতিবেশী মৃত কুদরত আলীর ছেলে ভ্যান চালক হাবিবুরের বিরুদ্ধে কোর্টে মিথ্যা মামলা করে তার কাছ থেকে ২১ হাজার টাকা নিয়ে আপোষ করে। এছাড়া মৃত খেদের আলীর ছেলে আমজাদ, আমজাদের ছেলে পিন্টু, সাহাদতের মেয়ে হাজেরা ও ছেলে ইছা, এনামুলের মেয়ে পিংকি, আনু মিয়ার ছেলে মুনতাজ, মৃত মজিদের ছেলে ধনু মিয়া, কপিল মন্ডলের ছেলে রেজাউল, রেজাউলের ছেলে আলো, বাদলের ছেলে ইস্্রাফিল, মৃত নুর বক্সের ছেলে মব্বত, ইলাহীর ছেলে ইছাহাক, আজির বক্সের ছেলে সাবেক কাউন্সিলর লৎফর, শামসুদ্দিনের ছেলে বর্তমান কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, নজরুলের ছেলে শান্ত, রহেদ আলীর ছেলে তোফা, জাবেদের ছেলে তমছের উদ্দিনের নামে বিভিন্ন মিথ্যা মামলা ঠুকেছে কোর্টে।
ভুক্তভোগীরা জানায়, ফজল কানা তার পারিবারিক কোলহের জন্য বিভিন্ন সময়ে গ্রামে সালিসের ডাক দেয় পরে তার মন মত সালিসের রায় না হলে ঐ সালিসে যারা উপস্থিত থাকে তাদের বিরুদ্ধে গোপনে কোর্টে মিথ্যা মামলা করে আসে। আবার তার পরিবারের কাউকে যদি মারধর করে প্রতিবেশী কেউ যদি ঠেকাতে যায় তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা ঠুকে দিয়ে টাকা হাতানোর পায়তারা করে। এছাড়া তার বড় ছেলে শরিফের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধ মূলক কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ করে গ্রামবাসী। এছাড়া অভিযোগ করে শরিফের কাছে একটি খেলনার পিস্তল ও একটি হ্যান্ডকাপ রয়েছে যা দিয়ে বিভিন্ন স্থানে প্রশাষনের নাম ভাঙ্গিয়ে ছিনতায় করে বলে জানায় এলাকাবাসী। এছাড়া শরিফের নির্যাতনের শিকারে তার স্ত্রী শরিফের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে তার আপন আত্মিয়দের বিরুদ্ধে নিজের ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রীকে বাদি করে আদালতে বিভিন্ন রকমের মিথ্যা মামলা করে হয়রানি ও প্রতারনার জাল বিস্তার করছে প্রতি নিয়ত।
দর্শনা প্রতিনিধি: