দর্শনা কেরু এ্যান্ড কোম্পানির যাত্রা শুরু হয় ১৯৩৮ সালের দিকে তারপর থেকে দিন কারখানা বাড়ছে ফলে নতুন করে যোগ হচ্ছে কর্মস্হল বাড়ছে কাজের পরিধি। বর্তমানে করোনো পরস্হিতি খুব যখন খারাপ অবস্হা ঠিক তখন কেরু এ্যান্ড কোম্পানি করোনো থেকে বাঁচতে তৈরি হলো হ্যান্ড স্যানিটাইজার।
এই হ্যান্ড স্যানিটাইজার জেলা প্রশাসক সহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি আমলে নেয়। তার আগে কৃষক কিভাবে লাভবান হবে সেই হিসাবে গুনগত মান রেখে তৈরি হলো জৈব সারখানা এ জৈব সার ব্যাবহার করে বর্তমান কৃষকরা ভালো রেজাল্ট পাচ্ছে আস্তে আস্তে ছড়িয়ে পড়ছে সারা বাংলাদেশে এই জৈব সারখানা তেও লাভের মুখ দেখছে বছর দুই ধরে। এ সবের পিছনে যার অবদান রয়েছে তার কথা না বল্লেই নাই তিনি শিক্ষা যোগ্যতা মেধা দিয়ে গোপন সহকারী থেকে আজ তিনি এডি এম। দীর্ঘদিন ধরে কেরু এ্যান্ড কোম্পানি কিভাবে লাভবান হবে কি করলে কেরু বাঁচবে তার চিন্তা চেতনা শুধু কেরু এ্যান্ড কোম্পানি কে নিয়ে।
বর্তমানে তিনি হাটি হাটি পা করে ভারপ্রাপ্ত প্রশাসন বিভাগের দায়িক্ত পালন করছেন শেখ মোঃ শাহাবুদ্দিন,। কেরু এ্যান্ড কোম্পানি ৭৬ কোটি টাকা লোকসান পুষিয়ে ২০ বছরের রেকর্ড ভেঙ্গে ৩০ কোটি ২৯ লাখ টাকা লাভ করেছে বলে জানিয়েছেন কেরু এ্যান্ড কোম্পানির সুযোগ্য ব্যাবস্হাপনা পরিচালক আবু সাঈদ। দর্শনায় কেরু এ্যান্ড কোম্পানীর চিনি কল প্রতিষ্ঠার পেছনের ঘটনা বেশ কৌতুহলোদ্দীপক। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে তার যাত্রা শুরু হয়েছিলো একটি ডিস্টিলারি বা চোলাই কারখানা হিসেবে। পরবর্তীতে তার সাথে চিনি উৎপাদন প্রক্রিয়া যুক্ত হয় যা ১৯৩৬-১৯৩৮ সালে আধুনিকীকৃত হয়। এই কারখানার সাথে ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকে উত্তর প্রদেশের কানপুর-এর উপকন্ঠে প্রতিষ্ঠিত ভারতের সর্বপ্রথম যান্ত্রিক ভাটিখানার সংযোগ খুঁজে পাওয়া যায়।
ওই ভাটিখানার প্রতিষ্ঠাতা জন ম্যাক্সওয়েল ব্যবসায়িক কারণে ১৮৪৭ সালে ২৭ বছর বয়সী আইরিশ মদ্য-বিশারদ রবার্ট রাসেল কেরু’কে তার প্রতিষ্ঠানের অংশীদার করেন। কালক্রমে প্রতিষ্ঠানটির পূর্ণস্বত্ত্বের অধিকারী হন মি. কেরু এবং ১৮৮৭ সালে তিনি এটি’কে লিমিটেড কোম্পানীতে রূপান্তর করে কলকাতায় কেরু অ্যান্ড কোম্পানী নামে নিবন্ধন করেন – যার লিখিত ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য ছিলো সাধারণ পণ্যের কারবার ও চোলাইজাত মদ সহ অন্যান্য পণ্য উৎপাদন। কোম্পানীর রেজিস্টার্ড অফিস ছিলো কলকাতার ৪ ফেয়ারলি প্লেসে বর্তমানে যার অবস্থান ভারতীয় পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে সদরদপ্তরের ঠিক বিপরীতে।
কোম্পানির কাগজে রবার্ট রাসেল কেরু’র ঠিকানা ছিলো ২০ নং ল্যাংকাস্টার গেট, লন্ডন। কোম্পানীর অন্যতম শেয়ারহোল্ডার ছিলেন ডেভিড ইজিকেল যিনি মূলতঃ চিনি ও মদ সহ বিবিধ পণ্যের কারবারি ছিলেন। কলকাতা ও চট্টগ্রামে তার এসব পণ্যের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা ছিলো। মদ্য বিষয়ক ইতিহাস-উপাত্তের ডেটাবেজ মোতাবেক রবার্ট রাসেল কেরু ১৮৮৭ সালে দর্শনায় পূর্ববঙ্গের প্রথম আধুনিক ভাটিখানা প্রতিষ্ঠা করেন। উল্লেখ্য প্রতিষ্ঠার মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে ১৮৯৩ সালে দক্ষিণ ইংল্যান্ডের উপকূলবর্তী টরকি’তে অসুস্থ অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর পর কোম্পানীর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন মি. নিকলসন।
পরবর্তীতে লায়ল মার্শাল অ্যান্ড কোম্পানী’কে কেরু অ্যান্ড কোম্পানির ম্যানেজিং এজেন্ট নিযুক্ত করা হয়। কলকাতা হাইকোর্টের ১৯৩৮ সালের একটি মামলার নথি হতে প্রতীয়মান হয় ১৯২৯ সালে কোম্পানিটি চোলাইজাত মদ ও চিনি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছিলো। ওই নথিতে আরো উল্লেখ আছে আধুনিক চিনি উৎপাদন প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৩৬ সালে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৩০ লক্ষ টাকা হতে ৪৪ লক্ষ টাকায় বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত হয়। এরই সূত্র ধরে ধারণা করা যায় দর্শনায় কেরু অ্যান্ড কোম্পানির আধুনিক চিনি উৎপাদন ইউনিটটি ১৯৩৬ হতে ১৯৩৮ সালের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয় যার প্রাচীন ক্ষুদ্র ইউনিটটি সম্ভবতঃ পূর্ব প্রতিষ্ঠিত চোলাই কারখানার সাথে যুক্ত হয়ে থাকবে। তবে চোলাইকর বা মদ উৎপাদনের ব্যপারে তৎকালীন সামাজিক ও ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি এবং সামাজিক বাধার বিষয়টি মাথায় রেখে লোকালয়ের যথেষ্ট বাইরে অপেক্ষাকৃত নির্জন অথচ নিরাপদ এবং সদ্য প্রতিষ্ঠিত রেল পরিবহন সুবিধা সম্বলিত স্থান হিসেবে দর্শনা ছিলো কেরু অ্যান্ড কোম্পানির চোলাই কারখানার জন্য একটি আদর্শ স্থল।
উল্লেখ্য, নিরাপত্তাজনিত কারণে এই চোলাই কারখানাটির চত্ত্বর তখন কারাগারসম প্রায় ২০ ফুট উঁচু দুর্ভেদ্য দেয়ালবেষ্টিত ছিলো। এখন আসা যাক চোলাইকারী কেরু অ্যান্ড কোম্পানী’র আধুনিক চিনি উৎপাদনে এগিয়ে আসার পেছনের ঘটনা। অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত বলতে গেলে বিশ্বে চিনির সবচেয়ে বড় উৎস ছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ বা পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ।
কিন্তু সেই চিনি উৎপাদনের পেছনে ছিলো বিপুল সংখ্যক ক্রীতদাসের শ্রম – যা নিয়ে বিশ্বব্যাপী, বিশেষতঃ বৃটেনে অসন্তোষ ঘনীভূত হয়। তখন এই সুযোগটি কাজে লাগায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী এবং তারা ভারতবর্ষ সহ দক্ষিন এশিয়ার কয়েকটি দেশে চিনি উৎপাদনের সূত্রপাত করে।
সে’সময় ক্রীতদাস প্রথা বিরোধিতায় ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান চিনি ত্যাগ করে ইস্ট ইন্ডিয়ান অর্থাৎ ভারতীয় চিনি ব্যবহারের আন্দোলন শুরু হয়। এ’বিষয়ে ১৮২৮ সালে লন্ডন হতে প্রকাশিত ইতিহাসখ্যাত একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল জবধংড়হং ভড়ৎ ঁংরহম ঊধংঃ ওহফরধ ঝঁমধৎ যথেষ্ট সাড়া ফেলে দেয় এবং বিশ্বে চিনির অন্যতম প্রধান উৎস হিসেবে ভারতবর্ষকে সামনে এগিয়ে নিয়ে আসে। “ভারতীয় চিনি ব্যবহারের স্বপক্ষে লন্ডন হতে ১৮২৮ সালে প্রকাশিত দলিল