মহামারী করোনার কারণে ২০২০ সালে ট্যুরিস্ট ভিসা বন্ধ হওয়ার পর আড়াই বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত দর্শনা আন্তর্জাতিক স্থলপথ দিয়ে বাংলাদেশী পাসপোর্ট যাত্রীরা ভারতে যাতায়াত করতে পারছেন না। এতে ১৪/১৫টি জেলা শহরের মানুষ যেমন ভোগান্তিতে পড়েছেন, তেমনি গত আড়াই বছরে এই বন্দর থেকে সরকার প্রায় ১৫ কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়েছে।
করোনার সংক্রমণ দেখা দেয়ায় ২০২০ সালের ২৬ মার্চ দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলবন্দরের মাধ্যমে ভারতীয় মালামাল আমদানি এবং স্থলপথে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ট্যুরিস্টসহ সকল ভিসার পাসপোর্ট যাত্রীদের যাতায়াত পুরোপুরি স্থগিত করা হয়। কিছুদিন পর স্বাস্থ্যবিধি মেনে দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলপথে ভারত থেকে মালামাল আমদানি শুরু হয়।
২০২১ সালের ১৭ মে থেকে ভারতে আটকাপড়া বাংলাদেশীদের দর্শনা আন্তর্জাতিক স্থলপথের মাধ্যমে দেশে ফেরত আনার একটি নির্দেশনা জারি করা হয়। একই বছরের সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে শুধুমাত্র মেডিক্যাল ও বিজনেস ভিসায় দর্শনা-গেদে হয়ে পাসপোর্ট যাত্রীরা যাতায়াত করতে পারবে বলে পুলিশ জানায়। সব শেষে চলতি বছরের ২৯ মে ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেস দর্শনা আন্তর্জাতিক রেল স্টেশনের মাধ্যমে চলাচল শুরু করলেও অদ্যবদি দর্শনা-গেদে স্থলপথে বাংলাদেশীদের জন্য ট্যুরিস্ট ভিসা চালু হয়নি।
কুষ্টিয়ার আড়ুয়া পাড়ার এক বয়স্ক মহিলা পাসপোর্ট যাত্রী দর্শনা চেকপোস্টে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের জানালেন, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, রাজশাহী, পাবনা, ফরিদপুর, মাগুরা, মেহেরপুর, রাজবাড়ী, চুয়াডাঙ্গাসহ এ অঞ্চলের ১৪/১৫টি জেলার মানুষ ট্যুরিস্ট ভিসায় দর্শনা-গেদে স্থলপথে যাতায়াত করতে না পেরে বাধ্য হয়ে বেনাপোল-হরিদাসপুর দিয়ে ভারতে যাচ্ছেন।
এতে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। যাতায়াত খরচ লাগছে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ। তিনি জানালেন, কুষ্টিয়া, মাগুরা, মেহেরপুরসহ আশপাশের জেলা থেকে দর্শনা চেকপোস্টে আসতে খরচ হয় মাত্র ৫০ থেকে ৮০ টাকা। আর দর্শনা থেকে ভারতের গেদে রেলস্টেশনে হেঁটেই যাওয়া যায়। সেই হিসেবে কুষ্টিয়া থেকে যশোরের ভাড়া একশ’ টাকা, যশোর থেকে বেনাপোলের ভাড়া ৫০ টাকা আর বেনাপোল থেকে ভারতের বনগাঁও রেলস্টেশনে পৌঁছাতে জনপ্রতি খরচ হয় দেড়শো টাকা।
দর্শনা ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা জানান, ২০২১ সালের ১৭ মে মেডিক্যাল বিজনেস ভিসা চালু হলেও গত ৫ ডিসেম্বরে তা বন্ধ হয়ে যায়। তবে ভারতীয়রা সব ভিসায় দর্শনা স্থলপথে যাতায়াত করছে। দর্শনা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব গোলাম ফারুক জানান, আন্তর্জাতিক নিয়মানুযায়ী দুই দেশের নাগরিকদের জন্য দুই রকম নিয়ম কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
দর্শনা সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েসনের সাধারণ সম্পাদক আতিয়ার রহমান হাবু জানান, দর্শনা-গেদে স্থলপথে ২০২০ সালের আগে প্রতিদিন এক হাজার থেকে ১২ শ’ পাসপোর্ট যাত্রী যাতায়াত করতেন। সেই হিসেবে প্রতিদিন চার-পাঁচ লাখ টাকা অর্থাৎ ৩০ মাসে প্রায় ১৫ কোটি টাকা রাজস্ব থেকে সরকার বঞ্চিত হয়েছে। তা ছাড়া দর্শনা থেকে কলকাতার দূরত্ব মাত্র ১০৭ কিলোমিটার।
দর্শনা কাস্টমস সুপার শুভাশীষ কুণ্ডু জানান, কোভিডের আগে এ পথে প্রতিদিন রমরমাভাবে পাসপোর্ট যাত্রীরা যাতায়াত করতেন। বাংলাদেশীদের জন্য এ পথে ট্যুরিস্ট ভিসা চালু হলে আগের মতোই পাসপোর্ট যাত্রীরা যাতায়াত করবেন।
চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের সাবেক জেলা পরিষদ প্রশাসক মাহফুজুর রহমান মঞ্জু জানান, শিগগিরই দর্শনা-গেদে স্থলপথে ট্যুরিস্ট ভিসা চালু হতে যাচ্ছে। সম্প্রতি লোকমোর্চা ও দর্শনা নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে।
চুুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক আমিনুল ইসলাম খান জানান, এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানানো হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।