অস্ত্রপচারের দীর্ঘ ৩৩ দিনের মাথায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার ভোরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন দর্শনা পৌর আ.ল মতিয়ার রহমান (৫৮)।
মৃত্যুর দু’দিন পর গতকাল বৃহস্পতিবার সকল প্রকার আইনি জটিলতা কাটিয়ে ভারতের দিল্লী থেকে বিমানযোগে দেশে আনা হয় মতিয়ার রহমানের লাশ।
আজ শুক্রবার সকাল ১০ টায় দর্শনা কলেজ মাঠে প্রথম ও নিজ গ্রাম ঈশ্বরচন্দ্রপুর গ্রামের সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে বেলা সাড়ে ১১ টায় দ্বিতীয় নামাজের জানাযা। জানাযা শেষে গ্রামের কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে দাফনকার্য সম্পন্ন করা হয়। দর্শনা পৌর এলাকার ঈশ্বরচন্দ্রপুর গ্রামের মৃত শামসুল ইসলাম ওরফে শামসুল চেয়ারম্যানের ছেলে দর্শনা ইসলাম বাজার গার্লস স্কুল পাড়ার বাসিন্দা ছিলেন মতিয়ার রহমান।
তিনি দর্শনার আ.লীগ রাজনীতি অঙ্গনে উজ্জল নক্ষত্র, সন্ত্রাসমুক্ত দর্শনার রুপকার, প্রতিবাদের কন্ঠ, অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপোষহীন দর্শনা পৌর সভার ৪ বারের নির্বাচিত মেয়র ও দর্শনা পৌর আ.লীগের সভাপতি মতিয়ার রহমান দীর্ঘদিন লিভার জনিত রোগে ভুগছিলেন।
স্বামীকে বাঁচাতে দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ নিজের লিভার দিতে ইচ্ছে পোষণ করেন স্ত্রী রোজী রহমান। যেমন কথা তেমন কাজ করেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন মেয়রের সহধর্মিনী।
সে লখ্যে গত ১০ নভেম্বর বিমানযোগে ভারতের দিল্লী যান মেয়র মতিয়ার রহমান ও স্ত্রী রোজী রহমান সহ পরিবারের কয়েকজন।
ওইদিনই ভারতের দিল্লীর এ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করা হয় মেয়র দম্পতিকে। এরপর হাসপাতালের চিকিৎসক নিরব গোয়েলের তত্ববধানে ২৪ নভেম্বর বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টার দিকে রোজী রহমানের শরীরে সফল অস্ত্র পাচারের মাধ্যমে লিভার নিয়ে ওইদিনই ভারতীয় সময় সন্ধা ৭ টার দিকে দর্শনা পৌর আ.লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র মতিয়ার রহমানের দেহে লিভার প্রতিস্থাপন করেন। প্রায় ১৭ ঘন্টাব্যাপী সফল অস্ত্রপাচার হলেও সুস্থ হয়ে না ওঠায় তাকে সহ স্ত্রীকে ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাখা হয়। তাদের মধ্যে মতিয়ার রহমানকে রাখা হয়েছিল নিবির পর্যবেক্ষণে। অস্ত্রপাচারের দীর্ঘ ৩৩ দিনের মাথায় মঙ্গলবার ভোর রাতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেয় দর্শনা পৌর আ.লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান (৫৮)।
দর্শনার প্রাণপুরুষ মতিয়ার রহমানের মৃত্যুর সংবাদ দর্শনায় পৌছালে নেমে আসে শোকের ছায়া। মতিয়ার রহমান ২ বোন ও ৩ পুত্র ভইয়ের মধ্যে সকলের বড় ছিলেন। দর্শনা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব গোলাম ফারুক আরিফ জানায়, আইনী জটিলতা কাটিয়ে তুলতে খানিকটা সময় লেগেছে। যে কারণে মৃত্যুর দু’দিন পর আজ বৃহস্পতিবার বিকাল সোয়া ৪ টার দিকে ভারতের দিল্লী বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ বিমানযোগে মতিয়ার রহমানের লাশ আনা হবে ঢাকায়। এরপর সন্ধা ৭টার দিকে বিমানবন্দর থেকে এ্যাম্বুলেন্সযোগে লাশ আনা হবে দর্শনা ইসলাম বাজারস্থ নিজ বাসভবনে।
আজ শুক্রবার সকাল ১০ টার দিকে দর্শনা কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত হবে প্রথম জানাযা ও বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তার নিজ গ্রাম ঈশ্বরচন্দ্রপুর স্কুল মাঠে দ্বিতীয় নামাজের জানাযা শেষে বাবা-মায়ের কবরের পাশেই দাফন করা হয় মতিয়ার রহমানের লাশ।
এদিকে দিল্লী থেকে বিমানযোগে বুধবার বাড়ি ফিরেছেন মতিয়ার রহমানের স্ত্রী রোজী রহমান ও ছোট মেয়ে মুন। মতিয়ার রহমানের মৃত্যুতে শোকপ্রস্তাব রয়েছে অব্যাহত।
এরই মধ্যে বুধবার দর্শনা রেল বাজারের ব্যাবসায়ীরা দিনভর সকল ধরনের ব্যাবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে শোক পালন করেছে।