ভেড়ার চেয়ে আকারে বড় ও মাংসের পরিমাণ বেশি। তবে দেখতে ভেড়ার মতই। স্থানীয়রা এর নাম দিয়েছেন ‘গাড়ল’ সারা দেশে ব্যাপকভাবে গাড়ল পালন ছড়িয়ে পড়ছে। ভেড়া পালনের জায়গা এখন গাড়লের দখলে। গাড়ল পালনে খরচ কম, লাভ বেশি হওয়ায় এবং এর চাহিদা বৃদ্ধির পাওয়ায় চুয়াডাঙ্গায় আগ্রহ বেড়েছে খামারীদের। গাড়ল দেখতে সাধারণত ভেড়ার মতোই লাগে কিন্তু ভেড়া নয়, আকারেও ভেড়ার চেয়ে কিছুটা বড়।
এরা লোনা পানি এলাকায় সহজে মানিয়ে নিতে পারে। এগুলো আসলে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নাগপুর অঞ্চলের ছোটনাগপুরি জাতের ভেড়ার সঙ্গে আমাদের দেশি ভেড়ার ক্রস ব্রিড। এই ক্রস ব্রিডের নামকরণ করা হয় ‘গাড়ল’ (গাড়ল এবং ভেড়ার সমন্বয়ে জন্ম নেওয়াকে ক্রস ব্রিড বলা হয়েছে)। এরা সাধারণত ৭-৮ মাস পর পর একটি করে বাচ্চা দিয়ে থাকে।
আর এই গাড়ল পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন দামুড়হুদা উপজেলার নাটুদাহ ইউনিয়নের চারুলিয়া গ্রামের মৃত নুর ইসলামের ছেলে শান্তিরুল ইসলাম। তিনি গত ২০০১ সালে কলকাতা থেকে ১০টি গাড়লের বাচ্ছা এনে খামার শুরু করেছিলো। দুই বছরের মাথায় লাভের মুখ দেখতে শুরু করেন তিনি। এখন তাঁর খামারে গাড়ল আছে ২৭৫টি। বর্তমানে মাঠে ছেড়ে দিয়েই খাদ্যের চাহিদা পুরন হয়। বাড়তি কোন খাদ্যোর প্রয়োজন হয় না। বছরে দুই বার ১ থেকে ২টি করে বাচ্ছা দিয়ে থাকে গাড়ল। মাচার উপর গাড়ল থাকতে পছন্দ করে। এতে করে স্যাতস্যাতে পরিবেশ পছন্দ করে না। মাচার উপর থাকায় গাড়লের বৃষ্ঠা নীচে পড়ে যায়। নিচে পড়া বৃষ্ঠা জৈব সার হিসাবে বিক্রি করা যায়।
ভেড়ার একটি উন্নত প্রজাতি গাড়ল। এগুলো দেখতে প্রায় ভেড়ার মতো। দেশি ভেড়ার চেয়ে এটি আকারে বড়, মাংসও বেশি হয়। গাড়লের লেজ লম্বা হয়। মাংসের চাহিদা মেটাতে দেশেই এখন চুয়াডাঙ্গা জেলায় বেশ কয়েকটি বাণিজ্যিকভাবে গড়ে উঠেছে গাড়লের খামার। গাড়লের খামারে কর্মসংস্থান হয়েছে অনেকের। অনেকে সফলতাও পেয়েছে আবার গাড়ল পালন করে, ভাগ্য বদল করে স্বাবলম্বী হয়েছেন যেমন দামুড়হুদার চারুলিয়ার শান্তিরুল ইসলাম।
গাড়ল পালনকারী শান্তিরুল ইসলাম জানান, ২০০১ সালে কলকাতা থেকে মাত্র ১০টি গাড়লের বাচ্চা কিনে পালন শুরু করি। এর পর থেকে আর পেছনের দিকে ফিরে তাকাতে হয়নি। এক সময় সংসারে অভাব-অনটন লেগেই থাকতো। এখন বার্ষিক ১০ থেকে ১২লাখ টাকা আয় হচ্ছে। তিন জন বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু আজো পর্যন্ত উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে কোনো প্রকার সহযোগিতা পায়নি, তবে সরকারি সহযোগীতা ও সহজ শর্তে ঋন পেলে আরো বড় করে গড়ে তুলবো খামার, আমার এক হাজার পিচ গড়লের খামার তৈরি করার ইচ্ছা। সরকারি কোনো সাহায্য পেলে গড়ে উঠবে আরও অনেক গাড়লের খামার এবং মাংসের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখবে বলেও মনে করেন খামারী শান্তিরুল ইসলাম।
শান্তিরুল ইসলাম আরও জানান, গাড়লের মাংস গন্ধ মুক্ত সুস্বাদু। পুষ্টি গুনেও ভাল। দেশের দক্ষিনবঙ্গে এ মাংসের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। প্রতি কেজি মাংস ১হাজার থেকে ১১শ টাকা দরে বিক্রি হয়। আমি তিন রকম গাড়ল প্রজাতির ভেড়া পালন করছি। তুলনামূলক গৃহপালিত অন্য প্রাণির চেয়ে গাড়লের রোগ বালাই কম হয় এবং দ্রুত মাংস বৃদ্ধি হয়। গাড়লের মাংসে চর্বি কম থাকে।
দামুড়হুদা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তার বলেন, দামুড়হুদা উপজেলায় বেশ কয়েকটি গাড়ল খামার গড়ে উঠেছে। অনেকেই স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে এই গাড়ল পালনে আগ্রহী হচ্ছে। গাড়ল পালনে তেমন বাড়তি খরচ হয় না। গাড়ল তৃন ভুজি প্রাণী। সবুজ ঘাস খেতে পছন্দ করে। চরন ভুমি থাকলে গাড়লের জন্য বাড়তি খাবারের প্রয়োজন হয় না। তেমন রোগবালাই হয় না।