চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার জয়রামপুর রেলস্টেশন এর নকশি কাঁথা মেইল ট্রেনের যাত্রা বিরতি পুনরায় বহাল রাখার জন্য মানববন্ধন করেন জয়রামপুর গ্রামসহ আশেপাশের গ্রামের সাধারণ মানুষ। প্রতিনিধিত্ব করেছেন জয়রামপুর মানব কল্যাণ এর কেন্দ্রীয় সভাপতি মিলন মাহমুদ ও সেনা সদস্য লাজিব সিদ্দিক। আজ শুক্রবার বিকাল সাড়ে চারটায় জয়রামপুর স্টেশন প্ল্যাটফর্মে এই মানববন্ধন করা হয়।
বাংলাদেশের প্রথম রেল যোগাযোগ স্থাপন হয় দর্শনা থেকে জগতি। ১৮৬২ সাল থেকে দর্শনা থেকে জগতি রেল যোগাযোগের প্রথম হলেও এলাকার মানুষের দাবি জয়রামপুর প্রথম স্টেশন। চুয়াডাঙ্গা জেলার ঐতিহ্যবাহী কৃষি পণ্যবাহী প্রথম স্টেশন নামে খ্যাত জয়রামপুর রেলস্টেশন। এই ঐতিহ্যবাহী রেল স্টেশনে আন্তঃনগর ট্রেন যাত্রা বিরতি না থাকলেও মেইল ট্রেনগুলো যাত্রা বিরতি করত। জয়রামপুর থেকে কৃষি পণ্য ঢাকা খুলনা রাজশাহী বিভিন্ন এলাকায় বিক্রয়ের জন্য নিয়ে যাওয়ার প্রধান বাহন হিসেবে ব্যবহৃত হতো নকশি কাঁথা মেইল ট্রেন।
সেই নির্ভরযোগ্য একমাত্র মেইল ট্রেন আজ জয়রামপুর স্টেশনে যাত্রা বিরতি থেকে বিচ্ছিন্ন হতে যাচ্ছে। জয়রামপুর গ্রামের ঐতিহ্য বয়ে নিয়ে আসার মূল তালিকাসক্তি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে জয়রামপুর রেলস্টেশন।বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বড় প্রকল্পের একটি হলো পদ্মা সেতু প্রকল্প। পদ্মা সেতু রেল যোগাযোগের মধ্য দিয়ে ঢাকা খুলনা যোগাযোগ এর নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।সেই ধারাবাহিকতায় খুলনা ,দর্শনা, চুয়াডাঙ্গা, আলমডাঙ্গা, মুন্সিগঞ্জ, পোড়াদহ, কুষ্টিয়া, হয়ে ফরিদপুর ভাঙ্গা দিয়ে নকশী কাঁথা মেইল ট্রেনের নতুন রোডম্যাপ তৈরি হয়েছে।নতুন রোডম্যাপে জয়রামপুর স্টেশনে নকশি কাঁথা মেইল ট্রেন ২৫ ও নকশি কাঁথা মেইল ট্রেন ২৬এর যাত্রা বিরতি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।জয়রামপুর স্টেশন চুয়াডাঙ্গা জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী রেলস্টেশন। দামুড়হুদা থানার একমাত্র স্টেশন। সেই ঐতিহ্যবাহী স্টেশন অন্ধকারে নেমে যাচ্ছে। একটি রেল স্টেশনের ঐতিহ্য ও আলো ফিরিয়ে আনতে এলাকাবাসী মানববন্ধনের আয়োজন করে।
এ সময় জয়রামপুর স্টেশন প্রাঙ্গন আমাদের দাবি আমাদের দাবি স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে জয়রামপুর স্টেশন প্ল্যাটফর্ম। জয়রামপুর স্টেশন থেকে কৃষি পণ্য ও যাত্রী উঠানামা করে জয়রামপুর উক্ত চাঁদপুর দিননাথপুর নেহালপুর ডুগডুগি তারিনীপুর লোকনাথপুর দামুড়হুদা সহ আরো অনেক গ্রামের মানুষ। এ বিষয়ে স্থানীয়দের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন জয়রামপুর স্টেশন কৃষি নির্ভর স্টেশন। জয়রামপুর এলাকাটা একটি কৃষি অধ্যুষিত এলাকা। এখানে প্রচুর পরিমাণ সবজি চাষ হয়। নকশী কাঁথা মেইল ট্রেনের মধ্য দিয়ে জয়রামপুরসহ আশেপাশে গ্রামের সবজি কুষ্টিয়া কুমারখালী রাজবাড়ী খুলনা দৌলতপুর যশোর ইত্যাদি স্থানে বিক্রয়ের জন্য নেয়া হয়।
জয়রামপুর সহ আশেপাশের গ্রামের মানুষের প্রাণের দাবি অবিলম্বে নকশি কাঁথা ২৫ নকশি কাঁথা ২৬ মেইল ট্রেনের যাত্রা বিরতি পুনর বহাল রাখতে হবে। নকশিকাঁথা আপ-ডাউন স্টপেজ চালু করতে হবে, ট্রেন আমাদের পূর্ব-পুরুষদের দীর্ঘ ইতিহাস।ট্রেন আমাদের স্পন্ধন, আমাদের কবিতা, আমাদের গল্প। পড়া-লেখা,রুটি-রুজি,অফিস-আদালত,কৃষি,বানিজ্য আমাদের সব কিছু। ব্রিটিশ-ভারত বাংলার সর্বপ্রথম প্রবেশের অংশ জয়রামপুর স্টেশন।
আমরা আমাদের বুকের উপর ট্রেন পরিচালনা করেছি।আমাদের ভূমি দিয়ে ট্রেন গড়েছি।
আপনারা আমাদেরকে মারবেননা।আমরা আমাদের ক্ষুদা-দরিদ্র আর্ত পেটের উপরদিয়ে ট্রেন চলতে দিতে পারিনা।
মানববন্ধন কারিরা আরো বলেন, স্টেশনের সকল কার্যক্রম চালু করতে হবে, আউট সিগন্যাল কেবিন চালু করতে হবে, রেলকোয়াটার পুরায় চালু করতে হবে।
নব্বইয়ের দশকের সকল ট্রেন ও মালবাহি সেবা চালু করতে হবে।জয়রামপুর স্টেশনে সকল লোকালট্রেন স্টপেজ বলবৎ রেখে যেকোন একটি ঢাকাগামী একটি রাজশাহী ও একটি সান্তাহার গামী আন্তনগর ট্রেন স্টপিজ দিতে হবে। ট্রেন রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তার জন্য রেলপুলিশ ফাড়ি স্হাপন করতে হবে।
এ বিষয়ে স্থানীয় ব্যক্তি হাউলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ খোকনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন দামুড়হুদা থানার একমাত্র ঐতিহ্যবাহী রেলস্টেশন জয়রামপুর জয়রামপুরসহ আশেপাশের গ্রামে খেটে খাওয়া দিনমজুর মানুষের বসবাস তাদের চলাচলের একমাত্র বহন হলো এই লোকাল ট্রেন। এই লোকাল ট্রেনের মাধ্যমে তাদের জীবিকা নির্ভর করে। অসুস্থ মানুষ এখান থেকে চিকিৎসা নিতে যাই যাতে তাদের যাতায়াত খরচটা কম হয়। কৃষি পণ্য বহন করে খরচ কমানোর জন্য। এই ট্রেনটি যদি এখানে না থামে তাহলে তাদের বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যাবে । এজন্য রেল মন্ত্রণালয় এর কাছে আমাদের দাবি অবিলম্বে জয়রামপুর রেলস্টেশনের লোকবল নিয়োগ এর মাধ্যমে আবারও এই স্টেশনটাকে পুনরুজ্জীবিত করতে হবে।