দামুড়হুদা উপজেলার ডুগডুগী বাজারে রাতে অবস্থানকৃত ট্রাক থেকে তিন বস্তা গম চুরি হয়ে গেলে তা সাংবাদিকদের তৎপরতায় উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল রবিবার সকাল ৭টার দিকে ডুগডুগী গ্রামের হাট পাড়া থেকে চুরিকৃত গম উদ্ধার করা হয়।
অভিযুক্তরা হলো, ডুগডুগী বাজারের নাইটগার্ড নিজাম ও তৈয়ব আলী, অপরদিকে গম চোর ডুগডুগী হাটপাড়ার নজু’র ছেলে হাসান (২৬) ও তার সহযোগীরা।
স্থানীয় ও সরজমিনে জানাগেছে, শনিবার যশোর নওয়াপাড়া থেকে সাড়ে ২৩ টন গম লোড করে চুয়াডাঙ্গা হাতিকাটার উদ্দেশ্যে রওনা হয় ডুগডুগী গ্রামের মৃত ওহাব আলীর ছেলে ট্রাক ড্রাইভার হামিদ আলী। ট্রাকে থাকা প্রতিটি গমের বস্তা ছিলো প্রায় ৭০ কেজি ওজনের। রাত ১২টার দিকে ডুগডুগী বাজারে পৌঁছে যাত্রা বিরতি করে এবং নাইট গার্ডদের হেফাজতে গম ভর্তি ট্রাকটি বাজারে রেখে বাড়ি চলে যাই ড্রাইভার। সকাল ৬টার দিকে হামিদ ডুগডুগী বাজারে ট্রাকের কাছে এসে দেখে ট্রাকের কাছে ছড়ানো ছিটানো ভাবে গম পরে আছে। ভালো করে গাড়ি চেক করে দেখাযাই ট্রাকের হুডের কাছ থেকে দড়ি খুলে তিন বস্তা গম চুরি করে নিয়ে গেছে চোরের দল। মাথায় যেনো বাজ পরে ট্রাক ড্রাইভারের। হতভম্ব হয়ে যাই তিনি। কি করবে কিছু বুঝতে পারেনা। গরীব ট্রাক ড্রাইভার এদিক ওদিকে খুঁজা খুঁজি করতে থাকে। অনেক খুঁজাখুজি করেও গম পাওয়া যায় না।
এসময় খবর পেয়ে সাংবাদিকরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং সাথে সাথে ডুগডুগী বাজার কমিটিকে জানানো হয়। ডাকা হয় নাইটগার্ডদের, কিন্তু নাইটগার্ডরা বলে আমরা কিছু জানিনা এবং দেখিনি। তখন সাংবাদিকরা পরে থাকা গম অনুসরণ করতে করতে ডুগডুগী হাট পাড়ায় পৌঁছে যায়। সেখানে সর্বশেষ গম পরে থাকতে দেখে স্থানীয় গণ্যমাণ্য ব্যক্তি বর্গ ও বাজার কমিটির লোকজন দিয়ে কয়েকটি বাড়ি চেক করলে হাসানের জিম্মা থেকে ট্রাক থেকে চুরি যাওয়া তিন বস্তা গম উদ্ধার করা হয়। তখন উপস্থিত লোকজনের সামনে নাইটগার্ডদের জিজ্ঞাসা বাদের এক পর্যায়ে তারা চোরের নাম স্বীকার করে বলে ডুগডুগী গ্রামের হাটপাড়ার নজুর ছেলে হাসান এই জঘন্যতম চুরির কাজ করেছে। তার সঙ্গে আর কারা ছিল আমরা জানি না। নাইটগার্ডরা সব কিছু জেনেও মুখে কুলুপ এটে ছিলো। উদ্ধারকৃত গম ট্রাক ড্রাইভার হামিদ কে বুঝিয়ে দিলে তার জান ধরে আসে এবং সাথে সাথে গমগুলো ট্রাকে তুলে গম আনলোড করার জন্য চুয়াডাঙ্গা হাতিকাটায় চলে যাই। মূলত নাইটগার্ডদের সহযোগিতায় হাসান সহ ওর সঙ্গীদের দিয়ে এই চুরির ঘটনা ঘটানো হয়।
ট্রাক ড্রাইভার হামিদ বলেন, মাঝে মধ্যে আমি ডুগডুগী বাজারে লোডকৃত গাড়ি নাইটগার্ডদের হেফাজতে রেখে বাড়ি যাই এবং সকালে আবার গাড়ি নিয়ে আমি চলে যায়। এর জন্য নাইটগার্ডদের আমি বকসিস দিয়, যাতে আমার গাড়িটা দেখেশুনে রাখে। কিন্তু গতকাল শনিবার রাত ১২টার দিকে আমি ডুগডুগী বাজারে এসে গাড়ি থুয়ে নাইটগার্ড নিজাম কে বলি ভাই গাড়িটা দেখে রাখবেন, গাড়িতে গম লোড আছে। নিজাম বকসিস (টাকা) চাই, তখন আমি বলি এখনতো আমার কাছে টাকা নেই, ভোরে যাওয়ার সময় টাকা দিয়ে যাবো, তখন নিজাম অসন্তুষ্টি জানিয়ে বলে টাকা দিলিনাতো, সকালে বুঝবি এর জ্বালা। তখন আমি বিষয়টি বুঝতে পারিনি, সকালে গাড়ির কাছে এসে বুঝতে পারি এটা নাইটগার্ডদের কাজ। হামিদ আরও বলেন, ঐ হাসান তো জানতোনা যে গাড়িতে গম লোড আছে। নাইটগার্ড নিজাম’ই হাসানকে হায়ার করে গাড়ি থেকে গম চুরি করেছে। ওরা মনে করেছিলো আমি বুঝতে পারবোনা। কিন্তু মহান আল্লাহর রহমতে আমি টের পেয়ে যায়। এই ধরনের চোরচুট্টা দিয়ে নাইটগার্ডের কাজ করালে বাজারের কোন দোকানই নিরাপদ নয়। থানায় কোন অভিযোগ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে হামিদ বলেন, আমি ট্রাকের ড্রাইভার, কখন কোথায় থাকি ঠিকনেই। যেহেতু ডুগডুগী বাজারের নাইটগার্ডরা এ চুরির ঘটনা ঘটিয়েছে, তাই ডুগডুগী বাজার কমিটিকে বিচার দিয়েছি। তারা যদি সঠিক বিচার না করে তাহলে আমি আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। এমন ঘটনায় ডুগডুগী বাজারে ব্যাবসায়ীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যদি এর সুষ্ঠু বিচার না হয় তাহলে অদূর ভবিষ্যৎ এ বাজারের দোকানপাট চুরিদারি হতে পারে। সেই সঙ্গে বাজারের নাইটগার্ড ও চোরদ্বয় কেউই ভালো লোক নয়, এর আগেও তাদের নামে চুরির অভিযোগ রয়েছে। কিন্ত কোন বিচারের সম্মুখিন হয়নি। যার কারনে এমন ঘটনা থেকে রেহাই পেলে আরও বড় ধরনের চুরির ঘটনা ঘটতে পারে।
বাজার কমিটি এতবড় ঘটনা ঘটার পরেও কোন পদক্ষেপ নেয়নি। অদৃশ্য কারনে ক্ষুড়া যুক্তি দেখিয়ে ঘটনার ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে বাজার কমিটি। তারা ভুলেই গেছে চোরের ব্যাবস্থা গ্রহণ না করলে তারা নিজেরাই চোরের থেলেন্দার হয়ে যায়। তাই এলাকাবাসী ও বাজার ব্যাবসায়ীরা সরজমিনে তদন্ত পূর্বক প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এবিষয়ে ডুগডুগী বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্রী মদন ঘোষ বলেন, সকালে বাজারে এসে গম চুরির ঘটনা জানতে পারি। আমরা বাজারের সবাইমিলে নাইটগার্ড নিজাম কে চাপ প্রয়োগ করলে সে বলে আমি হাসান কে গম চুরি করে নিয়ে যেতে দেখেছি। সে মোতাবেক হাসানের জিম্মা থেকে গম উদ্ধার করে ট্রাক ড্রাইভার হামিদ কে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। গম উদ্ধার হওয়ার কারনে তাৎক্ষণিক ভাবে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি, তবে আমাদের মিটিংয়ে এ বিষয়ে সকলের পরামর্শ মোতাবেক ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।