করোনায় প্রণোদনা এবং একই সঙ্গে পর্যাপ্ত বৃষ্টির কারণে দামুড়হুদায় এবার পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু পাটের বাজার ভালো পাবেন কিনা এ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা।
একে একে পাটকল বন্ধ হওয়া এবং পাট ব্যবসায়ীদের বিপুল অর্থ বিজেএমসির কাছে পাওনা থাকায় এ শঙ্কা দেখা দিয়েছে। দামুড়হুদায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬৭০ হেক্টর বেশি জমিতে পাটের চাষ হয়েছে। অন্য বছরের চেয়ে ফলনও বেশি হবে বলে আশা করছেন কৃষকেরা।
তবে সম্প্রতি পাটকল বন্ধের ঘোষণায় দুশ্চিন্তার ছাপ দেখা দিয়েছে চাষিদের কপালে। পাটের দাম, নিজের স্বপ্ন, বিনিয়োগের টাকা ফেতর পাওয়াসহ নানা দ্বিধায় হতাশায় ভুগছেন তারা। কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত বছর পানির অভাবে পাট পচানোতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। তারপরেও বিগত কয়েক বছর পাটের ফলন ও দাম ভালো পেয়েছেন কৃষকেরা।
তাই লাভের মুখ দেখতে এ বছর দামুড়হুদা উপজেলায় আবাদের পরিমাণও বেড়েছে। এ ছাড়াও চলতি মৌসুমে আশানুরূপ বৃষ্টি হওয়ায় পাট কাটা ও পাট ডোবানো নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যার কথা শোনা যায়নি। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বাজারে পাট বিক্রি শুরু হবে। তবে এবার দাম পাওয়া নিয়ে কৃষকেরা রয়েছেন সংশয়ে।
উপজেলার পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের মদনা গ্রামে নুর বক্সের ছেলে কাউছার আলী, আবুল হোসেনের ছেলে মিজানুর রহমান, হাজী আব্দুল ওহাবের ছেলে আরিফুল ইসলাম ও পারকৃষ্ণপুর গ্রামের মকছেদ আলীর ছেলে জামাত আলী জানান, পাটচাষে ব্যাপক খরচ।
এক বিঘা পাটচাষ করতে প্রথমে চারটি চাষ দিতে হয়। এতে খরচ হয় ১ হাজার ২০০ টাকা, পাটের বীজ কিনতে ২০০ টাকা, দুইটা সেচ দিতে এক হাজার টাকা, তিনবার সার দিতে খরচ হয় ১ হাজার ৮০০ টাকা, বিঘাপ্রতি নিড়ানি দিতে ১০ জন দিনমজুর লাগে। তার খরচ ২৫০ টাকা দরে ২ হাজার ৫০০ টাকা, পাট কাটা শ্রমিক লাগে বিঘাপ্রতি চারজন, যার দাম ১ হাজার টাকা, পাটগুলো আঁটি বাঁধতে দুইজন শ্রমিকের ৫০০ টাকা, পাটের আঁটি বহন করতে শ্রমিক লাগে তিনজন, যার মূল্য ৭৫০ টাকা, বহন খরচ এক হাজার টাকা, পাট জাগ দিতে চারজন শ্রমিকের মূল্য এক হাজার টাকা, কাঁচা লেবার ছয়জন, যার মূল্য ১ হাজার ৫০০ টাকা ও পাট শুকাতে চারজন শ্রমিক লাগে, যার মূল্য এক হাজার টাকা এবং পাট শুকানোর পর আড়তে নেয়া খরচ ১০০ টাকা। এক বিঘা পাট চাষে পর্যায়ক্রমে মোট খরচ হয় প্রায় ১৩ হাজার ৫৫০ টাকা। এক বিঘা জমিতে পাট উৎপাদন হয় ৮-৯ মণ।
দর্শনা পুরনো বাজারের বড় আড়ৎদার আব্দুর রহমান বলেন, ‘বর্তমান বাজারে ১৫-১৬ শত টাকা মণ চলছে। তবে যেভাবে পাটকলগুলো বন্ধ হচ্ছে তাতে করে আমারাও পাট বেচাকেনা নিয়ে চিন্তায় আছি।
বর্তমান মূল্যে অনুযায়ী বিঘাপ্রতি গড় উৎপাদন ৯ মণ এবং ১ হাজার ৬০০ টাকা হারে দাম ধরা হলে এক বিঘা পাট বিক্রি হয় ১৪ হাজার ৪০০ টাকা। একজন কৃষক মাথার ঘাম পায়ে ফেলে বিঘাপ্রতি পাট চাষে খরচ-খরচা বাদ দিয়ে লাভ হচ্ছে ৮৫০ টাকা। যদি পাটের মূল্য বা উৎপাদন কম হয় তাহলে তো লোকসানের খাতায়। এরপরও এ দেশের কৃষকেরা তাদের মাঠে অর্থকারী ফসলের চাষ করে মনের সান্ত্বনা নিয়ে বেঁচে আছেন।
দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান জানান, চলতি মৌসুমে ৬ হাজার ২৮৫ হেক্টর জমিতে পাটচাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও সেখানে চাষ হয়েছে ৬ হাজার ৯৫৫ হেক্টর। ফলে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ৬৭০ হেক্টর জমিতে বেশি পাটচাষ হয়েছে।