“বিদায় বান্ধবী বিদায়, আমিও ভুলে যাব, তুমিও ভুলে যেও আমায়” ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে দামুড়হুদা উপজেলার জয়রামপুর কাঁঠালতলা দাস পাড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের এক যুবক গলায় গামছা পেচিয়ে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৬টার সময় ময়নাতদন্ত শেষে মৃতের লাশের সৎকার করা হয়। মৃত্যুবরণ কারী হলো জয়রামপুর কাঁঠালতলা দাস পাড়ার শ্রী রতন দাসের ছেলে শ্রী শুভ দাস (২০)।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে সোমবার দিবাগত রাতে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে শুভ তার নিজ ঘরে শুয়েছিল। রাত ৩টার দিকে নিজ বসতবাড়ির উঠানে আম গাছের ডালে গলায় গামছা পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে। পরিবারের লোকজন টের পেয়ে তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃতের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এলাকা সুত্রে জানাগেছে দামুড়হুদা উপজেলার হাউলী ইউনিয়নের জয়রামপুর কাঁঠালতলা দাস পাড়ার শ্রী রতন দাসের ছেলে শ্রী শুভ দাস (২০) ও জয়রামপুর কাঁঠালতলা বাসস্ট্যান্ড পাড়ার ভ্যান চালক কাছেদের মেয়ে কামনা (২১) এদের মধ্যে বেশ কয়েক বছর ধরে চলে আসছে প্রেমের সম্পর্ক । এক পর্যায়ে তাদের দুজনের কিছু অন্তরঙ্গ ছবি এলাকায় ভাইরাল হয়ে যায়। এবিষয় নিয়ে এলাকার মন্ডল মাতবরদের বিচারে তাদের পরিবারকে ডাকা হলে কেউ হাজির হয়নি, তখন এক পর্যায়ে মাতব্বরা ঐ পরিবারটিকে এক ঘোরে করে রাখলে উল্টো সেই মন্ডল মাতব্বরদের নামে দামুড়হুদা মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন ভ্যান চালক কাছেদ ও তার পরিবার।
অবশেষে ঐ দুই পরিবার ও এলাকার মন্ডল মাতব্বরদের দামুড়হুদা মডেল থানায় ডেকে মিমাংসা করে দেওয়া হয়। ছেলে হিন্দু ধর্ম, মেয়ে মুসলিম বলে দামুড়হুদা মডেল থানা থেকে বিচার করে দিয়ে ছিল উভয় পক্ষ কেউ কারো সাথে কোনো প্রকার যোগাযোগ রাখতে পারবে না। সে কারণে শুভ দাসের পিতা রতন দাস পাবনা চাটমোহর শুভ দাসের নানার বাড়িতে ছেলেকে পাঠিয়ে দেয়, সেখানে শুভ দাসের নানার বাড়ির লোকজনের সাথেই শুভ দাস বসবাস করতো। সেখানে এক পর্যায়ে শুভর সাথে তার মামাতো বোনের বিয়ে ঠিক হয়। বিষয়টি কাছেদ আলীর মেয়ে কামনা খাতুন জানতে পেরে পাবনা চাটমোহরে শুভর কাছে চলে যায়। এতে শুভর মামাতো বোনের সাথে বিয়ে ভেঙে যায়। গত রোববার শুভদাস জয়রামপুর নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন।
এবিষয়ে শুভ তার ব্যক্তিগত ফেসবুক থেকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন, ” বিদায় বান্ধবী বিদায়, আমিও ভুলে যাব, তুমিও ভুলে যেও আমায়”। অপর এক স্ট্যাটাসে লিখেছেন সে আমার জীবনটা নষ্ট করে দিল, আমার শুধু ব্যবহারই করল সে, তবুও চাই সে সুখে থাক ভাল থাক।
এবিষয়ে মৃত শুভ দাসের মামি বলেন, আমাদের এখানে বোরকা পরে এসেছিল কামনাকে আমি দেখেছি ৪/৫ দিন দিন আমাদের ওখানে ছিল। এলাকাবাসী ধারণা করছে কামনা সেখানে গিয়ে বিয়ে ভেঙ্গে দেওয়ার কারণে কামনার উপর অভিমান করে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় জনক ব্যক্তি বলেন কামনার সাথে শুভদাসের এখনো সম্পর্ক ছিল। কামনার মোবাইল এবং শুভদাসের মোবাইলের কল লিস্ট বের করলে সব ধরা পড়ে যাবে। এ বিষয়ে মৃত শুভর পরিবারের সাথে কথা বললে সবাই কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং বলেন এ বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে যে আমরা কারো নামে কোন অভিযোগ করব কিনা। ঘটনার পর থেকে কাছেদ তার পরিবার নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে, এবং তার মেয়েকে বাঁচাতে বিভিন্ন মহলে দৌড় ঝাঁপ শুরু করেছে।
এবিষয়ে কামনার পিতা কাছেদ আলীর কাছে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এবিষয়ে দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি সাইফুল ইসলাম বলেন লাশ ময়না তদন্তের পরে মৃতের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে এখনো পর্যন্ত কারো কাছ থেকে কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় এ বিষয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে ।