দামুড়হুদা উপজেলার মোক্তারপুর গ্রামে বাল্য বিবাহ দিতে গিয়ে গ্যাড়াকলে পড়েছে মেয়ের বাবা মন্টু। বাল্য বিবাহ পন্ড করে মেয়ের বাবাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
ভ্র্যাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিট্টেট সানজিদা বেগম।এ সময় উপস্থিত ছিলেন দামুড়হুদা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হযরত আলি। গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ৮ টার দিকে মোক্তারপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
জানাগেছে,দামুড়হুদা উপজেলার মোক্তারপুর গ্রামের মন্টুর ৮ ম শ্রেণীর মেয়েকে হাতিভাঙ্গা গ্রামের মহিশের ছেলে সিহাবের সাথে বাল্য বিবাহর প্রস্তুতি চলছিল।এমন খবর পেয়ে দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সানজিদা বেগম ঘটনাস্থলে যান।
নির্বাহী অফিসারের আসার খবর পেয়ে ছেলে পক্ষর লোকজন পালিয়ে যায়।পরে বাল্যবিবাহর ঘটনা সত্যতা মিললে মোক্তারপুর গ্রামের মেয়ের বাবা মন্টুকে দোষী সাব্যস্ত করে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭ এর ৮ ধারায় ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমান আদালত।
সামাজিক নিরাপত্তাহীনতার কারনে অনেক মা-বাবা তাদের অল্প বয়সী মেয়েদের বিয়ে দেন তারাতারি। কারন এসব অভিভাবকদের চোখে ভাঁসে তাদের মেয়ে শিশুরা নিজের পরিবারে, স্কুলে, চলার পথে, বাজারে সর্বত্রই শারীরিক ও যৌন হয়রানীর শিকার হতে পারে হরহামেশাই। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো যখন এসব শিশু কন্যাদের বিয়ে দেওয়া হয় তখন শিশু মেয়েটির নির্যাতন না কমে বরং অনেক ক্ষেত্রেই বাড়ে। এসব শিশু কন্যাদের বিয়ের পরে প্রজনন শিক্ষার অভাব, সিন্ধান্ত গ্রহনের অক্ষমতা, অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব তাকে আরও ভয়ংকর পরিণতির দিকে ঠেলে দেয়। ফলে পারিবারিক নির্যাতন, যৌন নির্যাতন, প্রতিনিয়ত ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধি, যৌতুক দাবি, স্বামীর নিখোঁজ হয়ে যাওয়া, এমন কি তালাকের মত ঘটনা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারনে গ্রামাঞ্চলে ও শহরের বস্তিগুলোতে স্বামী পরিত্যাক্ত মায়ের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে একই হারে।
অথচ বয়ঃসন্ধিক্ষনের সময় পার হতেই প্রতিবেশী ও গ্রামের দেওয়ানী মাতব্বর ঐ শিশুকন্যাকে বিয়ের দেওয়ার জন্য বিভিন্ন কৌশলে চাপ দিতে থাকেন অভিভাবকদের। অনেক সময় তাদের কথা মত বিয়ে না দিলে তারা শিশুকন্যার বাবা-মাকে এক ঘরে করে রাখার ভয়ভীতিও প্রদর্শন করেন। কোন উপয়ন্তর খুজে না পেয়ে অভিভাবকেরা শিশুকন্যার বিয়ে দিয়ে দেয় এসব চাপ থেকে নিজেদের বাঁচাতে। শিশুবিয়ে কৈশোরের সমাপ্তি ঘটায়, জোরপূর্বক যৌন সম্পর্কে বাধ্য করে, ব্যক্তি স্বাধিনতা খর্ব করে ও ব্যক্তি সত্তার বিকশিত হতে ব্যহত করে, যা কিশোরীদের আবেগের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। একটি মেয়ের পরিপূর্ন্য মানবিক সত্তা বিকশিত হতে পারে না। পাশাপাশি তারা সামাজিক ও আবেগিক সুস্থতা প্রজনন স্বাস্থ্য ও শিক্ষার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হয়।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন দামুড়হুদা সদর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হাসান আলি।
ভ্রাম্যমান আদালতে সহযোগিতা করেন , দামুড়হুদা মডেল থানার এ এস আই মামুন ও দামুড়হুদা উপজেলা সহকারী সার্টিফিকেট অফিসার জিহন আলি।