মোক্তারপুর গ্রামের পুরাতন জামে মসজিদ কমিটির টাকা আত্মসাৎতের অভিযোগ উঠেছে সাধারণ সম্পাদক আক্কেল হুজুরের বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, আক্কেল হুজুর দামুড়হুদা উপজেলার মোক্তারপুর গ্রামের পুরাতন জামে মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন দীর্ঘ ১৪ বছর যাবৎ। বেশ কিছু দিন যাবৎ কমিটির আয় ব্যয়ের হিসাব প্রকাশ করতে বললে কমিটির সাধারণ সম্পাদক আক্কেল জানান, কমিটিতে মাত্র ১২ হাজার টাকা আছে।
এ সময়ে কমিটির বাকি সদস্যরা বলেন, কেন এতো কম টাকা থাকবে। সপ্তাহে মসজিদে জুম্মার দিনে মুসুল্লিদের দেওয়া দানের টাকা, মসজিদের নারিকেল গাছের ডাব বিক্রয়ের টাকাসহ বিভিন্ন মানুষের দেওয়া দানের টাকার হিসাব কেন খাতাতে উঠানো নেই।
মাঝে একবার হিসাব নিতে গিয়ে তিনি যে খাতার হিসাব দেখিয়েছেন তা তিনি মনগড়া লিখে নিয়ে এসেছিলেন তাও দু একদিনের কেনা নতুন খাতা। বেশ কিছু হিসাব ঐ খাতাতে লেখা ছিলো না। মসজিদের আগের হিসাবের খাতাটি দেখাতে বললেও তিনি দেখাতে পারেন নি।
এরই মধ্যে কমিটির সাধারণ সম্পাদক আক্কেল হুজুর উপস্থিত সকলকে বলেন, আমি মনে করে দেখি এমন কোন হিসাব আছে কি যা হিসাবের খাতায় তোলা নেই। পরবর্তীতে ১২/০১/২০২০ তারিখে কমিটির সকল সদস্যসহ স্থানীয় মুরুব্বিদের উপস্থিতে টাকা আত্মসাৎ কৃত কমিটির সাধারণ সম্পাদক আক্কেল হুজুর জানান, সেদিনের হিসাব একটু ভুল ছিল কমিটিতে মোট ৪০ হাজার টাকা অবশিষ্ট রয়েছে।
এ সময় উপস্থিত সকলে জানান, কমিটিতে প্রায় ১৪ লক্ষ টাকা থাকার কথা, উপস্থিতের মাঝে অনেকেই সে সময় বলেন, আমি তো এ বছরে নিজেই টাকা দান করেছি প্রায় ৪০ হাজারের মতো। যেহেতু দানের টাকয় মসজিদের বিল্ডিংয়ের কাজ করা হয় নি সেহেতু ১৪ বছরের উত্তলন করা সব টাকায় থাকার কথা। মসজিদের বিল্ডিংয়ের সকল কাজ ভুট্টা ও পাটের সময় গ্রামবাসীর দানকৃত টাকা দিয়েই হয়ে থাকেন।
স্থানীয় সচেতন মহল বলছেন, আক্কেল হুজুর আমাদের এ মসজিদে দীর্ঘ ১৪ বছর একটানা কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দ্বায়িত্ব পালন করে আসছিলো। তিনি দ্বায়িত্বে থাকা কালে মুরসুল্লিদের দেওয়া টাকা, মসজিদের গাছের ডাব বিক্রির টাকাসহ বিভিন্ন দানের টাকা তিনি আত্মসাৎ করে আসছিলেন। টাকার হিসাবের গড়মিলের সমাধানের জন্য বার বার সমাধানের চেষ্টা করা হলেও সমাধানে না আসায় ঝুঁলে ছিল।
বিষয়টি গ্রামে জানাজানির এক পর্যায়ে কমিটিসহ মুসুল্লিদের চাপাচাপির ফলে আক্কেল জানান সকল খরচের পরে ১২ হাজর টাকা অবশিষ্ট রয়েছেন।
এ বিষয়ে কমিটির সদস্যরা বলেন, কমিটিতে টাকা থাকার কথা প্রায় ৪ লাখের মতো। পরে তিনি থাতা পত্র ঘাটাঘাটি করে বলেন না হিসাবে ভুল ছিল কমিটিতে ৪০ হাজার টাকা আছে।
এবিষয়ে কমিটির সহ-সভাপতি মিসকাত আলী মাস্টার বলেন, আমি গত কয়েক মাস ধরে মসজিদ কমিটির সহ- সভাপতি হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করছি। কমিটির সকল সদস্যসহ গ্রামবাসী মসজিদের হিসাব নিতে গেলে হিসাবে বড় আকারের ক্রুটি পরিলক্ষিত হয়। আমি কমিটিতে আসার পর রেজুলেশনসহ আয় ব্যয়ের হিসাব সংরক্ষণের জন্য বলি এবং আগের হিসাব দেখাতে বলি। কমিটির সাধারণ সম্পাদক আক্কেল তা দেখাতে পারেন নি।
পরে তিনি ১২ তারিখের মিটিংয়ে সঠিক হিসাব না দিতে পারলে উপস্থিত সকলকে বলেন, আমাকে একটা ব্যবস্থা করে দেন।
এ সময় উপস্থিত সকলের সিদ্ধান্তে আক্কেলকে ৫ লক্ষ টাকা মসজিদ কমিটির হিসাবে দিতে বললে তিনি তাতে রাজি না হওয়ায় ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার রাজি হন। তবে তিনি টাকা পরিষদ না করে আত্মগোপনে রয়েছেন।
আমাদের গত তিন সপ্তাহে মসজিদ থেকে ১৯ হাজার টাকা আয় হয়, সেহেতু দীর্ঘ ১৪ বছরে কম করে হলেও তিনি প্রায় ২৫ লক্ষ টাকার মতো টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে মনে করছি।
এ বিষয়ে মোক্তারপুর গ্রামের নজরুল মাস্টার, আঃ রাজ্জাক, সাবেক মেম্বর আক্কাচ আলী, জাফিরুল মাস্টার, আনছার মোল্লা, আওয়াল, আমির ফন্দি, লুৎফর মাস্টার, সাইদুর রহমান(টোকন), হাফিজুর, সামাদসহ গ্রামবাসীরা কমিটির সহ-সভাপতি মিসকাত মাস্টারের সাথে একমত হয়ে জানান, আল্লাহর ঘরের দানের টাকা নিয়ে আক্কেল হুজুরের এধরণের আচরণ খুবই দুঃখ জনক।
এটা মেনে নেওয়া একজন মুমিনের পক্ষে কষ্টকর। শুনলাম আক্কেল হুজুর নাকি গ্রামে মেম্বারের ভোট করবেন, তিনার মতো মানুষ জনপ্রতিনিধি হলে জনসাধারণ সেবার পরিবর্তে হয়রানির স্বীকার হবেন।