দামুড়হুদা সড়কে রাজা ব্রিকসের সামনে কাঁদা-পানিতে ডিম ভর্তি আলমসাধু উল্টে ক্ষয়ক্ষতি পাবনা-ঈশ্বরদী থেকে ডিম বোঝায় মহেশপুরগামী আলমসাধু।
চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার রাজা ব্রিক্সের সামনে এসে পৌঁছালে ডিম বোঝায় আলমসাধুটি দুর্ঘটনার শিকার হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী, ভূক্তভোগী ও পথচারী এ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করছেন চুয়াডাঙ্গা- যশোর মহাসড়কের দামুড়হুদা পুড়াপাড়ার রাজা ব্রিকসকে। তারা বলছে, রাজা ইটভাটার মাটি বহনকারী ট্রাক্টরে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে কৃষি জমি ধ্বংস করে মাটি বহন করে নিয়ে আসে।
দীর্ঘদিন ধরে বহনকারী ট্রাক্টরের মাটি এ মহাসড়কে উপরে পড়ে। গত সোমবার রাতে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাতে কর্দমাক্ত হয়ে পিছল হয়ে যায়। ফলে প্রতি বর্ষা মৌসুমে দুর্ঘটনা কবলিত হয় বিভিন্ন যানসহ মোটরসাইকেল আরোহি সাধারণ পথচারীদের, এবারো এর ব্যতিক্রম ঘটেনি।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৬ টার দিকে ডিম বোঝাই ৩ টি আলমসাধু ঈশ্বরদীর জয়নগর ফামিদা ডিমের আড়ৎ তের ডিম ব্যবসায়ী আমিনুলের নিকট ডিম নিয়ে মহেশপুরের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন।
এসময় ডিম বহনকারী ৩ টি আলমসাধু মধ্যে একটি আলমসাধুটি রাজা ব্রিকসের সামনে হাইওয়েতে এসে পৌঁছালে ভাটার বহনকৃত মাটির জমাট বেঁধে থাকার জন্য মেইন রাস্তার উপরে স্লিপ করে উল্টে যায়। আলমসাধুতে এক লক্ষ্য চল্লিশ হাজার টাকার ডিম ছিল।
এ দুর্ঘটনায় গাড়িতে থাকা প্রায় ৫০ হাজার টাকার মুরগীর ডিম ভেঙে নষ্ট হয়ে যায়। পরে একই স্থানে পিছলিয়ে পড়ে আহত হয় এক মোটর সাইকেল আরোহী।
এ ঘটনার দায় এড়াতে কিছুক্ষণ পরেই রাজা ইটভাটার শ্রমিকদের মাধ্যমে পাওয়াট্রিলার করে বালি নিয়ে এসে তড়িঘড়ি করে রাস্তার উপরে ফেলতে দেখা যায়।
ডিম বহনকারী আলমসাধু ড্রাইভারে বাড়ি চুয়াডাঙ্গা জেলার জয়রামপুর গ্রামে।
মোটরসাইকেল আরোহীর বাড়ি জানা সম্ভব হয়নি। তবে এ ঘটনায় তেমন কোন হতাহতের খবর পাওয়া না গেলেও এ দূর্ঘটনার পর উপস্থিত অনেকের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে লক্ষ্য করা যায়।
এসময় স্থানীয়রা বলেন, দামুড়হুদা কলেজ থেকে জয়রামপুর কাঁঠাল তলা পর্যন্ত ইটের ভাঁটার মাটি পড়ে একই অবস্থার পরিনিত হয়েছে। বিষয়টি কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রণে আনার দরকার মোটরসাইকেল আরোহী আওয়াল, আক্তার সহ বেশ ক’একজন পথচারী বলছেন, মহামারী করোনার কারনে রাস্তায় যান চলাচনে কম ছিল তাই রক্ষে, নতুবা কতজনকে যে এমন দুর্ঘটনার স্বীকার হতে হতো তার ঠিক নেই ?
আর সড়কে এভাবেই চলে যেতো নাম না জান প্রতিভাবানদের তরতাজা প্রাণ। খবর পাওয়ার পর পর সকাল ৭ টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছান দামুড়হুদা মডেল থানা পুলিশের একটি টিম।
পরবর্তীতে দুর্ঘটনার খবর জানার পর পর সকাল ১১ টার দিকে দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিলারা রহমানের নির্দেশে ঘটনাস্থল পৌঁছান দামুড়হুদা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যজিস্ট্রেট সুদীপ্ত কুমার সিংহ।
এসময় তিনি আলমসাধু সহ সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা শোনেন। এ সময় সহকারী কমিশনার( ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট সুদীপ্ত কুমার সিংহ ঘটনাস্থলেই ইট ভাটা মালিক ইকবাল মাহমুদ টিটোকে ডেকে পাঠালে ভাঁটা মালিক ঘটনাস্থলে আসেন। সেসময় ডিম ভেঙে যাওয়ায় ক্ষতিপূরণ হিসেবে ডিমের মালিককে ৩৫ হাজার, চালককে ও হেলপার কে ৫০০ করে মোট ৩৬ হাজার টাকা দেওয়া হয়। ক্ষতি পূরণের সব টাকা রাজা ব্রিকসের মালিক ইকবাল মাহমুদ টিটোর নিকট থেকে নিয়ে ঘটনাস্থলেই দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এসময় ইট ভাটার মালিককে পরিস্কার ভাবে সহকারী কমিশনার (ভূমি) জানিয়ে দেন আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে, রাস্তার পাশে রাখা সব ইট সরিয়ে নিবে। মাটি পরিবহনের সময় অবশ্যই পলিথিন/চটের বস্তা ব্যবহার করে মাটি আনবেন। সর্বপরি ব্রাকের অফিস থেকে ইটের ভাঁটার অপর পাশ পর্যন্ত সকল রাস্তা সকাল-বিকাল ৬ জন শ্রমিক দিয়ে পরিস্কার রাখবে মর্মে মুচলেকা দেন ইট ভাটা মালিক ইকবাল মাহমুদ টিটো।
এসময় সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শরিফুল আলম মিল্টন, এ টি ও সেলিম রেজা, স্থানীয় সংবাদ কর্মী সহ স্থানীয়রা উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিলারা রহমান। মেহেপুর প্রতিদিনকে বলেন, সকল ইটভাটা মালিকদের উদাসীনতার কারণে আর কোন সাধারণ পথচারীরা যেন দুর্ঘটনার শিকার না হন সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ভাটা মালিককে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। তা যদি না মানেন তাহলে সে সকাল ভাটার বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।