দামুড়হুদায় ছুটিতে আাসা পুলিশ সদস্য’র বিরুদ্ধে বৃদ্ধ মহিলাকে লাঠিপেটা করার অভিযোগ করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে জয়রামপুর কাঁঠালতলাস্থ বাজারে দোকানের সামনে এই ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় বৃদ্ধ মহিলা বাদি হয়ে দামুড়হুদা মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযুক্তরা হলেন জয়রামপুর গাতির পাড়ার মো: আবুল হোসেন এর ছেলে ১) মো: ইখলাস (পুলিশ সদস্য) ২) আলাউদ্দিন (৫০) মো: ইদ্রিস (৪০) এবং মিলন (৩০)।
অভিযোগ সুত্রে জানাগেছে দামুড়হুদা উপজেলার হাউলী ইউনিয়নের কাঁঠালতলাস্থ বাজার নিবাসী স্বামী-মৃত নুরুল ইসলামের স্ত্রী মোছা: রহিমা খাতুন (৫৬) এর বসত বাড়ির সামনে নিজ দখলিয় তিনটি দোকান আছে। যা ৪০ বছর পূর্বে ক্রয়কৃত সম্পত্তি। সকালে দোকানের সামনে বৃদ্ধ মহিলা আসলে আগে থেকে ওত পেতে থাকা ছুটিতে আসা পুলিশ সদস্য এখলাস সহ অভিযুক্তরা বাজারে উপস্থিত লোকজনের সামনে লোহার রড ও কাঠের মোটা বাটাম দিয়ে এলোপাতাড়ি ভাবে বৃদ্ধ মহিলাকে মারপিট করতে থাকে। বৃদ্ধ মহিলার আত্মচিৎকারে স্থানীয় লোকজন ছুটে এসে অভিযুক্তদের কবল থেকে উদ্ধার করে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানাগেছে
বৃদ্ধ মহিলার পরিবারটি দীর্ঘ প্রায় ৪০ বছর পূর্বে জমিকিনে এখানে বাসবাস করে আসছে। যা আমরা জন্মের পর থেকে দেখছি। ওই মহিলার ভোগ দখলকৃত বাড়ির সামনে তিনটে দোকান রয়েছে, অভিযুক্তদের দাবি ওই জমি তাদের। তারাও নাকি বছর ৪ পূর্ব ঐ জমি কিনেছে। এ বিষয়ে বিজ্ঞ আদালতে মামলা চলছে। ওই দোকান তিনটিতে যাতে কোন ভাড়াটিয়া থাকতে না পারে সে কারণে ইট দিয়ে দোকানের সামনে ইট দিয়ে প্রাচীরের মতো করে রেখেছে, যাতে করে কেউ ওখানে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে না পারে। ইতিমধ্যে একজন ব্যবসায়ী দোকান ছেড়ে চলে গেছে। প্রধান সড়কের পাসে রাস্তায় ইটপাটকেল থাকায় সাধারণ মানুষেরও চলাচলে বিগ্নঘটে। স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে বৃদ্ধ মহিলা ওই দোকান থেকে ভাড়া উত্তোলন করে কোনো রকমে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। সকালে মহিলা যখন দোকানের সামনে আসে তখন আমাদের সবার সামনে ওই বৃদ্ধ মহিলাকে যেভাবে মারপিট করা হয়েছে তা কোন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ করতে পারে না। হয় সে নেশাগ্রস্ত না হয় তার মস্তিষ্কে সমস্যা আছে। তানাহলে ৬০ উর্ধ ঐ বৃদ্ধ মহিলাকে জন সমূখে এভাবে কাঠের বাটাম দিয়ে বেধড়ক মারপিট করতে পারতো না। এটা খুবই খারাপ অমানবিক কার্যকলাপ। সব থেকে বেশি অন্যায় হয়েছে পুলিশ সদস্য এখলাসের। সে একজন পুলিশের সদস্য হয়ে নিজেই অতি উৎসাহী হয়ে এই গ্যাঞ্জামের সৃষ্টি করে। তার নেতৃত্বে তারই ভাই ভগ্গোর বৃদ্ধ মহিলাকে মারপিট করছে। উপরন্ত পরিবারটিকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ সহ বিভিন্ন হুমকি ধামকি প্রদান করেছে। প্রকাশ্য দিবালকে জন সম্মুখে পুলিশ সদস্যের এমন কাণ্ডে হতবাক হয়েছে এলাকাবাসী। পরিবারে একজন পুলিশ সদস্য থাকার কারনে দাম্ভিকতার সাথে প্রকাশ্যে সে সহ তার ভাইয়েরা মিলে বৃদ্ধ মহিলাকে আঘাত করে। একপাড়া থেকে আরেক পাড়ায় এসে এরকম মারামারি করা ঠিক হয়নি।
থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে ওখানে জমি নিয়ে একটা সমস্যা আছে। যেটা বিজ্ঞ আদালতে মামলা চলমান। এ বিষয়ে বাদী পক্ষ রহিমা গং বিজ্ঞ আদালতে একটি পিটিশন মামলা দায়ের করেন, যার নং ৪৩৩/২৩। এরই ধারাবাহিকতায় গত ০৯/০৫/২০২৩ ইং তারিখে দামুড়হুদা মডেল থানার এএসআই বিপ্লব কুমার দাস নিজে গিয়ে নুটিশ জারি করে আসে এবং উভয়পক্ষকে শান্তির শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য নির্দেশ দেন। পুলিশি নির্দেশ উপেক্ষা করে ঘটনার দুই দিন যেতে না যেতেই ছুটিতে আসা পুলিশ সদস্যসহ তার আপন ভাইগন বৃদ্ধ মহিলাকে জনসম্মুখে প্রকাশ্যে মারপিট করে। বৃদ্ধ মহিলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি আছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে এলাকাবাসী বিচারের দাবিতে ফুসে উঠেছে।
এবিষয়ে ভুক্তভোগী বৃদ্ধা রহিমা খাতুন বলেন, উল্লেখিত বিবাদীদের সাথে আমার স্বামীর ক্রয়কৃত ভোগ দখলীয় বসত ভিটার জমি নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। বিবাদীরা আমাদেরকে উক্ত জমি হইতে উচ্ছেদ করার জন্য বিভিন্ন ভাবে হয়রানী করার জন্য আমাদের বাড়াতে চলাচলের রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা সহ নানা ভাবে হয়রানী করে আসছে। এমতাবস্থায় আমি জমিজমা সংক্রান্তে বিজ্ঞ আদালতে মামলা করি। পরবর্তীতে উক্ত মামলার প্রেক্ষিতে বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে দামুড়হুদা থানা পুলিশ উক্ত জমিতে শান্তি শৃংখলা বজায় রাখার জন্য বিবাদীদেরকে নোটিশ প্রদান করে। কিন্তু তারপরেও বিবাদী পক্ষ উক্ত জমি পুনরায় দখলে নেওয়ার পাঁয়তারা করতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল সকাল অনুমান ৮ টার দিকে বিবাদীরা বিজ্ঞ আদালতের আদেশ অমান্য করিয়া পাওয়ার টিলার গাড়ী যোগে আমার বসত বাড়ীর প্রবেশে ইট ফেলে আমাদের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দেয়। ঐ সময় আমি বিবাদীদেরকে আমাদের বাড়ীতে চলা চলের রাস্তায় ইট ফেলতে নিষেধ করিলে বিবাদীরা সকলে আমাকে এলোপাতাড়ী ভাবে মারপিট করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করে। তখন আমার ডাক চিৎকার শুনে আশপাশ হইতে পাড়া প্রতিবেশী লোকজন ছুটিয়া এসে বিবাদীদের কবল থেকে আমাকে রক্ষা করে। বর্তমানে বিবাদীগন বিজ্ঞ আদালতে আদেশ অমান্য করিয়া বিরোধীয় জমিতে নির্মান কাজ করার পাঁয়তারা করিতেছে। পরবর্তীতে আমি উল্লেখিত বিষয়ে স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের জানাইয়া দামুড়হুদা মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি।
এবিষয়ে দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি তদন্ত শফিকুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।