যৌক্তিক কারণ ছাড়াই ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্প থেকে দারুল আরকাম মাদ্রাসাকে বাদ দেয়া হয়েছে। ফলে মাদ্রাসার শিক্ষকরা জানুয়ারি থেকে আট মাস ধরে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। এতে হুমকির মুখে পড়েছে সারা দেশের দেড় লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অভিপ্রায়ে প্রতিষ্ঠিত দারুল আরকাম মাদ্রাসার অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে।
এদিকে দারুল আরকাম মাদ্রাসাকে স্থায়ী রূপ দিতে ইসলামিক ফাউন্ডেশন আলাদা প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। ১৪ জুন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ মারা যাওয়ার পর মন্ত্রণালয়ের দেখভাল করছেন প্রধানমন্ত্রী। এ অবস্থায় মাদ্রাসাটির স্থায়ী রূপ দিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন শিক্ষক ও অভিভাবকরা। সূত্র জানায়, পরিকল্পনা কমিশন ১১ মে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রস্তাবিত পাঁচ বছর মেয়াদি ৭তম পর্বে মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পে তিন হাজার ১২৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। তবে এ প্রকল্প থেকে দারুল আরকাম মাদ্রাসাকে বাদ রাখা হয়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইফার মহাপরিচালক (ডিজি) আনিস মাহমুদ বুধবার যুগান্তরকে বলেন, আলাদা প্রকল্পের মাধ্যমে দারুল আরকাম মাদ্রাসা করতে যাচ্ছে সরকার। মাদ্রাসাটি চালু করার সময় যেসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার প্রয়োজন ছিল তার কিছুই মানা হয়নি। বিশেষ করে প্রকল্পের অধীনে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু এসব শিক্ষার্থী কোন শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষা দেবে? তাদের সিলেবাস কারা তৈরি করবেন তা উল্লেখ নেই। এসব কারণে প্রকল্প থেকে মাদ্রাসাটিকে বাদ দেয়া হয়। আমরা চাই মাদ্রাসাগুলো মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে ইবতেদায়ি মাদ্রাসা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হোক। সেভাবেই প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। এটি পাস হলে মাদ্রাসার শিক্ষক পদগুলো স্থায়ী হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ধর্ম সচিব মো. নুরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, দারুল আরকাম মাদ্রাসার জন্য আলাদা প্রকল্প প্রস্তাব পাঠিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত দেবেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের একাধিক কর্মকর্তা জানান, এ মাদ্রাসায় কওমি ও আলিয়া নেসাবের আলেমদের চাকরি হওয়ায় আলেম সমাজে প্রধানমন্ত্রীর ব্যাপক সুনাম হয়েছিল। ইসলামিক ফাউন্ডেশনে ঘাপটি মেরে থাকা বিএনপি-জামায়াতের এজেন্টরা কৌশলে মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম (৭ম পর্যায়) প্রকল্প থেকে মাদ্রাসাটি বাদ দিয়ে পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব পাঠায়। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পাঠানো প্রস্তাবটি অনুমোদন করে পরিকল্পনা কমিশন। প্রকল্প পাস হলেও জানুয়ারি থেকে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না মাদ্রাসার শিক্ষকরা। এ সুযোগে আলেম সমাজে ঘাপটি মেরে থাকা বিএনপি-জামায়াতের চক্রটি প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে। সরকারের ইমেজ ক্ষুণ্ন করছে।
এ প্রসঙ্গে দারুল আরকাম শিক্ষক সমিতির মহাসচিব আনাস মাহমুদ যুগান্তরকে বলেন, এ মাদ্রাসার ধারণা প্রধানমন্ত্রীর। এ মাদ্রাসা বন্ধ হোক তা তিনি অবশ্যই চাইবেন না। আট মাস ধরে আমরা বেতন-ভাতা পাচ্ছি না। করোনা পরিস্থিতির কারণে আমরা কোনো আয়ও করতে পারছি না। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি ও ধর্ম সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে প্রতিকার চেয়েছি। এ বিষয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাই।
জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার মাদারেরচর দারুল আরকাম মাদ্রাসার সভাপতি ও অভিভাবক শাহজামাল যুগান্তরকে বলেন, জমি দেয়াসহ সব ধরনের সহযোগিতা করে মাদ্রাসা করেছি। শিক্ষার্থীদের ভর্তিও সময় অভিভাবকদের নানা কথা বলেছি। অথচ এখন দেখছি শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বন্ধ কয়েক মাস ধরে। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
প্রাথমিক শিক্ষাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষার আওতায় আনতে ২০১৭ সালের নভেম্বরে এক হাজার ১০টি দারুল আরকাম মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়। এসব প্রতিষ্ঠানে ইফার নিজস্ব সিলেবাস দ্বারা তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কার্যক্রম শুরু হলেও ২০২০ সালে তা পঞ্চম শ্রেণিতে উন্নীত হয়। এসব মাদ্রাসায় দেড় লাখ শিক্ষার্থী লেখাপড়ার সুযোগ পাচ্ছে।