সমবায় অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন দুগ্ধ ও মাংস উৎপাদনের মাধ্যমে গ্রামীণ কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে যশোর ও মেহেরপুর জেলায় সমবায় কার্যক্রম বিস্তৃতকরণ প্রকল্পের মাধ্যমে এ অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটেছে। পাইলটিং এই প্রকল্পটির কাজ যশোর জেলার, মনিরামপুর উপজেলা ও মেহেরপুর জেলার, সদর উপজেলায় কার্যক্রম চলমান রয়েছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ৪৯ কোটি ৮০ লক্ষ ৬৩ হাজার টাকা।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রকল্প এলাকায় মোট ৪২টি সমবায় সমিতি গঠন করে, ৪ হাজার ২শ জন বেকার যুবক, সুবিাধাবঞ্চিত মহিলাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষে ঋণ সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। সুবিধাভোগী সদস্যদের জনপ্রতি গরু ক্রয়ের জন্য ৮০ হাজার টাকা ও গরুর খাবার ক্রয়ের জন্য ২৫ হাজার টাকা করে মোট ১ লাখ ৫ হাজার টাকা করে ঋণ দেওয়া হয়েছে।
মেহেরপুর সদর উপজেলার বুড়িপোতা, কুতুবপুর, আমঝুপি, শ্যামপুর, বারাদি, পিরোজপুর ও আমদহ এই ৭টি ইউনিয়নে জরিপের মাধ্যমে ১ হাজার ৪শ জন সুবিধাভোগী বাছাই করা হয়েছে। এবং ১৪টি সমবায় সমিতি গঠন করা হয়েছে। ১ হাজার ৩শ জন সুবিধাভোগী সদস্যদের ৪ দিনব্যাপী দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে এবং জনপ্রতি ১ লক্ষ ৫ হাজার টাকা করে মোট ১৩ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা ঋণ প্রদান করা হয়েছে।
২০২২ সালের ১ জুন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়রে প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এমপি আনুষ্ঠানিক ভাবে বুড়িপোতা ও কুতুবপুর ইউনিয়নের সুবিধাভোগী সদস্যদের মাঝে ঋণের চেক বিতরণ করেন। পরবর্তীতে তিনি আমঝুপি, বারাদি, পিরোজপুর, শ্যামপুর ও আমদাহ ইউনিয়নের মোট ১ হাজার ৩শ জন সুবিধাভোগী সদস্যদের মাঝে ঋণের চেক বিতরণ করেন। এছাড়া একই বছরের ১৫ জুলাই প্রতিমন্ত্রী মহোদয় বুড়িপোতা ইউনিয়নের হরিরামপুর গ্রামে প্রকল্প পরিদর্শন করেন। এসময় প্রকল্পের সুবিধাভোগী সদস্য রহমতুল্লা প্রল্পের মাধ্যমে গরু পালন করে জীবন মানের উন্নয়নের কথা মাননীয় প্রতিমন্ত্রী মহোদয়কে অবহিত করেন। তিনি আরও ৩ জন সুবিধাভোগী সদস্যদের সাথে কথা বলেন এবং প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। গত বছরের ০২ মার্চ খুলনার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো: আব্দুর রশিদ বুড়িপোতা ইউনিয়নের শালিকা গ্রামে প্রকল্প পরিদর্শন করেন। পরে সুবিধাভোগী সদস্যদের সাথে কথা বলেন এবং প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
প্রকল্প পরিচালক মো: মিজানুর রহমান, জেলা সমবায় অফিসার প্রভাষ চন্দ্র বালা, উপজেলা সমবায় অফিসার মনিরুজ্জামানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ ও প্রকল্পে নিয়োগ গ্রাপ্ত ৫ জন ফ্যাসিলিটেটর নিয়োমিত প্রকল্পটি মনিটরিং করছেন এবং সুবিধাভোগী সদস্যদের সাথে কথা বলে তাদের করনীয় বিষয়ে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে প্রকল্পটিকে সফল করে তোলার চেষ্টা অব্যহত রেখেছেন।
ছোট প্রকল্প হিসেবে প্রকল্পটি ইতোমধ্যে প্রকল্প এলাকার সুবিধাভোগী সদস্যদের মাঝে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি, বেকার সমস্য দুরীকরণ ও সমাজের পিছিয়েপড়া মানুয়ের ভাগ্য উন্নয়নে প্রকল্পটি অগ্রনী ভূমিকা পালন করছে।
মেহেরপুর সদর উপজেলার গোভিপুর গ্রামের সুবিধাভোগী সদস্য মো: সেন্টু মিয়া ২০২২ সালের ১৫ জুলাই ১ লক্ষ ৫ হাজার টাক্ াঋণ পেয়ে ২ টি ষাঁড় গরু ক্রয় করেন। ১৫ মাস পর তিনি একটি গরু বিক্রয় করে ঋণের টাকা পরিশোধ করেন এবং বাকি একটি গরু তার লাভ হিসেবে রয়েছে। তিনি বলেন, এ প্রকল্পের মাধ্যমে আমি খুবই উপকৃত হয়েছি এবং এই ধরনের প্রকল্প আরও বেশি বেশি বাস্তবায়িত হলে আমার মত অনেকের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটবে।
বাংলাদেশ সরকারের এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রদত্ত ঋণের কোন প্রকার সুদ প্রদান করতে হয়না। শুধু মাত্র ৩% সার্ভিস চার্জে ঋণ পরিশোধের পর ঘুর্ণায়মান তহবিল হিসেবে প্রকল্পের অর্থ হতে পুনরায় ঋণ প্রদান করা হয়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রকল্প এলাকার সুবিধাভোগী সদস্যদের ভাগ্যে উন্নয়নের পাশাপশি দুধ ও মাংস ঘাটতি পুরনে প্রকল্পটি অনবধ্য ভুমিকা পালন করছে।
লেখক: জেলা সমবায় কর্মকর্তা, মেহেরপুর।