নির্বাচনী ডামাডোল শুরুর আগে আগে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রো ঢাকায় আসছেন। তার ঢাকা আসাকে কেন্দ্র করে বেশকিছু নতুন আগ্রহের জায়গা উন্মোচিত হতে চলেছে।
গত তিন দশকের মধ্যে এই প্রথমবার বাংলাদেশ সফরে আসছেন ফ্রান্সের কোন প্রেসিডেন্ট। ভারতে অনুষ্ঠিতব্য দু’দিনের জি—২০ সম্মেলনে অংশগ্রহণ শেষে ১০ সেপ্টেম্বর তিনি বাংলাদেশে আসবেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সফরসঙ্গী হিসেবে বাংলাদেশে আসছেন ফ্রান্সের ইউরোপ ও ফরেন এফেয়ার্স মিনিস্টার ক্যাথেরিন কলোনা।
এরই মধ্যে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের দপ্তর থেকে বাংলাদেশ সফরের বিষয়ে বিবৃতিও দেওয়া হয়। যেখানে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশ এমন একটি দেশ, যেটি দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং তার অংশীদারিত্বে বৈচিত্র্য আনতে চাইছে।“ এতে বলা হয়, বাংলাদেশ ও ফ্রান্স দু’দেশই বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দারুণ একতা দেখায়। বিশেষ করে, প্যারিস এজেন্ডা ফর পিপলস অ্যান্ড দ্য প্ল্যানেট—এর পরিকাঠামোর মধ্যে এই ঐক্য প্রতিফলিত হয়।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোর আসন্ন বাংলাদেশ সফরকালে মহাকাশে আরও একটি নতুন স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের চুক্তি সই হবে। ফ্রান্সের সহায়তায় এবার যে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হবে তার নাম বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট—২। এটি একটি ‘আর্থ অবজারভেটরি’ ভূ—উপগ্রহ কেন্দ্র। এর মাধ্যমে পৃথিবী তথা বাংলাদেশের স্থলভাগ ও জলভাগ পর্যবেক্ষণ করা হবে।
এখন প্রশ্ন হলো, ফ্রান্স কেন বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের আগ মুহূর্তের এই সফর কূটনীতিতে বাংলাদেশ সরকারকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে। কারণ ফ্রান্সের কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক প্রভাব বৈশ্বিক বিষয়গুলো গতিপথকে প্রভাবিত করে।
এদিকে ফ্রান্স বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতিতে প্রধানতম খেলোয়াড়দের একটি, যারা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য ইউরোপীয় ইউনিয়নে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে। আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় ফ্রান্স উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। এছাড়া বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকের বড় অংশ যায় ফ্রান্সে। বাংলাদেশেল পোশাক রপ্তানির অন্যতম ভালো বাজার ফ্রান্স। যেখানে বার্ষিক রপ্তানি প্রায় আড়াই বিলিয়ন ডলারের বেশি। ২০২১—২২ এর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রায় ১.৩৮০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি করেছে ফ্রান্সে, বিপরীতে ফ্রান্স থেকে আমদানী হয়েছে প্রায় ১০৯ মিলিয়ন ডলারের পণ্য।
বাংলাদেশ এবং ফ্রান্স উভয়ই জলবায়ু পরিবর্তন সমস্যা মোকাবিলায় সক্রিয়ভাবে জড়িত। ফ্রান্স নবায়নযোগ্য শক্তি এবং জলবায়ু অভিযোজন—সম্পর্কিত প্রকল্পসহ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের কিছু প্রচেষ্টাকে সমর্থন করেছে।
আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সংকট বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, আগামীতে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক সংকটের ঝুঁকিতে রয়েছে ফ্রান্স। তাই ফ্রান্সের দরকার নতুন ব্যবসায়িক গন্তব্য। আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, জি—২০ সম্মেলনে ফ্রান্সের যোগ দেওয়ার মূল উদ্দেশ্য হলো, এ অঞ্চলে বাণিজ্যের বিস্তার ঘটানো। ফলে, ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চলে পশ্চিমাদের প্রভাব বৃদ্ধির জন্য আরো অনেক দেশের মতো ফ্রান্সও বাংলাদেশকে বাণিজ্যিক বন্ধু হিসাবে বিবেচনা করছে। প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম থেকে শুরু করে সামরিক অস্ত্রের জন্য ফ্রান্স বাংলাদেশকে ক্রেতা হিসাবে পেতে চাইবে।
তিন দশক পরে সর্বোচ্চ পর্যায়ের বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের এই সফর দীর্ঘমেয়াদি সম্ভাবনার নতুন নতুন ক্ষেত্র উন্মোচন করবে। এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা।