শীত মৌসুমেই ইটভাটা গুলোতে দেওয়া হয় আগুন। মেহেরপুরেও এর ব্যাতিক্রম হয়নি। জেলায় শতাধিক ইটভাটা গুলোতে জ্বলছে দাওদাও করে আগুন। আর এই আগুন জ্বালাতে ব্যবহার হচ্ছে কাঠ।
প্রতি বছরেই লক্ষ লক্ষ মন কাঠ পুড়ে ছাই হচ্ছে ভাটার আগুনে। ইট ভাটা গুলোতে কয়লা ব্যবহার করার নির্দেশনা থাকলেও মানা হচ্ছে না। অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ।
জেলায় জিকজাক ভাটাগুলোর মধ্যে ২টির পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র থাকলেও নবায়ন হয়েছে একটির। বাকিগুলোর আছে শুধু ট্রেড লাইসেন্স, নেই পরিবেশগত ছাড়পত্র।
ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইনে (১৯৮৯ ও ২০০১) উল্লেখ আছে, আবাদি জমিতে কোন ইটভাটা তৈরি করা যাবে না ফিক্সড চিমনি ব্যবহার করতে হবে। এছাড়াও কাঠ পোড়ানো যাবে না।
এসকল ভাটায় প্রতি মৌসুমে গড়ে ৯০ লাখ মন কাঠ পোড়ানো হয়। এসব জ্বালানী কাঠ আসে সংরক্ষিত বা গৃস্থালীর বাগান থেকে। এইভাবে কাঠ পোড়ানো থামানো না যায় তবে একদিকে যেমন জ্বালানী কাঠের সংকট দেখা দিবে অন্য দিকে কালো ধোয়ায় পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে।
আবাসিক এলাকার সাথেই এসকল ইটভাটা স্থাপন করাই পরিবেশ যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনি নষ্ট হচ্ছে আবাদী জমি, উজাড় হচ্ছে গাছ পালা, ভারসাম্য হারাচ্ছে প্রকৃতি।
জেলা প্রশাসনের তৎপরতায় ব্যারেল চিমনি দিয়ে ইটভাটা চালু করতে না পারলেও ফিক্সড চিমনীর ইট ভাটায় অবাধে পুড়ছে কাঠ। সেই সাথে কাঁদামাটিতে পিচ রাস্তাগুলোও চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
ভাটা মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, এ বছরে হিসেবে ৫০টির মতো ইটভাটা চালু রয়েছে। কোন ভাটারই পরিবেশগত কোন ছাড়পত্র নেই।
বুড়িপোতা ইউপি সদস্য ওয়াসিম আলী বলেন, একটি ইটভাটা তৈরি করতে কমপক্ষে ৭/৮ একর জমির প্রয়োজন হয়। অনেক সময় মাটির প্রয়োজন হলে এলাকার লোকজনের কাছ থেকে আবাদি জমির উপরের এক থেকে দেড়-দুই ফিট মাটি কেটে ইট তৈরির জন্য সংরক্ষণ ও ব্যবহার করা হয়। এতে ফসলী জমির উর্বরতা শক্তি নষ্ট হয়।
এছাড়াও ভৈরবের মাটি অনেক অসাধু লোক রাতের অন্ধকারে কেটে নিয়ে ভাটায় ব্যবহার করছে।
তেরোঘরিয়া গ্রামের আব্দুস সামাদ বলেন, আমাদের গ্রামের রাস্তার পাশে পুকুর করে দেওয়ার কথা বলে স্কেবেটর মেশিন দিয়ে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এতে অনেক সময় পাশের জমির অংশও ভেঙ্গে পড়েছে ফলে সেই জমির মালিক ও পুকুর করে মাটি দিতে বাধ্য হয়।
আবার ট্রাক্টর ট্রলিতে মাটি বহন করে ভাটায় নিয়ে আসার সময় রাস্তায় মাটি পড়ে সাধারণ মানুষ দূর্ভোগের মধ্যে পড়ে। একটু ভারি কুয়াশা বা হাল্কা বৃষ্টিতে পাকা সড়কগুলো মরণ ফাদে পরিনত হয়।
মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক দেলোয়ার রহমান বলেন, ইটভাটায় নির্গত কালো ধোয়ায় মানুষের শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, ক্যান্সারসহ নানা রোগের সৃষ্টি হয়। তাছাড়া অতিরিক্ত কার্বণ-ডাই অক্সাইডের কারণে ফসল ও এলাকার পরিবেশ নষ্ট হয়।
জেলা ভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এনামূল হক জানান, কোনো কোনো ভাটা মালিকরা কাঠ পোড়ায় কাঠের সহজ প্রাপ্যতায়। এবার কয়লা দিয়েও ইট পোড়ানো হচ্ছে। তাছাড়া কয়লা ব্যবহারের কারিগরের অভাব অন্যতম।
পরিবেশ অধিদপ্তর কুষ্টিয়া উপপরিচালক মোহাম্মদ আতাউর রহমান জানান, মেহেরপুর জেলায় দুইটা জিকজাক ভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র থাকলেও হালনাগাদ আছে একটির। বর্তমানে ১২০ ফিট চিমনিরও কোন অনুমোদন নেই। তবে কোন ভাটাতেই কাঠপোড়াতে দিবো না ,খুব শিঘ্রই অভিযান পরিচালনা করা হবে।
সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদুল আলম বলেন, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে আমরা এ পর্যন্ত ৪২ টি ব্যারেল চিমনীর ইটভাটা বন্ধ করে দিয়েছি। ইটভাটায় কাঠের ব্যবহারের অভিযোগ আমরা পেয়েছি। এ ব্যপারে জেলা প্রশাসকের নিদের্শে আমরা পদক্ষেপ নিবো।
মেহেরপুর জেলা প্রশাসক আতাউল গনি বলেন, আপনারা জানেন ইতোমধ্যে যেগুলো ব্যারেল চিমনির প্রস্তুতি নিয়েছিলো সেগুলো গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যেসব ইটভাটায় কাঠ ব্যবহার করছে আমরা তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
মেপ্র/ইএম