চুয়াডাঙ্গায় চলতি মৌসুমে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে । প্রচন্ড পরিমাণ তাপে জনজীবনে নেমে এসেছে অস্থিরতা। শিশু থেকে সকল বয়সী মানুষ অসুস্থ হওয়ার প্রবণতা বেড়েছে সাথে বেড়েছে লোডশেডিং। গতকাল শুক্রবার বিকাল তিনটার সময় চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১১ শতাংশ। যা চলতি মৌসুমে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এটিই।
চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ আরও কিছু দিন অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান। তিনি বলেন, আগামী তিন দিন আরও তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। ৪৩ থেকে ৪৪ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠতে পারে তাপমাত্রার পারদ। সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ করেন তিনি।
এদিকে তীব্র গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে লোডশেডিং। এতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে চুয়াডাঙ্গার জনজীবন। সব থেকে বেশি কষ্ট পাচ্ছে শিশু ও বয়োবৃদ্ধরা। গরমে এসি ও ফ্যানের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে বিদ্যুতের ব্যবহারও। ফলে বেড়েছে লোডশেডিং। দিনে বাসায় থাকা দায় হয়ে পড়েছে মানুষের। এর মধ্যে রয়েছে রাতে মশার যন্ত্রণা। গরমের সঙ্গে ঘন ঘন লোডশেডিং হওয়ায় সারা রাত নির্ঘুম কাটাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষের।
অপরদিকে জেলা সদর হাসপাতালে বেড়েছে ডায়রিয়া ও শিশু রোগীর সংখ্যা। ওয়ার্ডের মেঝেতে রেখে চলছে চিকিৎসা। এছাড়া বহির্বিভাগেও রয়েছে রোগীদের চাপ। প্রতিদিন গড়ে গরমজনিত কারণে ৭০০-৮০০ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহা: আতাউর রহমান।
গরমের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু বিদ্যুতের উৎপাদন সে তুলনায় না বাড়ায় লোডশেডিং বেড়েছে বলে জানিয়েছেন মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির চুয়াডাঙ্গা জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) আবু হাসান।
তিনি বলেন, জেলায় গরমে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। পল্লী বিদ্যুতের আওয়াধীন এলাকায় প্রতিদিন প্রায় ১০৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। সেখানে আমরা পাচ্ছি ৯০-৯২ মেগাওয়াট। আমাদের মূল গ্রিডের যে ধারণক্ষমতা, সেখানেও টানতে পারছে না। ঘাটতি পূরণ করতেই লোডশেডিং চলছে।
চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের ছাত্র ফিরোজ হোসেন বলেন, বেশ কয়েকদিন যাবত গরমের তীব্রতা বেড়েই চলেছে চুয়াডাঙ্গায়। সরকারের পক্ষ থেকে যদিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে । ঘর এবং ঘরের বাইরে সকল স্থানে গরম। সাথে বাতাসে আদ্রতার সাথেও গরম অনুভূতি হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গার দিনমজুর রুহুল বলেন, গরমের কারণে আমরা ঠিকমতো কাজে যেতে পারছি না। কাজে গেলেও আমরা ঠিকমতো কাজ করতে পারছি না। অনেক রৌদ পড়ছে। এই রোদে যেন মাথা ফেটে যাবে এমন ভাব হচ্ছে। অল্প কাজ করেই আমরা ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছি।
কৃষক বন্ধন আলী বলেন রোদের প্রখরে ফল-ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। আম, লিছু, ধানসহ বিভিন্ন ফসল পুড়ে যাচ্ছে। এতে লোকসানের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফসলে অতিরিক্ত পরিমাণ পানি দিতে হচ্ছে। শেষমেষ ফসল আমরা ঠিকমতো ঘরে তুলতে পারবো কি এটা নিয়েও আমাদের চিন্তা হচ্ছে।