কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর, চিলমারী, মরিচা ও ফিলিপনগর ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত পদ্মা নদীতে মাইলের পর মাইল চর পড়েছে। বন্যার পর চরের মাটিতে পলি জমায় মাটি র্উবর হওয়ায় অতিরিক্তি সার, সেচ, কীটনাশক দিতে হয় না। ফলে বীজ রোপণের তিন মাসের মধ্যেই বাদাম তোলা হচ্ছে। চরজুড়ে এখন বাদাম তোলার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষীরা।
দৌলতপুরে উৎপাদিত বাদামের মান ভালো হওয়ায় প্রতি বছরই দশেরে বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা এসে এখান থেকে বাদাম কিনে নিয়ে যায়। রামকৃষ্ণপুর, চিলমারী, মরিচা ও ফিলিপনগর চরসহ বিভিন্ন চরে কৃষকেরা বাদামের চাষ করেছেন।
উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়রেনর চরাঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, কৃষাণ-কৃষাণীরা ক্ষেত থেকে এখন বাদাম তোলায় ব্যস্ত।
চলতি মৌসুমে চরাঞ্চলে প্রায় ৮৯০ হেক্টর জমিতে চীনা বাদামের চাষ হয়েছে। বিঘাপ্রতি ৭-৯ মণ হারে ফলন পেয়েছেন। ৩ হাজার ৮০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করে খরচ বাদ দিয়ে লাভ হওয়ায় দরিদ্র চাষিদের মুখে হাসি ফিরেছে।
উপজেলার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের বাদাম চাষি সাহাবউদ্দিন বলেন, এবার ৬ বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেছি। যে জমি এক সময় কোনো কাজেই আসত না, সেই জমিতে বাদাম ফলিয়ে অনেক লাভবান হচ্ছি।
ইসলামপুরের কৃষক আবুল হাসেম জানান, ৫ বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করে তিনি এবার প্রায় ২ লাখ টাকার বাদাম বিক্রি করেছেন। সব খরচ বাদ দিয়ে তার প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। তবে কৃষি অফিসের সহযোগীতা পেলে আরো বেশি সাফল্য পাওয়া যেত বলে জানান ঐ কৃষক।
অন্যদিকে বাদাম ক্ষেতে কাজ করে দিনমজুররাও চরম খুশি। তারাও কৃষকের বাদাম ক্ষেতে গাছ থেকে বাদাম ঝরিয়ে প্রতিদিন প্রায় তিন’শ থেকে চারশ’ টাকা আয় করেছেন। এমনটিই জানালেন খোদেজা খাতুন নামে এক নারী শ্রমিক। বাদামের ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় চাষিদের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও খুশি। কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় প্রণোদনা দেওয়ায় এ বছর বাদাম চাষে ভালো ফলন হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, তামাক চাষে অনাগ্রহী করতে চরের সব অনাবাদি জমি কীভাবে বাদাম চাষের আওতায় আনা যায় সে লক্ষ্যে কৃষি বিভাগ কাজ করছে। দৌলতপুরে পদ্মার চরে প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর জমিতে কোনো ফসল হয় না। এসব জমি বাদাম চাষের আওতায় আনা গেলে একদিকে যেমন চরের দরিদ্র কৃষকদের মুখে হাসি ফোটানো সম্ভব হবে, অন্যদিকে অর্থকরী ফসল বাদাম চাষ করে কৃষকের সারা বছরের আর্থিক চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন চরবাসী।