জামালপুরে চলতি মৌসুমে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। খেতে ধান পাকলেও কাটার শ্রমিকের সংকট দেখা দিয়েছে। তার ওপর বাজারে ধানের দাম কম। এতে সম্পূর্ণ হতাশ কৃষকেরা। অনেকে ভবিষ্যতে আর ধানই আবাদ করতে চান না।
সদর উপজেলার রশিদপুর, চন্দ্রা, কম্পপুর ও পাথালিয়া, মেলান্দহের মাহমুদপুর, নাংলা ও গোবিন্দপুর এবং ইসলামপুরের নোয়ারপাড়া, কাজলা ও হাড়গিলা এলাকায় গত রোববার সরেজমিন দেখা যায়, চারদিকে মাঠজুড়ে শুধু পাকা ধান। কয়েকটি খেতে কৃষক নিজেরাই ধান কাটতে ব্যস্ত। তবে দু-তিনজনের বেশি ধান কাটার কোনো শ্রমিক নেই। শ্রমিকের অভাবে অনেক খেতের ধান কাটতে পারছেন না কৃষকেরা। শ্রমিক না থাকায় খেত থেকে বাইসাইকেলে করে ধান বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন অনেক কৃষক।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কার্যালয় সূত্র জানায়, জামালপুরে এবার ১ লাখ ২৯ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। জেলায় এবার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ২৯ হাজার। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এবার ৫০০ হেক্টর জমিতে আবাদ বেশি হয়েছে। হাইব্রিড, উফশী ও দেশি জাতের বোরো আবাদ করা হয়।
মেলান্দহের নাংলা গ্রামের কৃষক আমিনুল ইসলাম এবার চার বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছিলেন। তিনি বলেন, ধানের বীজ সংগ্রহ থেকে শুরু করে জমি চাষ, রোপণ, সার, কীটনাশক প্রয়োগ পর্যন্ত প্রতি বিঘায় ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তার ওপর ধান কাটতে প্রথম দিনে ৬৫০ টাকা, দ্বিতীয় দিনে ৭৫০ ও তৃতীয় দিনে (গত রোববার) ৯৫০ টাকা নিয়েছেন শ্রমিকেরা। তাঁর ধান কাটতেই ১৫ হাজার টাকা মজুরি লেগেছে। সব মিলিয়ে তাঁর চার বিঘা জমিতে মোট খরচ হয়েছে ৫৫ হাজার টাকা। বাজারে মণপ্রতি ধানের দাম ৫০০ টাকা। চার বিঘা জমিতে তিনি ১০৪ মণ ধান পেয়েছেন। এই ধান বিক্রি করলে পাবেন ৫০০ টাকা মণ হিসাবে ৫২ হাজার টাকা। তাতে তাঁর ৩ হাজার টাকা লোকসান হবে। তার ওপর নিজেদের পরিশ্রম তো আছেই। তাই ধানের ফলন ভালো হলেও তিনি খুব হতাশ।
একই উপজেলার মাহমুদপুর গ্রামের গোলাম রব্বানী জানান, তাঁর খেতে ধান পেকেছে গত সপ্তাহেই। কিন্তু শ্রমিকের অভাবে ধান কাটতে পারছিলেন না। কয়েকজন শ্রমিক পেয়েছিলেন। তাঁরা ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা মজুরি চান। এ ছাড়া দুই বেলা খাবার, সিগারেট ও পানও দিতে হবে। এত টাকা মজুরি দিয়ে ধান কাটতে গেলে লাভ তো দূরের কথা, অনেক লোকসান গুনতে হবে। তাই শ্রমিক নেননি। বাধ্য হয়ে তিনি ও তাঁর ছেলে ধান কাটতে শুরু করেছেন।
কৃষক গোলাম রব্বানী বলেন, ‘বাজারে এত কম দাম শুনে ধান কাটতেই মন চাইছিল না। আগামীবার ধান আবাদ করব না। প্রয়োজনে মরিচ লাগাব। এত টাকা খরচ ও পরিশ্রম করে ধান লাগিয়ে পরে দেখা যায় আসলও উঠছে না। তাহলে এমন আবাদ করে কী হবে।’
ইসলামপুরের নোয়ারপাড়া গ্রামের আবদুল হালিম জানান, কোথাও শ্রমিক নেই। দু-একজনকে পাওয়া গেলেও তাঁরা চাচ্ছেন ১ হাজার টাকা করে। তিনি বলেন, ‘এক মণ ধান বিক্রি করে পাওয়া যাবে ৫০০ টাকা। দুই মণ ধানের দাম দিয়ে একজন শ্রমিক নিয়ে কী করব।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আমিনুল ইসলামও জানান, শ্রমিক–সংকট ও সর্বোচ্চ মজুরির কারণে কৃষক এবার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। শ্রমিকের মজুরির কারণে উৎপাদন খরচ ব্যাপক বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধানের দামও বাজারে কিছুটা কম। তাই আর্থিকভাবে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। তিনি বলেন, ‘কৃষিশ্রমিক সংকটের বিষয়টি মাথায় রেখেই আমরা কৃষকদের “কম্বাইন্ড হারভেস্টর” কেনার পরামর্শ দিচ্ছি। এই যন্ত্রের মাধ্যমে কৃষক ধান কেটে মাঠেই বস্তাবন্দী করতে পারবেন। তবে এর দাম ৮ থেকে ৯ লাখ টাকা। এই যন্ত্রের অবাধ ব্যবহার শুরু হলেই শ্রমিক–সংকট দূর হবে।