নকল ও নিম্নমানের মাস্ক সরবরাহের মামলায় গ্রেফতার অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী শারমিন জাহানকে তিনদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত।
শনিবার দুপুর সোয়া ১টায় তাকে আদালতে হাজির করে তিন দিনের রিমান্ড চায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
শুনানি শেষে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মইনুল ইসলাম তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টায় রাজধানীর শাহবাগ এলাকা থেকে শারমিন জাহানকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পরই তাকে ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়।
শারমিন জাহান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন-১ শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার।
গত বৃহস্পতিবার রাতে নকল ও নিম্নমানের মাস্ক সরবরাহের অভিযোগে শারমিন জাহানের বিরুদ্ধে মামলা করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়ার নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোজাফফর আহমেদ শাহবাগ থানায় মামলাটি করেন।
মামলার এজাহারে অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী শারমিন জাহানের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থাসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়।
এজাহারে বলা হয়, সরকার অনুমোদিত ডাইসিন ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালের দাখিল করা নমুনা মাস্ক তুলনামূলকভাবে ভালো উল্লেখ করায় যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী শারমিন জাহানকে মাস্ক সরবরাহের জন্য একটি কার্যাদেশ দেয়।
এরপর মোট ৪টি তারিখে এবং ৪টি লটে যথাক্রমে ১৩০০, ৪৬০, ১০০০ ও ৭০০ পিস মাস্ক সরবরাহ করে। প্রথম ও দ্বিতীয় লটে প্রদেয় মোট ১৭৬০টি মাস্কে ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়নি।
তবে তৃতীয় ও চতুর্থ লটে প্রদেয় ১০০০ ও ৭০০ পিস মাস্কে ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়। ওই মাস্কের বন্ধনী ফিতা ছিঁড়ে গেছে, মাস্কের ছাপানো লেখায় ত্রুটিপূর্ণ ইংরেজি লেখা পাওয়া গেছে।
এছাড়া আরও বিভিন্ন ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে মাস্কের মান নিম্নমানের প্রমাণিত হয়। এতে কোভিড-১৯ সম্মুখ যোদ্ধাদের জীবন মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়ে বিধায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী শারমিন জাহানকে ১৮ জুলাই কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেছে।
জবাবে শারমিন জাহান দুঃখ প্রকাশ করেছে, যা দোষ স্বীকারেরই শামিল। তাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থাসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে এজাহার দায়ের করেছে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া জানিয়েছেন, কারণ দর্শানো নোটিশে অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালের পক্ষ থেকে যা বলা হয়েছে তা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।
করোনা মহামারীতে সম্মুখ সারির যোদ্ধাদের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো ধরনের আপস নয়। এই ঘৃণ্য কাজের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আইনানুগ ব্যবস্থাসহ সব ধরনের ব্যবস্থা নেবে।
মামলা দায়ের ছাড়াও ইতোমধ্যে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে তিন কর্ম দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. জুলফিকার আহমেদ আমিন জানিয়েছেন, মোট ৪টি লটে ৩৪৬০টি মাস্ক গ্রহণ করা হয়েছে।
এরমধ্যে ত্রুটিপূর্ণ ৯৫৯টি মাস্ক ফেরত দেয়া হয়েছে। ফলে অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালের কাছ থেকে গ্রহণ করা মাস্কের সংখ্যা ২৫০১। ৭৩০ টাকা হিসাবে এর আর্থিক মূল্য ১৮ লাখ ২৫ হাজার ৭৩০ টাকা। সূত্র-যুগান্তর
মেপ্র/আরজেএম