মেহেরপুর সদর উপজেলার বুড়িপোতা ইউনিয়নের ভারত সীমান্তবর্তী নবীনগর ও খালপাড়া গ্রামে ঢোকার তিন কিলোমিটার রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। বর্ষা মৌসুমে হাঁটুসম কাদাপানি মাড়িয়ে চলতে হয় গ্রামবাসীকে। এ পথ দিয়ে কোন যানবাহন চলাচল করা দূরের কথা খালি পায়ে হেটে চলাচল করাই মুশকিল। সম্প্রতি এই রাস্তাটির ১হাজার ৫শ মিটার পাকা করণের জন্য ১ কোটি ৭ লক্ষ টাকার টেণ্ডার পাস হয়েছে।
মেহেরপুরের খান এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি পেয়েছে। গত মার্চ মাসে টেণ্ডার হলেও এখনও পর্যন্ত কাজ শুরু করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। ঠিকাদার আসলাম খান পিন্টু জানান, বর্ষা মৌসুম বলে কাজ শুরু করা হয়নি। বর্ষার প্রকোপ কমে গেলে মাস খানেকের ভিতর কাজ শুরু হবে।
রাস্তার বেহালদশার কারণে গ্রামের তরুণ-তরুণীদের বিয়েও ভেঙে যাচ্ছে। অন্য এলাকার আত্মীয়স্বজনেরাও গ্রাম দুটিতে বসবাসরত তাদের আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যায় না। ফলে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে গ্রামটির বাসিন্দারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বুড়িপোতা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) পুরোনো কার্যালয় থেকে সোজা পথ পেরিয়ে সীমান্তের ১১৫/১১৬ নম্বর মেইন পিলারের কাছাকাছি খালপাড়া নবীনগর গ্রামের অবস্থান। গ্রামের পরই ভারতের শাহপুর গ্রাম। গ্রামটিতে ঢোকার জন্য তিন কিলোমিটার দীর্ঘ চওড়া রাস্তা রয়েছে। কিন্তু রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী। বিভিন্ন সময় জনপ্রতিনিধিদের প্রতিশ্রুতি থাকলেও বাস্তবায়নে তেমন কোন উদ্যোগ নেই। ৩৭ পরিবারের ১৩৮ ভোটারের দীর্ঘদিনের অবহেলিত এই ছোট গ্রামবাসীর পাকা রাস্তা দিয়ে গ্রামে প্রবেশ যেন সপ্নের মতো।
নবীনগর বাসী আজিজুল হক জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল না থাকার কারণে ডেলিভারি রোগীসহ যে কোনো সমস্যা হলে প্রয়োজনে আমরা হাসপাতালে যেতে পারি না, এছাড়াও এই মাঠে ফসল উৎপাদন করে ঠিকমতো বাসায় পৌঁছাতে পারি না, যদিও পৌঁছাতে পারি তুলনামূলক গাড়ি ভাড়া অনেক বেশি লাগে। পার্শ্ববর্তী গ্রামের সাথে কোন প্রকার যোগাযোগের বিকল্প কোন রাস্তা নাই, একটি মাত্র রাস্তা তাও আবার বেহাল দশা।
অপর এক বাসীন্দা সেলিম জানান, রাস্তার এ বেহাল দশার কারণে আমরা ঠিকমতো চাষাবাদ করতে পারি না। এ বছর বর্ষায় আমরা যারা পাট চাষ করেছি, পাট চাষের খরচের তুলনায় পরিবহন খরচ বেশি হয়ে যাচ্ছে। প্রতি বছর ধানের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। ভোটের আগে মেম্বার, চেয়ারম্যান প্রার্থীরা রাস্তা করে দেওয়ার আশ্বাস দেয় কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার পর বাস্তব ফল পাওয়া যায় না। শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে পার্শ্ববর্তী গ্রাম নবীনগরের ছেলেমেয়েরা শিক্ষা, চিকিৎসা সবদিক থেকে বঞ্চিত। যদি যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হয় তাহলে এখান কার ছেলেমেয়েগুলো উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারবে। এই নবীনগরে কেউ অসুস্থ হলে চিকিৎসার অভাবে অকাল মৃত্যু হয়। সরকার যদি আমাদের দিকে সুদৃষ্টি দেয় তাহলে আমরা অনেক উপকৃত হব।
নবীনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম জানান, এই নবীনগর গ্রামের অনেকগুলো সমস্যা তার মধ্যে প্রধান সমস্যা যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিক্ষা, চিকিৎসা। যে সকল ছেলে মেয়ে প্রাথমিক শেষ করে মাধ্যমিকে পড়াশোনা করে নিজ গ্রামে মাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকায় অন্য গ্রামে স্কুলে পড়াশোনা করে। কিন্তু বছর ঘুরে বর্ষা শুরু হলে কাদা পানির ভিতর দিয়ে প্রায় ২-৩ কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে স্কুলে যাওয়া সম্ভব হয় না বিধায় প্রায় ছয় মাস স্কুলে যেতে পারে না। এছাড়াও স্বাস্থ্যসুবিধা থেকে তারা বঞ্চিত। বর্ষার সময় যদি কেউ অসুস্থ হয়, জরুরী প্রয়োজনে হাসপাতালে নিতে হলে তাকে খাটুলী করে কাদা পানির রাস্তা পার করতে হয়। তিনি আরও বলেন, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর কাছে বিশেষ অনুরোধ করব, যাতে খুব শীঘ্রই রাস্তার কাজটা সম্পূর্ণ করা হয়।
২নং বুড়িপোতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: শাহ্জাহান মেহেরপুর প্রতিদিনকে জানান, এলজিইডি অফিস থেকে তথ্য পেয়েছি বাড়িবাঁকা-নবীনগর ৩ কিলোমিটার রাস্তার ১৫০০ মিটার টেণ্ডার পাস হয়েছে। উক্ত রাস্তার ঠিকাদার নিযুক্ত হয়েছেন আসলাম খান পিন্টু। বাংলাদেশ সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন আশ্বাস দিয়েছেন অবশিষ্ট অংশটুকু আগামী অর্থবছরে সম্পন্ন করা হবে। আমি আশা রাখছি এই সড়কের কাজ সম্পন্ন হলে বাড়িবাঁকা, নবীনগর চাষীরা তাদের কৃষি পণ্য শহরে নিতে পারবে এবং ন্যায্য মূল্য পাবে।
রাস্তার নির্মাণের কাজ কবে নাগাদ শুরু হবে জানতে চাইলে মেহেরপুর এলজিইডি’র উপ সহকারী প্রকৌশলী আব্দুর রহমান চৌধুরী বলেন, ১৯-২০ অর্থ বছরের মার্চ মাসে এটি টেণ্ডার হয়। বর্ষা সিজনের কারণে কাজ শুরু করা যায়নি। তবে খুব শিঘ্রই কাজ শুরু হবে।