বাগবুল ইসলাম বাবলু। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীনের বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা পরবর্তী ছিলো বৈরী সময়, ঘর, প্রতিকুল পরিস্থিতি। তবুও তিনি কাজ করেছেন এলাকার জন্য। বিশেষ করে শিক্ষা বিস্তারে তার অবদান অনস্বীকার্য। বাগবুল ইসলাম বাবলুকে নানা অভিধায় মানুষ চিনতো, জানতো। বাবলু বাহিনী প্রধানের তকমা জুটেছিলো। শ্রেণিশত্রু ক্ষতমের অপরাজনীতিতেও জড়িয়েছিলেন। মূলত তার বিরোধী বাহিনী রোধ করার প্রয়োজনে। এর ওপরেও সবকিছু ছাপিয়ে তার মানবিক গুণাবলী বিকাশ হয়েছিলো কিছু মহৎ কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে।
জাসদের গণবাহিণীর রাজনীতিতে বাবলু স্থানীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন। পরে ৯০ দশকে স্বাভাবিক রাজনীতিতে এসে মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার মহাজনপুর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে অংশ নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে সন্ত্রাস কবলীত জনপদে পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির উৎপাত প্রতিরোধে তিনি ওয়ার্কার্স পার্টিতে সম্পৃক্ত হন। এলাকায় সশস্ত্র্র বাহিনী গড়ে তোলেন। পেছন থেকে স্থানীয় প্রশাসন তাকে সহযোগিতা করেন। দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে তখন একটি আতংকিত নাম হয়ে ওঠে বাগবুল ইসলাম বাবলু। ৯৬এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে তৎকালীন স্বরাস্ট্র মন্ত্রীর কাছে অস্ত্র জমা দিয়ে ফের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসে স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হন। এবং দু‘বার তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
বাগবুল ইসলাম বাবলু ২০০২ সালের আজকের দিনে (১৩ মার্চ) মেহেরপুর শহরে ভাড়া বাড়িতে প্রতিপক্ষের গুলিতে খুন হন। বাগবুল ইসলাম এই দ্বন্দ্ববিক্ষুব্ধ অঞ্চলে এবং ভয়াল পরিস্থিতির মধ্যেও মহাজনপুর কলেজসহ একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন। যা চিরকাল তার স্মৃতিসংরক্ষণ করবে। তার ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তায় তাকে তার বিরোধীপক্ষের রোষানলে ফেলেছিলো। তিনি মহাজনপুর ইউনিয়ন পরিষদে দু‘বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবেই তিনি জনহিতকর নানা কাজ সম্পাদন করেছিলেন।
মহাজনপুর কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শামীম জাহাঙ্গীর সেন্টু বাবলু প্রসঙ্গে বলেন- এলাকায় শিক্ষা বিস্তারে তিনি উদ্যোগি হয়েছিলেন এই অর্থেই যে- শিক্ষিত জনগোষ্ঠি একদিন এলাকায় সর্বপ্রকার নেতিবাচক রাজনীতিকে প্রতিহত করে এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় ব্রতী হবেন। তিনি কতটুকু করতে সক্ষম হয়েছিলেন এলাকাবাসী চিরকাল স্মরণে রাখবে। তার শূন্যতায় এখন এলাকার মানুষ তার অভাব মর্মে মর্মে অনুভব করছে। তার প্রতিষ্ঠিত মহাজনপুর কলেজ, কোমরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মহাজনপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি মাদ্রাসা থেকে সন্ত্রাস কবলিত, জেলার অজ পাড়া গাঁয়ের মানুষ সু‘শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে।
শিক্ষকরা হচ্ছে মানুষ গড়ার কারিগর। শিক্ষক ছাড়া উন্নত সমাজ ও উজ্জল জীবন কল্পনাতীত। সমাজের একজন বিপথগামি মানুষ বাবলু সমাজ পরিবর্তনে শিক্ষার প্রয়োজন অনুভব করেছিলেন তা গবেষণার বিষয় বৈ কী।