শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা প্রদর্শনসহ নানা আয়োজনে কুষ্টিয়া মুক্ত দিবস পালিত হয়েছে।
রবিবার (১১ ডিসেম্বর) সকালে কুষ্টিয়া কালেক্ট্ররেট চত্বরে কেন্দ্রীয় স্মৃতিস্তম্ভে শহীদদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন।
পরে মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এরপর জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা ও মুক্তিযুদ্ধের পতাকা উত্তোলন শেষে শহীদদের মাগফেরাত কামনায় দোয়া করা হয়। পরে সেখান থেকে র্যালি বের হয়।
র্যালিটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ের সামনে আলোচনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলামের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার খায়রুল আলম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক আরিফুজ্জামান, মুক্তি যোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী রফিকুল আলম টুকু, জিপি এ্যাড. আসম আক্তারুজ্জামান মাসুম, কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আনিসুজ্জামান ডাবলু, কুষ্টিয়া সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আলহাজ্ব রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব প্রমুখ।
পরে সন্ধ্যায় কুষ্টিয়া মুক্ত দিবস উপলক্ষে জেলা শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে শিল্পকলা মিলনায়তনে কবিতা আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালের এইদিনে মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার কুষ্টিয়া জেলা শত্রুমুক্ত হয়। ২৫ মার্চ কালো রাতে মেজর শোয়েব’র অধিনায়কত্বে এবং ক্যাপ্টেন শাকিল, ক্যাপ্টেন সামাদ ও লে. আতাউল্লাহর উপ-অধিনায়কত্বে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ২৭ বেলুচ রেজিমেন্ট এ কোম্পানির ২১৬ জন সদস্য যশোর সেনানিবাস থেকে কুষ্টিয়ায় এসে কয়েক খণ্ডে বিভক্ত হয়ে পুলিশ লাইন, জিলা স্কুল, টেলিগ্রাফ অফিস, সদর থানা ও আড়ুয়াপাড়া ওয়ারলেস অফিসে অবস্থান নেন। তারা দু’একটি ছাড়া শহরের সব টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দেয় এবং ২৬ মার্চ শহরে একনাগাড়ে ৩০ ঘণ্টার জন্য কারফিউ জারি করে ও সশস্ত্র টহল দিতে থাকে। তবে কুষ্টিয়ার মানুষ কারফিউ ভঙ্গ করে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে এবং সেনা চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টির উদ্দেশ্যে রাস্তায় ব্যারিকেড দেওয়াসহ বিভিন্নভাবে প্রতিবাদ জানাতে থাকে। এ সময় রনি রহমানসহ বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সেনার গুলিতে প্রাণ হারান। কুষ্টিয়ার মুক্তিযুদ্ধে রনি রহমান প্রথম শহীদ। এরপর দীর্ঘ ৯ মাসে কুষ্টিয়ায় ছোট বড় অনেকগুলি যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
ডিসেম্বর থেকে পাকিস্তানি সেনা খেদাও স্লোগানে মুক্তিযোদ্ধা সেনা ঘাঁটিগুলোয় আক্রমন শুরু করে। ১০ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনী ভুল তথ্যের ভিত্তিতে ঝিনাইদহ থেকে ট্যাংক বহর নিয়ে কুষ্টিয়া শহরে প্রবেশ করেই পাকিস্তানি বাহিনীর অ্যামবুশের মুখে পড়লে শুরু হয় যুদ্ধ। আর এটাই ছিল হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মিত্রবাহিনীর সম্মুখ ট্যাংক যুদ্ধ। এখানে মৃত্যু ঘটে ২ শতাধিক মিত্র সৈনিকের। শুরু হয় মিত্র বাহিনীর বিমান হামলা। বিধ্বস্ত হয় পাকিস্তানি হানাদারদের দুর্গ। এ লড়াইয়ে যোগ দেয় মুক্তিযোদ্ধাসহ জেলার সাধারণ মানুষ। তোপের মুখে ১১ ডিসেম্বর প্রত্যুষে পালিয়ে যায় পাকিস্তানি বাহিনী। মুক্ত হয় কুষ্টিয়া।
চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের ৫ দিন আগেই এ জেলার জনগণ বিজয় নিশানা দেখতে পেয়েছিল। স্বজনের গলিত মরদেহ, কঙ্কাল, গণকবর আর সম্ভ্রম হারানো মা-বোনের আর্তনাদ ভুলে সেদিন বিজয়ের আনন্দে মানুষ রাস্তায় নেমে উল্লাস করেছিল।