কুষ্টিয়ায় নারীর প্রতি সহিংসতা ও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম।
কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন ও মহিলা অধিদফতরের যৌথ আয়োজনে সভায় পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন করেন, কুষ্টিয়া মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের উপ-পরিচালক নুরে সফুরা ফেরদৌস।
মতবিনিময় সভায় বক্তৃতাকালে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, বাল্যবিবাহ একটি সামাজিক অপরাধ। বাল্যবিবাহ যখন হয়, তখন তা একটি পরিবার থেকেই হয়। তাই বাল্যবিবাহ নিজেদের পরিবারেই প্রথম রোধ করতে হবে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সকল প্রকার সামাজিক বাধাসমূহ রোধ করা সম্ভব।
তিনি বলেন, বিজ্ঞানসম্মতভাবে চিন্তা করলে দেখা যায়, বারো বছরের একটা মেয়ে সন্তান নেওয়ার শারীরিক অবস্থায় থাকে না। শারীরিক জটিলতায় ভুগতে হয়। আজ এখানে আমরা যারা আছি, সবাই এই শিক্ষা নিই, আঠারো বছরের নিচে কোনো মেয়েকে বিয়ে দেব না এবং আমাদের প্রতিবেশি ও আত্মীয়-স্বজনদেরকে এই বিষয়ে বুঝাব।
জেলা প্রশাসক বলেন, ইভটিজিংও ঘর থেকেই শুরু হয়। এর কারণ হল, একজন নারীকে যখন অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়া হয় তখন সে ফ্যামিলির সব বিষয় একা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। স্বামীর নির্যাতনের শিকার হয়, পরিবারের বাচ্চারা তা দেখে দেখে শিখে। তখন ছেলে সন্তানেরা মনে করে এভাবে বউকে নির্যাতন করতে হয়, মেয়েরা মনে করে বিয়ের পরে তাদের হয়তো এভাবেই নির্যাতন সহ্য করতে হয়। তখন দায়ভার আমাদের সবার ওপরই পড়ে।
তিনি বলেন, প্রত্যেকটি পরিবারেই ছেলে-মেয়েদেরকে শিক্ষা দিতে হবে কিভাবে নারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হয়। কিভাবে নারীর সঙ্গে আচরণ করতে হয়।
তিনি আরও বলেন, ২০৪১ সালে আমরা একটি উন্নত দেশে যেতে চাই। সরকার সে লক্ষ্যে কাজ করছে। বর্তমান সরকার নারীবান্ধব সরকার। নারীদের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আমাদেরকেও বাল্যবিবাহ রোধে এগিয়ে আসতে হবে। এসময় তিনি এলাকার মসজিদের ইমামগণেেক বাল্যবিবাহ রোধ করতে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানান।
মুক্ত আলোচনায় বক্তব্য রাখেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শারমিন আক্তার, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মৃণাল কান্তি দে, কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান, জিপি এ্যাড, আসম আক্তারুজ্জামান মাসুম, ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীনেশ সরকার, দৌলতপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এজাজ আহম্মেদ মামুন, জেলা শিক্ষা অফিসার জায়েদুর রহমান, শিশু একাডেমীর কর্মকর্তা মখলেছুর রহমান, কুষ্টিয়া সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব, আফসার উদ্দিন গার্লস ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হাফেজ মোঃ আব্দুল করিম, কুষ্টিয়া সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহা: মোজাম্মেল হকসহ সংশ্লিষ্টরা।
মতবিনিময় সভায় নারীর প্রতি সহিংসতা ও বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ কল্পে বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বক্তারা বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে সরকারের ৯৯৯ কল সেন্টার সার্বক্ষণিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। নারীর সম্মান, অধিকার নিশ্চিত করতে আমাদের প্রত্যেককে নিজ নিজ পর্যায় থেকে কাজ করতে হবে। সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জোরদার করতে হবে।
এছাড়াও উপস্থিত বক্তারা আরো বলেন, নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে সমাজকে এগিয়ে নিতে পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সামাজিক সচেতনতার বিকল্প নেই। নারীর নীরবতার সুযোগ নিয়েই নির্যাতনের পরিধি বাড়ছে সমাজজুড়ে। নারী-পুরুষনির্বিশেষে সামাজিক সচেতনতা তৈরির মাধ্যমে, কর্মক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদের মাধ্যমে নারীর প্রতি সহিংসতা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব বলে জানা উপস্থিত বক্তারা।