কিশোরগঞ্জ ও শরিয়তপুর টিটিসির পর মেহেরপুর কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (টিটিসি)তে রাতের আধারে দুঃসাহসিক চুরির ঘটনা ঘটেছে।
টিটিসির ৭৫টি কম্পিউটারের র্যাম, প্রসেসর এবং একটি ল্যাপটপ চুরি হয়েছে। যেগুলোর আনুমানিক মূল্য ১৪ লাখ টাকা।
একই কক্ষে মূল্যবান দুটি প্রিন্টার ও দুটি প্রজেক্টর থাকলেও সেগুলো অক্ষত রয়েছে। চুরি হওয়া পাঁচ দিন পার হলেও এখন পর্যন্ত চোর শনাক্তের কোন অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। ফলে পরবর্তিতে একের পর এক টিটিসি গুলো এভাবেই চুরির কবলে পড়ে সরকারি সম্পদ খোয়া যাবে এমন আশংকা থেকেই যাচ্ছে।
তিনটি জেলার টিটিসিতে একই কায়দায় চুরির ঘটনা ঘটেছে। ফলে পুলিশের ধারণা সারাদেশে একই চক্র এই চুরির ঘটনা ঘটাচ্ছে। সিসিটিভির ফুটেজ ও চুরির ধরন দেখে মনে হচ্ছে সারা দেশের টিটিসি গুলোই তাদের টার্গেট।
রবিবার দিবাগত রাত ১টা থেকে সাড়ে ৩টার মধ্যে দুটি ট্রেডের তালা ভেঙে এ চুরির ঘটনা ঘটেছে। তবে কারা এর সাথে জড়িত এ বিষয়ে নিশ্চিৎ করা না গেলেও চোররা যে কম্পিউটার বিষয়ে পারদর্শি তাতে সন্দেহ নেই দাবি পুলিশের।
সরকারি ভবনে এতো বড় চুরির ঘটনায় জনমনে নানা প্রশ্ন উঠেছে। লাখ লাখ টাকার যন্ত্রপাতির কোন সুরক্ষা থাকেনা সরকারি অফিসে।
এ দায় কার প্রশ্ন সাধারণ জনগণের। ২.০২ একরের বিশাল ক্যাম্পাসে পাঁচটি ভবনে মাত্র একজন নিরাপত্তা কর্মী দিয়ে নিরাপত্তার কাজ করা হচ্ছে যা কখনোই নিরাপত্ত দেওয়া সম্ভব নয়।
নিরাপত্তা ব্যবস্থার জোরদার না করলে এ ধরণের ঘটনা বারবার ঘটতে থাকবে।
এদিকে চুরি হওয়ার পর থেকে শুধুমাত্র তত্তি¡য় ক্লাস গুলো হচ্ছে কোন ধরণের ব্যবহারিক ক্লাস হচ্ছে না। ফলে শিক্ষার্থীরাও বিপাকে পড়েছেন। তাদের মধ্যেও উৎকন্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে।
টিটিসির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম জানান, প্রতিদিনের ন্যায় রাত ১২টা পর্যন্ত আমি জেগে ছিলাম। এর পর ঘুমিয়ে যায়। সকালে অফিসে চুরির খবর পেয়ে কম্পিউটার রুমে গিয়ে দেখি দুটি কক্ষের তালা ভাঙা।
ভিতরে প্রবেশ করার পর চোখে পড়ে কম্পিউটারের সিপিইউ গুলো খোলা অবস্থায় পড়ে আছে। সেগুলো থেকে র্যাম, প্রসেসর গুলো চুরি করা হয়েছে। এছাড়া একটি ল্যাপটপও চুরি হয়েছে। সিসি ক্যামেরার সময় অনুযায়ী রাত ১ টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ঘটনাটি ঘটেছে।
চুরির খবর পুলিশকে জানানো হলে পুলিশের একটি দল এসে চুরির আলামত সংগ্রহ করে এবং চুরি যাওয়া কক্ষ দুটি তাদের হেফাজতে নিয়েছে বলে তিনি জানান।
মেহেরপুর সদর থানার ওসি শাহ দারা খান জানান, সিসিটিভির ফুটেজ ও চুরির ধরণ দেখে মনে হচ্ছে অন্যান্য টিটিসির চুরির সাথে এই চুরির মিল রয়েছে।
পুলিশ সুপার এস এম মুরাদ আলী জানান, একই ভাবে এর আগে কিশোরগঞ্জ ও শরিয়তপুর টিটিসি তে চুরি হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। ওই দুই স্থানের চুরির সাথে এই চুরির যথেষ্ট মিল রয়েছে।
পরিদর্শক পর্যায়ের একজন গোয়েন্দা অফিসারকে তদন্তের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত শেষ হলেই বিস্তারিত জানা যাবে। তবে মেহেরপুর টিটিসির নিরাপত্তা ব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্বল।
মেহেরপুর জেলা প্রশাসক মো: আতাউল গনি জানান, চুরির ঘটনার পরই টিটিসির নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হয়েছে। এ ধরণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দিয়ে প্রতিষ্ঠান নিরাপদ করা সম্ভব না।
নিজেস্ব প্রতিবেদক