গত পাঁচ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গণতন্ত্রের সূচক শুধু বেড়েছে। কখনও একসঙ্গে আট ধাপ, আবার কখনও চার ধাপ করে এগিয়ে গেছে গণতন্ত্রের সূচক। যুক্তরাজ্যের লন্ডনভিত্তিক দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) গত পাঁচ বছরের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
২০১৮ সাল থেকে প্রতিবছর গণতন্ত্রের সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি হয়েছে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ৮৮তম, ২০১৯ সালে ৮০তম, ২০২০ সালে ৭৬তম, ২০২১ সালে ৭৫তম ও ২০২২ সালে ৭৩তম স্থানে উন্নীত হয়েছে।
ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয় বারের মতো সরকার গঠন করে। পরবর্তী বছর ২০১৮ সালের প্রতিবেদন প্রকাশ করে ইআইইউ। সেখানে বলা হয়, আগের বছরের তুলনায় চার ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের সূচক। ১৬৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৮৮তম অবস্থানে রয়েছে। পাঁচটি মানদণ্ডে ২০১৮ সালের পরিস্থিতি বিচারে বাংলাদেশের স্কোর ৫ দশমিক ৫৭। আগের বছর ২০১৭ সালে পরিস্থিতি বিচারে ৫ দশমিক ৪৩ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৯২তম।
ইআইইউ প্রতিটি দেশকে গণতন্ত্র সূচক পরিমাপ করতে পাঁচটি মানদণ্ড ব্যবহার করে। সেগুলো হলো – নির্বাচনী ব্যবস্থা ও বহুদলীয় অবস্থান, নাগরিক অধিকার, সরকারে সক্রিয়তা, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ, এবং রাজনৈতিক অংশগ্রহণ।
এই হিসেব অনুযায়ী, একটি দেশকে ‘পূর্ণ গণতান্ত্রিক’ অবস্থায় যেতে হলে গণতান্ত্রিক সূচকে ৯ থেকে ১০ স্কোর করতে হয়। যেসব দেশের স্কোর ৭ থেকে ৮ সেসব দেশকে ‘ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র’ বলা হয়। তবে এর নিচের অবস্থান ‘হাইব্রিড রেজিম’-এ তালিকাভুক্ত দেশগুলোর স্কোর ৫ থেকে ৬ এবং ‘স্বৈরতান্ত্রিক’ দেশগুলোর স্কোর ০ থেকে ৪ এর মধ্যে হয়ে থাকে।
২০১৯ সালের প্রতিবেদনে আট ধাপ উন্নতি করে বাংলাদেশ। আট ধাপ অগ্রগতি হলেও বাংলাদেশকে আগেরবারের মতো ‘হাইব্রিড শাসনব্যবস্থার’ বিভাগে রাখা হয়। সেসময় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারত ও শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশের আগে অবস্থান করলেও আগের বারের তুলনায় ভারতের অবস্থান নেমে যায় ১০ ধাপ।
এরপরের বছর গণতন্ত্র সুচকে আরও দুই ধাপ উন্নতি করে বাংলাদেশ। ২০২০ ও ২০২১ সালে ৫ দশমিক ৯৯ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে যথাক্রমে ৭৬ ও ৭৫তম অবস্থানে ছিল।
বিশ্বে গণতন্ত্র সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ৭৩তম। দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ৭ দশমিক ০৪ স্কোর নিয়ে সবার ওপরে আছে ভারত। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে শ্রীলঙ্কা। দেশটির স্কোর ৬ দশমিক ৪৭। বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। চতুর্থ অবস্থানে ভুটান, পঞ্চম অবস্থানে নেপাল ও ষষ্ঠ অবস্থানে আছে পাকিস্তান।
গণতন্ত্র সূচক ২০২২-এ বাংলাদেশের অগ্রগতি প্রসঙ্গে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপি সংসদ বর্জন, সংসদ থেকে পদত্যাগের মতো অপরাজনীতি না করলে বিশ্ব গণতন্ত্র সূচকে বাংলাদেশের আরও উন্নতি হতো। প্রকৃতপক্ষে গত ৫ বছরের প্রতিবছরই গণতন্ত্র সূচকে ধারাবাহিক ভাবে বাংলাদেশের অগ্রগতি হয়েছে। বিএনপির নেতারা, তাদের সমমনা নেতারা এবং কিছু কিছু বুদ্ধিজীবী ক্রমাগতভাবে বলে আসছে, টিভির পর্দা ও জনসভা গরম করছে এবং জনগণকে বিভ্রান্ত করা অপচেষ্টা করছে দেশে গণতন্ত্র নেই বলে। অথচ গত পাঁচ বছর ধরে বাংলাদেশ গণতন্ত্র সূচকে ক্রমাগত অগ্রগতি করছে। এতেই প্রমাণিত হয় বিএনপিসহ অন্যান্য দল বা ব্যক্তি বিশেষ বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে এবং গণতন্ত্র নাই বলে যে ধোয়া তোলা এগুলো যে মিথ্যা ও অসাড় সেটাই প্রমাণ করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত পক্ষে বাংলাদেশের গণতন্ত্র আরও সংহত হতো। গণতন্ত্রকে দৃঢ় ও সংহত করার দায়িত্ব শুধু সকারের একার নয়। সবার সম্মিলিত দায়িত্ব হচ্ছে গণতন্ত্র সংহত করা। সেটা সব রাজনৈতিক দল, সরকারি দল, বিরোধীদলের দায়িত্ব। সে সরকারের থাকুক বা না থাকুক। বাংলাদেশ গণতন্ত্র আরও সংহত হতো। আরও অগ্রগতি করতো, কয়েক ধাপ উন্নীত হতো। যদি বিএনপির অপরাজনীতি না থাকতো। সংসদ বর্জন, সংসদ থেকে পদত্যাগ- এই অপরাজনীতি যদি না থাকতো গণতন্ত্র সূচকে বাংলাদেশ আরও বহু ধাপ এগিয়ে যেতে পারতো। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের যে চর্চা হচ্ছে, রীতিনীতির চর্চা হচ্ছে সেটার বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে গণতন্ত্র সুচকের এই প্রতিবেদন।’