বিয়ে কিম্বা কোন অনুষ্ঠানাদিতে পান না দিলে যেন তা পূর্ণতা পায়না। বাঙ্গালী জাতির পান দিয়ে আপ্যায়ন একটি পুরাতন অভ্যাস। প্রচলন আছে ধান, কলা, আর পান হরিণাকুণ্ডুর প্রাণ, কিন্তু এবছর পানের দামে ধ্বস নামায়, বিপাকে পড়েছে উপজেলার পান চাষীরা।
চাষীরাদের লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে উৎপাদন করতে হয় পান। আর সেই পান বিক্রয় করতে হচ্ছে পানির দরে, হারিয়ে যাচ্ছে প্রাণের ফসল পান। ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে না পারায় পান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে চাষীরা।
জানা যায় এক সময়ে এই পান উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ, ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠিয়ে প্রচুর আয় করতো ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার চাষীরা। বড় সাইজের যে পান বিক্রি হতো প্রতি বিরা বা পোন ১০০ থেকে ১১০ টাকা, সেই পান এখন বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৪০ টাকা দরে। এছাড়াও ছোট সাইজের পান বিক্রি হচ্ছে আট-দশ টাকা থেকে পনের-ষোল টাকা দরে, পানের বাজারের এই বিপর্যায়ের সাথে রয়েছে বিভিন্ন কিটনাশক, বাঁশ, বিছালি ও শ্রমিকের বাড়তি মুজুরী। ব্যাপক লোকসান গুনে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন কৃষকেরা।
উপজেলার বড় পানবাজার ভবানীপুর, জোড়াদাহ, শাখারিদাহ, হরিণাকুণ্ডু আমের চারা, এসব বাজারে সরজমিনে গিয়ে চাষীদের সাথে কথা বললে দেখা গেছে একরাশ হতাশা। স্থানীয় বাজারগুলোতে এক সময়কার চাষীদের চোখে ছিলো রঙ্গিন স্বপ্ন। বেচা কেনা হতো পঁচিশ ত্রিশ লাখ টাকার পান। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হই হুল্লোড় করে ছূটে আসতো পাইকারি ক্রেতা বিক্রেতারা। কিন্তু এখন পানের নায্য মুল্য না পাওয়াই বহন করে আনার ভাড়াও জুটছে না চাষীদের। উপজেলার তৈলটুপী, জোড়াদাহ, ভেড়াখালী, হরিণাকুণ্ডু, পার্বতীপুর, দখলপুর, দৌলৎপুর, কেষ্টপুরের পান বরজের মালিকেরা জানালেন চরম লোকসানের কথা।
আড়ৎদার ভবানীপুর পান বাজারের সভাপতি কাসেম মিয়া জানান, আমি দীর্ঘদিন ধরে পান ব্যবসার সাথে জড়িত, বর্তমানে পানের দাম খুবই কম। অর্ধেক দামে বিক্রয় করতে হচ্ছে পান, চার শত টাকা জনের দাম, এক আটি মুটির দাম পাঁচ শত টাকা, ওয়াসীর দাম সাত শত, বিছালির দাম সাত শত টাকায় কিনতে হয়। বাজার মন্দা থাকায় পান চাষী এবং ব্যবসায়ীরা ব্যাপক লোকসানের মধ্যে রয়েছে।
হরিণাকুণ্ডু কৃষি কর্মকর্তা শহীদ মোহাম্মদ তিতুমীর জানান, উপজেলার প্রায় ১হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়। পান চাষীরা কোন ধরণের কারিগরি পরামর্শ চাইলে তা কৃষি অফিস কি ধরণের ব্যবস্থা নিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পান চাষিদের চাহিদা অনুযায়ী সকল ধরনের পরামর্শ প্রদান, মাঠ পরিদর্শন পূর্বক সঠিক পরামর্শ দেওয়া হয়। নিরাপদ বাজারজাত করণযোগ্য পান উৎপাদনে সকল পরামর্শ প্রদান করে নতুন চাষিদের আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে পান চাষে সকল পরামর্শ প্রদান করা হয়ে থাকে। পানের প্রধান সমস্যা পঁচা রোগ নিয়ন্ত্রণে বোর্দো মিশ্রণ তৈরি করা এবং তা সঠিক মাত্রায় ব্যবহারের পরামর্শ প্রদান করে থাকি। তবে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ও পানের আধুনিক জাতের অভাবের কথা জানান তিনি।