মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার মোনাখালী গ্রামের রনজিৎ আলী শেখ এর ছেলে সাইফুল ইসলাম(৩৩)। মুজিবনগর থানা পুলিশের তৎপরতায় সাইফুল ইসলামকে ফিরে পেল তার পরিবার।
গরীব পরিবােেরর কষ্ট ঘুচানোর জন্যে ২০১৭ সালে ঢাকার ইউনিক কোম্পানির মাধ্যেমে চুক্তি ভিত্তিক ২ বছরের ভিসা নিয়ে চাকরির জন্য ইরাকে যায় সাইফুল। সেখানে হানুয়া নামের একটি কোম্পানিতে চাকরি শুরু করে। যা বেতন পেত তাই দিয়ে বেশ চলতো তাদের। ভেবেছিলো তাদের দুঃখটা হয়তো বা এ বার মোচন করতে পারবে সাইফুল। কিন্তু এ আশা তার আর পূরন হলো না। কষ্ট কষ্টই থেকে গেলো। ২০১৯ সালের দিকে ভিসার মেয়াদ শেষ হবার পর শুর হলো জিবন মরনের প্রশ্ন।
সাইফুল আরেকটি চাকরির জন্যে পরে গেলো ইরাকের কিছু অসাধু দালালের চক্ররে। উন্নত চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে হানুয়া কোম্পানি থেকে চলে আসতে বলে সাইফুলকে। দালাদের কথায় উন্নত চাকরির আশায় অবুঝের মত হানুয়া কোম্পানি থেকে চলে আসে সাইফুল। পরে সাইফুল দালালদের কাছে আসলে তারা সাইফুলকে ইরাকে তাদের গোপন স্থানে আটকে রাখে। শুরু হয় তার প্রতি চরম নির্যাতন। সাইফুলের মুক্তিপনের জন্যে তার বাবা মার কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। টাকা পাঠানোর জন্য ফরিদপুর জেলার, নগরগান্দা উপজেলার চুকাইল গ্রামের আব্দুল্লা ব্যাপারি নামের এক বিকাশ এজেন্ট মালিকের কাছ থেকে ৫ টি বিকাশ নাম্বার সাইফুলের পরিবারের কাছে দিয়ে বিভিন্ন ধাপে টাকা পাঠাতে বলে। ছেলেকে বাঁচানোর জন্য তাদের কথা মত ৬৫ হাজার টাকা বিকাশ করে সাইফুলের পরিবার। কিন্তু এতেও তাদের দাবি পূরণ হয়নি। তাদের কাছে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিতে থাকে দালাল চক্রের সদস্যরা। পুরো টাকা না দিলে সাইফুলকে খুন করে ফেলবে। পরে সাইফুলের পরিবার আর কোন পথ খুজে না পেয়ে চলে আসে মুজিবনগর থানায়।
মুজিবনগর থানা অফিসার ইনচার্জ আব্দুল হাশেমের কাছে বিষয়টা খুলে বলেন। সাইফুলের পরিবারের এমন করুন কাহিনি শোনার পর মুজিবনগর থানায় একটি মামলা নিয়ে নেন। মামলা পর শুরু করে পুলিশের তৎপরতা।
দীর্ঘদিন ধরে তাদের অভিযান চালানোর পর বাহির করেন ৫টি বিকাশ মোবাইল নাম্বারের এজেন্ট মালিককে। জানতে পারেন এজেন্ট মালিক আসামির বাসা ফরিদপুর জেলায়। পরে পুলিশ চলে যায় সেখানে। জানতে পারেন আসল কাহিনি। খোজ চালানো শুরু করেন ইরাকে। দালাল চক্রের সদস্যেরা সকল ঘটনা জানতে পেরে তাদের জীবন বাঁচানোর জন্যে সাইফুলকে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।
পরে এ দিকে পুলিশ আসামি ফরিদপুর জেলার, নগরকান্দা উপজেলার চুকাইল গ্রামের আব্দুল ব্যাপারিকে গ্রেপ্তার করেন। এ দিকে সাইফুলকে উদ্ধার করে পুলিশী হেফাজতে নেয় ইরাকি পুলিশ। পরে তাদের সাথে যোগাযোগ করে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এ দিকে সাইফুল বাংলাদেশে পৌছালে গতকাল বুধবার সকালে তাকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে মুজিবনগর থানা পুলিশ।
মুজিবনগর থানার ওসি আব্দুল হাশেম জানান, সাইফুলের বাবা-মায়ের কাছে থেকে ঘটনা জানার পর থেকে তৎপরতা চালিয়ে সাইফুল কে উদ্ধার করা সম্ভব হয়।
মেপ্র/ মুজিবনগর প্রতিনিধি