সড়কের কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে মেহেরপুর সড়ক বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী শাহিন মিয়ার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গত ২৯ ফেব্রুয়ারি দুদক প্রধান কার্যালয়ের মহাপরিচালক মেহেরপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে পাঠায় দুদক। চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০২১-২২ এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের ফোর লেন প্রাক্কলন, আমঝুপি-মদনাডাঙ্গা ডাঙ্গা-শ্যামপুর সড়ক সংস্কার, গাংনী -মালশাদহ সড়ক সংস্কার, গাংনী-কাথুলী সড়ক সংস্কার কাজের বরাদ্দ ও ব্যয় তথ্য উপাত্ত চেয়ে ৭ তারিখের মধ্যে পাঠাতে বলা হয়। এদিকে, মেহেরপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে দুদকের চাহিদামত কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে।
এদিকে, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি-মদনাডাঙ্গা-শ্যামপুর সড়কে অনিয়ম করে সংস্কার কাজ শেষ হয় ২০২৩ সালের জুন মাসে। একই সড়কের অনিয়ম ঢাকতে দু তিনমাসের মাথায ওই সড়কে ফের সংস্কার কাজের দরপত্র আহবান করেছে। বিধান রয়েছে সড়ক সংস্কারের একবছর পর পুনঃসংস্কার কাজ করা যাবে। অথচ আইন উপেক্ষা করে তিনমাসের মাথ্যায় দরপত্র আহবান করা হয়েছে। যা নিয়ে কানাঘুষা চলছে সংস্কার কাজের বিলের টাকা পুরোটা গিলে খাবে সওজের কর্মকর্তা ও চুক্তিবদ্ধ ঠিকাদার।
গত জুনে শেষ হয় মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি মদনাডাঙ্গা সড়কে প্রায় ১১ হাজার মিটার রাস্তার সংস্কারের কাজ। ওই সড়ক নির্মান শেষ হবার দুই মাসের মাথায় গত ৬ আগস্ট ২০২৩ প্রাক্কলন দাখিল করে উপসহকারী প্রকৌশলী মো. শাহীন মিয়া ও উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান। প্রাক্কলনে ‘রিপিয়ারিং পটহোলস কার্পেটিং ও অয়ারিংকোর্স’, কাজের দরপত্র আহবান করে ২৮ আগস্ট ২০২৩। ৬ কোটি ৮১ লাখ টাকার এই কাজ দেয়া হয় জহুরুল লিমিটেড ও মো. আমিনুল হক লিমিটেডকে। একই দরপত্রে জেলা শহরের ওয়াবদা মোড় থেকে কালিবাড়ি পর্যন্ত এক কিলোমিটার রাস্তায় গত জুনে ২শ রোডস্ট্যাড, সাইন সিগনাল ও ক্যান্টিলিভার সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়। ওই একই রাস্তায় তিনমাসের মাথায় ফের ৬শ পিস রোডস্ট্যাড, ১০টি সাইন সিগনাল ও ৪টি ক্যান্টিলিভার সাইনবোর্ড স্থাপন কাজের দরপত্র আহবান করা।
এর আগে গত জুনে ওই সড়কে ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪ হাজার মিটার মেসার্স সেলিনা এন্টার প্রাইজ, ৭৪ লাখ ৮২ হাজার টাকা ব্যয়ে ৪ হাজার ৫শ মিটার মো. আমিনুল হক লিমিটেড ও ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৮শ মিটার জনি এন্টার প্রাইজ দায়সারাভাবে সংস্কার কাজ করে।
মেহেরপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. শাহিন মিয়া বলেন- আগে পিএমপি মাইনর (প্রিওডিক মেনটেন্যান্স) কাজ করা হয়েছে। এবার পিএমপি মেজর কাজ করা হচ্ছে। এই কারণেই তিনমাসের মাথায় ফের দরপত্র আহবানের মাধ্যমে কাজ করা হচ্ছে।
দুদকের চিঠির বিষয়ে মেহেরপুর সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার গোলাম মোস্তফা দুদকের চিঠির কথা স্বীকার করে বলেন, দুদক থেকে যা যা তথ্য উপাত্ত চাওয়া হয়েছিলো আমরা তাদের সকল তথ্য সরবরাহ করেছি।
দুদকের সমস্বিত কুষ্টিয়া জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, মেহেরপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী শাহিন মিয়াকে নিয়ে দুদকের একটি তদন্ত চলমান রয়েছে।
মেহেরপুর প্রতিদিনের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, উপসহকারী প্রকৌশলী শাহিন মিয়ার স্টিমেট করা অধিকাংশ প্রকল্পতে সরকারি টাকা তছরুপ করার ঘটনা ঘটেছে। যা নিয়ে মেহেরপুর প্রতিদিনে ধারাবাহিকভাবে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। মেহেরপুর প্রতিদিনের প্রকাশিত সংবাদ দুদকের গোচরীভুত হলে দুদকসহ সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে উঠেছে।