ট্যানট্যান, মামবা ও টিনডারসহ অন্তত ১৫টি ডেটিং অ্যাপসের সন্ধান পেয়েছেন গোয়েন্দারা। সুন্দরী নারীর ছবি ব্যবহার করে এসব অ্যাপসের মাধ্যমে চলছে প্রতারণা। হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে লাখ লাখ টাকা। অ্যাপসে অ্যাকাউন্ট খুলে প্রথমে বন্ধুত্ব তৈরি করা হয়। এরপর দেখা করা ও একান্তে সময় কাটানোর প্রস্তাব দেওয়া হয় পুরুষ বন্ধুকে। একথা বলে ডেকে নিয়ে করা হয় ব্ল্যাকমেইলিং। কখনও কখনও আটকে রেখে আদায় করা হয় মুক্তিপণ। এসব অ্যাপসে প্রতারিত হওয়ার সংখ্যা কম নয়। কিন্তু মান-সম্মানের কথা চিন্তা করে তাদের বেশিরভাগই আইনের আশ্রয় নিতে আগ্রহী নন। তবে একটি অভিযানে চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতারের পর মুখ খুলতে শুরু করেছেন অনেক ভুক্তভোগী। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কয়েকটি ডেটিং অ্যাপসের অর্ধশতাধিক সদস্যকে খুঁজছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম ডিভিশনের ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) জুনায়েদ আলম সরকার জানান, চক্রের সদস্যরা ডেটিং অ্যাপসের মাধ্যমে মধ্যবয়সি পুরুষদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে। পরে একান্তে সময় কাটানোর জন্য নিয়ে যায় গোপন আস্তানায়। সেখানে তাদের জিম্মি করে হাতিয়ে নেয় মোটা অঙ্কের টাকা। এক বাবা তার মেয়েকে দিয়েও এ ধরনের একটি চক্র গড়ে তুলেছে। ওই বাবার নাম আব্দুল জলিল হাওলাদার। মেয়ের নাম সোনিয়া মেহের। বাবা-মেয়ের চক্রটি এ পর্যন্ত ১৫ থেকে ২০ জনকে জিম্মি করে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। মেহের-জলিল ছাড়াও গ্রেফতার করা হয়েছে এ চক্রের সদস্য ইউসুফ মোল্লাকে। আরও যাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে তাদের মধ্যে আছে-মামুন, রাজু, বিথী, মিথিলা প্রমুখ।
এ অ্যাপস চক্রের সন্ধান কীভাবে পেলেন জানতে চাইলে ডিবি কর্মকর্তা বলেন, ট্যানট্যান নামের আ্যাপসের মাধ্যমে সোনিয়া মেহের নামের এক নারীর সঙ্গে পরিচয় হয় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আরিফ হোসেনের। দীর্ঘদিন হোয়াটসঅ্যাপসে কথা বলেন তারা। একপর্যায়ে নিরিবিলি সময় কাটানোর জন্য আরিফকে ডেকে যাত্রবাড়ীর একটি ফ্ল্যাটে নেন ১৮ বছরের তরুণী মেহের। সেখানে আগে থেকেই ওতপেতে ছিল চক্রের অন্য সদস্যরা। আরিফ ওই ফ্ল্যাটে যাওয়ার পর আপত্তিকর ছবি তোলা হয়। তৈরি করা হয় অশালীন ভিডিও। এরপর আরিফকে আটকে রেখে দাবি করা হয় ৪০ লাখ টাকা। তাৎক্ষণিক কিছু টাকা দেন আরিফ। বাকি টাকা পরে দেওয়ার শর্তে মুক্তি পান তিনি। এরপর থানায় গিয়ে ঘটনা তুলে ধরে মামলা করেন। ২৮ ডিসেম্বর করা ওই মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম ডিভিশনের ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম।
গ্রেফতার মেহেরের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি। তার কাছ থেকে ৪টি মোবাইল ফোন সেট ও ৮টি সিম কার্ড উদ্ধার করেছে ডিবি। মেহের ডিবিকে জানায়, অপকর্মের জন্য শনিরআখড়ায় তারা একটি বাসা ভাড়া নিয়েছিল। ওই বাসার ভাড়ার টাকাও দেওয়া হতো জিম্মি করে পাওয়া অর্থ থেকে। তারা একটি গাড়ি ভাড়া করেছিল। পুলিশ পরিচয়ে তাদের সঙ্গীরা ঘুরে বেড়ায় ওই গাড়িতে করে। তার মোবাইলে একাধিক ডেটিং আ্যাপস রয়েছে। আছে ভিন্ন নামে কয়েকটি আইডি। এসব আইডি পর্যালোচনায় প্রাপ্ত তথ্যের বরাত দিয়ে ডিবি জানায়, বেশ কয়েকজন পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক আছে মেহেরের। ইতোমধ্যে যারা তার মাধ্যমে প্রতারিত হয়েছেন তাদের ব্লক করে রাখা হয়েছে। সে মাঝেমধ্যেই নিজের প্রোফাইলে অন্যের ছবি ব্যবহার করত। এর কারণ হিসাবে ডিবিকে মেহের জানায়, সুন্দরী নারীদের বয়স্ক পুরুষরা বেশি পছন্দ করে। তাই বিভিন্ন সুন্দরী নারীর ফেসবুক থেকে ছবি নিয়ে তা ডেটিং অ্যাপসের প্রোফাইলে ব্যবহার করত সে। মেহের জানায়, মানুষকে জিম্মি থেকে আদায় করা টাকার অর্ধেকের বেশি নিত মেহের ও তার বাবা। বাকি টাকা চক্রের অন্য সদস্যদের মাঝে ভাগ করে দেওয়া হতো। মূলত তারা বয়স্ক পুরুষদের টার্গেট করত। কারণ, ছাত্র বা বেকারদের কাছে বেশি টাকা থাকে না।
অন্য একটি ডেটিং অ্যাপসের প্রতারণার বিষয় তুলে ধরে ডিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, ওই অ্যাপসে একজন নারীর ছবি ব্যবহার করে প্রতারণা চলছিল। একটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওই নারীকে গ্রেফতার করে ডিবি। পরে দেখা যায়, ওই অ্যাপসের বিষয়ে কিছুই জানেন না গ্রেফতার নারী। পরে ওই নারীকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ওই অ্যাপসের মাধ্যমে প্রতারণার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের কয়েকজনকে ইতোমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে। যে কোনো সময় তাদের গ্রেফতার করা হবে।