এই বাদেম, দেশি বাদেম, চিনা বাদেম, আরও আছে ঝাল-মুড়ি, বারোভাজা। আসেন বসেন ফুইরি গেলি পাবেন না ,পরে পস্তাবেন। এভাবেই নানা কৌশলে ক্রেতাদের ডেকে গ্রামের রাস্তায় রাস্তায় বিক্রি করেন এইসব মুখোরোচক খাবার। স্কুলগুলো করোনার প্রাদুর্ভাবে বন্ধ থাকায় তিনি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে ঘুরে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এর আগে তিনি রাধাকান্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ২১ বছর ধরে ব্যবসা করেছেন।
মেহেরপুর সদর উপজেলার রাধাকান্তপুর দক্ষিণপাড়ার হাবেল উদ্দিন এর বড় ছেলে, নাম সিরাজুল ইসলাম। এলাকার লোকজন তাকে সিরাজ চাচা বলেই চেনেন। বয়সে ৫৮ পেরোলেও উচ্চতাই মাত্র ৪ ফুট। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে বিয়ে করলেও সন্তানের মুখ দেখেননি। অভাব অনটনের চেয়েও সবচেয়ে বড় আফসোস কোন সন্তান জন্ম দিতে পারেননি।
ছোট খাটো গঠনের শান্ত স্বভাবের হওয়ায় ছোট বড় সবার কাছে অত্যন্ত প্রিয় মানুষ সিরাজ। প্যাডেল করা ভ্যানের এক কোনে বসে তিনি চালিয়ে যান ক্রেতা সন্তুষ্ট করার কাজ। সিরাজ চাচার মুখোরোচক ঝালমুড়ি খেতে দূর-দূরান্ত থেকেও জোড় হয় মানুষ।
করোনার প্রাদুর্ভাবে স্কুল গুলো বন্ধ থাকায় বিভিন্ন গ্রামের মোড়ে মোড়ে বসে চালিযে যাচ্ছেন ব্যবসা। বয়সের তুলনায় কষ্ট বেশি হলেও থেমে নেই তার পথ চলা। তবে করোনার সময়ে সরকারি বিভিন্ন সাহায্য সহযোগীতা অধিকাংশের ঘরে পৌঁছালেও সিরাজ চাচার ঘরে পৌঁছাইনি কোন সাহায্য।
মেহেরপুর প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাতকারে সিরাজ বলেন, আমার গ্রামের স্কুলকে কেন্দ্র করে আমার এই ব্যবসা। শারীরিক অক্ষমতার কারণে গ্রামে গ্রামে গিয়ে ব্যবসা করতে পারি না। স্কুল চলার সময়ে প্রতি মাসে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা উপার্জন করে কোন রকমে সংসার চালায়। করোনার কারণে স্কুল প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আমি এবং আমার পরিবার অসহায়ের মতো দিন কাটাচ্ছি।
লকডাউনে মানুষ ঠিক মত বাসা থেকে বের হতে না পারায় প্রায় তিন মাস ব্যবসা বন্ধ ছিল। কোন কোন দিন একবেলা না খেয়েও কাটিয়েছি। কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়নি। ইউনিয়ন পরিষদে চাল বিতরণ, ত্রাণ বিতরণ হলেও আজ পর্যন্ত আমি পাইনি। এছাড়াও সরকারি কোনো রকম সহায়তা আমার কাছে পৌঁছায়নি। প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে অনেকেই কিন্তু এখনো পাইনি।
জীবনের শেষ প্রান্তে চলে এসেছি বাপু, আর কত দিনই বা বাঁচবো। বাকি জীবনটা বাদাম বিক্রি করেই চালিয়ে দিতে চাই, অনেকটা বেদনার সুরে বললেন সিরাজুল ইসলাম ওরফে সিরাজ চাচা। তিনি আরও বলেন, আমার কোন সন্তান নেই, ভবিষ্যতের চিন্তাও নাই। আল্লাহর কাছে দোয়া করি আমি যেন সুস্থ্য থাকতে পারি।
সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী রাবেয়া খাতুন বলেন, কাচা বাদাম গুলো আমি ভেজে দিই। এছাড়া অন্যান্য আইটেম গুলো আমি তৈরি করে দিই। সে রাস্তায় রাস্তায় বিক্রি করে।
দিন শেষে যা উপার্জন হয় তা দিয়েই চলে আমাদের ছোট্ট সংসার। অভাব অনটনের মধ্যেও দু-বেলা খেয়ে দিন পার হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সন্তান না থাকায় ভবিষ্যৎ নিয়ে দু:চিন্তা হয়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ইসমাইল হোসেন বলেন, বাদাম বিক্রেতা সিরাজুল ইসলাম কোন রকম ভাতার জন্য আমার কাছে আবেদন করেনি। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে তার কিছু করবো। সেই সাথে সিরাজুল ইসলাম এর বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে আলোচনা করে সরকারি সহায়তা করার চেষ্ট করবো।
মেহেরপুর জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুল কাদের বলেন, আগামী অক্টোবর থেকে এই ধরণের ব্যক্তীদের তালিকা তৈরি করা হবে। সিরাজুল ইসলামের নামটি তালিকাভুক্ত করে প্রনোদনার ব্যবস্থা করে দেবো।