সন্তান প্রতিবন্ধী জন্ম নেয়ায় স্ত্রীর খোঁজ রাখছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে এক স্বামীর বিরুদ্ধে। প্রতিবন্ধী সদস্য মেনে নেয়নি ওই নারীর শ্বশুরালয়ও। সন্তান প্রতিবন্ধী জন্ম নেয়ার পরই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে ওই নারীকে বাড়ি থেকে বের করে দেন তারা।
পাবনার চাটমোহর উপজেলায় ডিবিগ্রাম ইউনিয়নের কাঁটাখালী গ্রামে এ অমানবিক ঘটনা ঘটেছে।
জানা গেছে, তিন বছর আগে কাঁটাখালী গ্রামের দুলালী খাতুনকে বিয়ে করেন একই গ্রামের দিনমজুর আলামিন। দুলালী প্রতিবন্ধী শিশু জন্ম দেন। চিকিৎসক জানান, গর্ভকালীন অপুষ্টিজনিত সন্তান প্রতিবন্ধী হয়েছে। এ খবরের পরই অমানসিক নির্যাতন চলতে থাকে দুলালীর ওপর। দুলালীকে মারধর করে একসময় সন্তানসহ তাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন। ঘরহারা হয়ে দুলালী আশ্রয় নেন নিজের বাড়িতে। মেয়েকে ফেলে দিতে পারেননি মা খইচন বেওয়া। সেই থেকে তিন বছর কেটে গেলেও স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন সন্তান ও দুলালীর কোনো খোঁজ রাখেননি।
এদিকে সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন দুলালী। ছেলেকে সুস্থ করতে চাইলে ঢাকায় ভালো কোনো চিকিৎসককে দেখানোর পরামর্শ দিয়েছেন পাবনার শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. নীতিশ কুমার। কিন্তু ঢাকায় এসে থাকারই অর্থ নেই তার কাছে ।
অসুস্থ সন্তানের চিকিৎসার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সমাজের বিত্তবানদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন দুলালী। কিন্তু কোনো সহযোগিতা পাননি।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে দুলালী খাতুন যুগান্তরকে বলেন, ‘প্রতিবন্ধী সন্তান জন্ম দেয়া কি অপরাধ? মাঝেমধ্যে মনে হয়, আত্মহত্যা করি। কিন্তু ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে তা করতে পারি না। ওর বাবা (আলামিন) মুখ ফিরিয়ে নিলেও আমার জীবনটা এই ছেলের মধ্যে। আমি ছাড়া ওকে কে দেখবে?’
দুলালীর অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন আলামিনের বাবা রব্বান মোল্লা।
পরে তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘আমি ছেলেকে বের করে দিয়েছিলাম। ছেলের বউ কে নয়। তবে আমি বউমাকে ফেরানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু সে আসেনি। ছেলে এখন চট্টগ্রামে থাকে। সে আমার ফোন ধরে না। এখানে আমার করার কিছু নেই।’
ইউপি সদস্য হাফিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ‘কয়েক মাস আগে রাগের মাথায় আলামিন স্ত্রী দুলালীকে মুখে মুখে ছেড়ে দিয়েছিল। পরে আমরা গ্রামপ্রধানদের নিয়ে বসে সেটি মীমাংসা করে দিয়েছিলাম। কিন্তু পরে কী হয়েছে তা জানি না। ওরা কেউ আসেনি আমার কাছে।’
ডিবিগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ নবীর উদ্দিন মোল্লা যুগান্তরকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এমন ঘটনা হয়ে থাকলে জঘন্য অপরাধ করেছে ছেলে পক্ষ। আমি এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
স্থানীয়রা বলেন, ‘এনজিও থেকে কিস্তি নিয়ে যৌতুক হিসেবে ১০ হাজার টাকা, একটি বাইসাইকেলসহ নানা জিনিসপত্র দিয়ে দুলালীকে আলামিনের কাছে বিয়ে দেয়া হয়েছিল। এর পর একটি ব্যাটারিচালিত অটোভ্যানও কিনে দেয়া হয় আলামিনকে। বিয়ের কিছু দিন পর দুলালী ছেলেসন্তানের জন্ম দেন। নাম রাখেন দুর্জয়। জন্মের পরেই দুর্জয় অসুস্থ হলে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু মায়ের অপুষ্টির কারণে সন্তান শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েছে বলে জানান চিকিৎসক।’
সুত্র-যুগান্তর