মেহেরপুর পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের অধীনে বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে চলতি অর্থ বছর পর্যন্ত পৌর কর পাওনা রয়েছে ১ কোটি ৭২ লাখ ৯৫ হাজার ৮৯৭টাকা। এছাড়া অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকেও পৌরসভার কর পাওনা রয়েছে কয়েক কোটি টাকা। পাওনা টাকার পরিমান বেড়ে যাওয়ায় পৌরসভায় কর্মরত স্টাফদের বেতন ও পৌরসভার খরচ মেটানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। অভিযোগ রয়েছে সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রীর মৌখিক নির্দেশে পৌরসভাকে কর দেননি অনেক প্রতিষ্ঠান।
মেহেরপুর পৌরসভা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫-১৬ অর্থ বছর থেকে বর্তমান চলতি অর্থ বছর পর্যন্ত অনেক প্রতিষ্ঠান নিয়মিত কর দিচ্ছেন না। বিভিন্ন সময় কর চাইতে গেলে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করার মত সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও তোয়াক্কা করতেন না। সরকার পালাবদলের পর পৌর পরিষদ অপসারণ করা হলে স্থানীয় সরকার পরিচালককে (ডিডি এলজি) কে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে পৌরসভার প্রশাসক নিয়োগ দেয় সরকার। প্রশাসক দায়িত্ব নেওয়ার পর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করে ১ কোটি ৪৮ লাখ ৪ হাজার ৯৫৬ টাকা আদায় করেছে গত ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত। কিন্তু চলতি অর্থ বছর পর্যন্ত এখনো পাওনা রয়েছে ১ কোটি ৭২ লাখ ৯৫ হাজার ৮৯৭ টাকা।
পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, ৯টি ওয়ার্ডের অধীনে সরকারি বেসরকারি মিলে ৯৩টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেগুলো থেকে পৌর কর পেয়ে থাকে। এর মধ্যে ১ নম্বর ওয়ার্ডের অধীনে রয়েছে ১৬টি প্রতিষ্ঠান। বকেয়াসহ চলতি অর্থবছর পর্যন্ত এ প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে পাওনা রয়েছে ২৫ লাখ ৯৬ হাজার ৭৯৯ টাকা। এর মধ্যে সদর উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে নিকট পাওনা ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত ৩৩ লাখ ৯ হাজার ৬৮৪ টাকা, চলতি অর্থ বছরে পাওনা ৭৯ হাজার ৪২১ টাকা। উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তার কার্যালয়ের নিকট ২০২৩-২৪ অর্থ বছর পর্যন্ত বকেয়া ১ লাখ ২৫ হাজার ৭২৭ টাকা এবং চলতি অর্থ বছরে পাওনা ১ লাখ ৪৪ হাজার ২৩০ টাকা। উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কার্যক্রম ইরেসপো) কার্যালয়ের নিকট ২০২৩-২৪ অর্থ বছর পর্যন্ত ১ লাখ ২২ হাজার ১৮৭ টাকা এবং চলতি অর্থ বছরের পাওনা ১ লাখ ৪০ হাজার ৬৯০ টাকা।
বিএডিসির সহকারী প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে ২০২৩-২৪ অর্থ বছর পর্যন্ত বকেয়া ৭২ হাজার ৩৮৮ টাকা এবং চলতি অর্থ বছরে পাওনা ৭২ হাজার ৩৮৮ টাকা। ১ নম্বর ওয়ার্ডে পৌরসভার মোট পাওনা চলতি অর্থ বছর পর্যন্ত ২৫ লাখ ৯৬ হাজার ৭৯৯ টাকা। ২ নম্বর ওয়ার্ডের অধীনে প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৩টি। বকেয়াসহ এ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিকট পাওনা রয়েছে ৮ লাখ ৩৮ হাজার ২৮৪ টাকা। শুধুমাত্র সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের নিকট থেকে ২০২৩-২৪ অর্থ বছর পর্যন্ত বকেয়াসহ পাওনা রয়েছে ৫ লাখ ৪৮ হাজার ৫১৫ টাকা।
৩ নম্বর ওয়ার্ডের অধীনে প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৩টি। কোন বকেয়া না থাকলেও চলতি অর্থ বছরে শুধু পুলিশ সুপার সার্কেল অফিস থেকে পাওনা রয়েছে ৩৯ হাজার ৫০৫ টাকা। ৪ নম্বর ওয়ার্ডের অধীনে দুটি প্রতিষ্ঠান থাকলেও কোন বকেয়া অথবা পাওনা নেই।
৫ নম্বও ওয়র্ডেও অধীনে প্রতিষ্ঠান রয়েছে ১৪টি। এ ওয়ার্ডেও প্রতিষ্ঠাগুলোর নিকট বকেয়াসহ পাওনা রয়েছে ১৯ লাখ ৫৩ হাজার ৭৩৭ টাকা। এর মধ্যে উপজেলা কৃষি অফিসারের কার্যালয় বকেয়াসহ পাওনা রয়েছে ৭ হাজার টাকা। ছাগল ফার্ম থেকে বকেয়াসহ পাওনা রয়েছে ৩ লাখ ২৫ হাজার ১৩০ টাকা। সমন্বিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কার্যালয় থেকে বকেয়াসহ পাওনা রয়েছে ১০ লাখ ৮ হাজার ৫৮০ টাকা। কারিগরী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে বকেয়া ছিল ৩৫ লাখ ৭৯ হাজার ৫৪০ টাকা যা ইতোমধ্যে পরিশোধ কেেরছে প্রতিষ্ঠানটি।
৬ নম্বর ওয়ার্ডের অধীনে প্রতিষ্ঠান রয়েছে ১০টি। বকেয়সাসহ পাওনা রয়েছে ১০ লাখ ৪৬ হাজার ৬৪১ টাকা। এর মধ্যে বড়বাজারে অবস্থিত মেহেরপুর সরকারি কলেজের দোকান ঘর থেকে বকেয়াসহ ১ লাখ ৮ হাজার ২৩৪টাকা।
৭ নম্বর ওয়ার্ডের অধীনে প্রতিষ্ঠান রয়েছে ১১টি। প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে বকেয়াসহ চলতি অর্থ বছরে পাওনা রয়েছে ২২ লাখ ৭৩ হাজার ৬৫৮ টাকা। এর মধ্যে পুলিশ লাইন থেকে বকেয়াসহ ৫ লাখ ৫০ হাজার ৮৪৭ টাকা পাওনা রয়েছে।
৮ নম্বর ওয়ার্ডের অধীনে অফিস রয়েছে ২১টি। এর মধ্যে গণপূর্ত বিভাগের তিনটি ভবন থেকে বকেয়াসহ পাওনা রয়েছে ৫লাখ ৭৩ হাজার ৮৬০ টাকা, মেহেরপুর সরকারি কলেজ থেকে বকেয়াসহ পাওনা রয়েছে ২৮ লাখ ৯৮ হাজার ৩১০ টাকা, জেলা বীজ প্রত্যায়ন এজেন্সি থেকৈ বকেয়াসহ পাওনা রয়েছে ২ লাখ ৬৬ হাজার ৮০৪ টাকা, এসি ল্যাণ্ড অফিস থেকে ২০১৫-১৬ অথ বছর থেকে এ পর্যন্ত বকেয়াসহ পাওনা রয়েছে ৩ লাখ ২৭ হাজার ৬৪০ টাকা, পৌর তহশিল অফিসের ২০১৫-১৬ অর্থ বছর থেকে এ পর্যন্ত বকেয়াসহ পাওনা রয়েছে ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৯৭৭ টাকা, পাবলিক লাইব্রেরি থেকে বকেয়াসহ পাওনা রয়েছে ১০ লাখ ৫১ হাজার ৩৭০ টাকা, জেলা শিল্পকলা একাডেমি থেকে বকেয়াসহ পাওনা রয়েছে ১০ হাজার টাকা।
৮ নম্বর ওয়ার্ডের অধীনে অফিস রয়েছে ১৫টি। এর মধ্যে জেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে বকেয়াসহ পাওনা রয়েছে ২ লাখ ৮৯ হাজার ৫৫২ টাকা, জেলা পরিষদের দুটি ভবন থেকে বকেয়াসহ পাওনা রয়েছে ১৪ লাখ ৮৯ হাজার ৪৬০ টাকা।
এর মধ্যে সম্প্রতি কর পরিশোধ করেছেন কারিগরী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। ওই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ আরিফুর রহমান জানান, এর আগে যে পরিমাণ কর ছিলো তা হেড অফিসের অনুমোদন ছিলো। পরবর্তিতে পৌর কর বেড়ে যাওয়ায় হেড অফিসের অনুমোদন পেতে সময় লাগে। যে কারণে বকেয়া তৈরি হয়েছিলো। তবে বর্তমান প্রশাসক মহোদয়ের আহবানে আমরা ৩৫ লাখ টাকারও বেশি কর পরিশোধ করেছি।
তবে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারকে পৌর কর কেন দেওয়া হয়নি তার সদুত্তর না দিয়ে বলেন বুঝে নেন।
মেহেরপুর পৌরসভার প্রশাসক মো: শামিম হোসেন বলেন, প্রতিষ্ঠানসহ সেবাগ্রহিতারা যদি নিয়মিত কর পরিশোধ না করেন তবে পৌরসভার ব্যয় নির্বাহ করা কঠিন হয়ে যাবে। যেখানে প্রতিমাসে স্টাফ বেতনসহ বিভিন্ন খরচ রয়েছে।