প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন রোববার হঠাৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিবের পদ থেকে ইস্তফা পেতে চিঠি দিয়েছেন তিনি। অব্যাহতি নেওয়ার কারণও বিস্তারিত জানিয়েছেন আবেগঘন ওই স্ট্যাটাসে।
২০১৩ সালে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান সাংবাদিক খোকন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক এই সাধারণ সম্পাদক এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন। ২০১৩ সালে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে তিনবার তার মেয়াদ নবায়ন করা হয়।
তার অব্যাহতি চাওয়ার তথ্যে অনেকে অবাক হয়েছেন। তবে আশরাফুল আলম খোকন জানিয়েছেন, উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি আকর্ষণীয় এই পদ ছাড়তে চাইছেন। চুক্তিভিত্তিক চাকরিতে শিক্ষা ছুটির কোনো বিধান না থাকায় চাকরি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
ফেসবুকে খোকন লিখেছেন– যাত্রাটা শুরু হয়েছিল ১৮ আগস্ট ২০১৩। বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদের মাত্র ৫ মাস বাকি তখন। যুক্তরাষ্ট্রের আয়েশি জীবন ছেড়ে অনিশ্চয়তার পথে এসে হেঁটেছিলাম। কারণ তখন সবেমাত্র আওয়ামী লীগ ৫টা সিটি করপোরেশনে লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে হেরেছে। হেফাজত, বিএনপি, জামায়াতের বাঁশেরকেল্লা বাহিনীর অপপ্রচারে ত্রাহি অবস্থা। ওই সময়ে প্রধানমন্ত্রী আমাকে সুযোগ দিয়েছেন তার উপ-প্রেস সচিব হিসেবে কাজ করার। সরকারের কাজের প্রচার-প্রচারণা, গুজব প্রতিরোধ ও মিডিয়া সেক্টর নিয়ে কাজ করেছি। তবে তখনও সরকারের ব্যাপক উন্নয়নের সুনাম ছিল। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তি ইমেজ ছিল এখনকার মতোই প্রতিদ্বন্দ্বীহীন।
তিন-তিনবার নিয়োগ দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আশরাফুল আলম খোকন আরও লেখেন– ছোট সময় থেকে এই দলটির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার কারণে এ দায়িত্ব ছিল আমার জন্য বিশাল প্রাপ্তি ও সম্মানের। একে তো দেশের প্রধানমন্ত্রী আবার তিনি যদি হোন বঙ্গবন্ধুকন্যা। পর পর তিন-তিনবার নিয়োগ পাওয়ার মতো ভাগ্যবান একজন আমি। ১৭ কোটি মানুষের দেশে এই সৌভাগ্য কজনের হয়। আমি সেই ভাগ্যবানদের একজন। অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি। আমৃত্যু এই ঋণ শোধ হবে না। জীবনে যখন যেখানে যেভাবে থাকব, শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও দল ও নেত্রীর জন্য কাজ করে যাব।
কী কারণে পদত্যাগ করছেন তার কারণও উল্লেখ করেন স্ট্যাটাসে। খোকন লেখেন– ‘সুখবর হচ্ছে, আমি সাংবাদিকতার ওপর আরও পড়াশোনা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের হফস্ট্রা বিশ্ববিদ্যালয়ে (Hofstra University) একটি স্কলারশিপ পেয়েছি। গত সেপ্টেম্বরেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিশ্চিত করা হয়। সুযোগটি আমি হাতছাড়া করতে চাইনি। কারণ আমি মিডিয়াতে কাজ করা মানুষ। এই সেক্টরেই কাজ করে যেতে চাই। আর উচ্চশিক্ষার প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দুর্বলতা সবাই জানেন। তাদের পরিবারের সবাইকে তিনি উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমাকেও তিনি সেই সুযোগটি দিয়েছেন। কৃতজ্ঞতা নেত্রীর প্রতি।’
স্ট্যাটাসের শেষ দিকে কিছুটা আবেগী হয়ে ওঠেন খোকন। লেখেন– ‘আজ ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১, আমি আমার পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য আবেদনপত্র দিয়েছি। কারণ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে শিক্ষা ছুটির কোনো বিধান নেই। খারাপ সময়ে যোগদান করে ভালো সময়ে এসে সাড়ে সাত বছরের জার্নি আপাতত শেষ করতে যাচ্ছি। হয়তো আবার দেখা হবে। এই দীর্ঘ যাত্রাপথে যাদের সহযোগিতা পেয়েছি, তাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, ব্যক্তিগত অনুবিভাগ, দলের নেতাকর্মী এবং সর্বোপরি দেশের সব মিডিয়ার আলোকিত মানুষেরা। যাদের সহযোগিতা পাইনি, ক্রমাগত বিরোধিতা ও প্রতিবন্ধকতা পেয়েছি, তাদের প্রতিও অনেক কৃতজ্ঞতা। কারণ তাদের কারণে আমি এই বয়সেই অনেক কিছু শিখেছি, যা বাকি জীবন পথ চলতে অনেক সহায়ক হবে। সবাই ভালো থাকবেন। জয় বাংলা…।’
আশরাফুল আলম খোকনের এই পোস্ট ইতোমধ্যে ভাইরাল হয়ে গেছে। চার ঘণ্টায় সাড়ে তিন হাজারের বেশি লাইক পড়েছে। ৮২০ মন্তব্য করেছেন পোস্টের নিচে। অনেকেই তাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।