প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহরে হামলার মামলায় ১৬ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি আলাউদ্দিনকে চুয়াডাঙ্গা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৬। চুয়াডাঙ্গার দর্শনা পৌর এলাকার মোহাম্মদপুর থেকে শনিবার রাত ২টার দিকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আসামি আলাউদ্দিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘদিন পালিয়ে ছিলেন। ৪৩ বছর বয়সী আলাউদ্দিন সাতক্ষীরা জেলার কিসমত ইলিশপুর গ্রামের বাসিন্দা।
ঘটনার শুরু থেকে মামলা
২০০২ সালের ৩০ আগস্ট সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ধর্ষণের শিকার মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীকে দেখতে যান তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা। সেখান থেকে যশোরে ফেরার পথে কলারোয়া উপজেলা বিএনপি অফিসের সামনে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতা কর্মীরা একটি যাত্রীবাহী বাস রাস্তার উপরে আড় করে দিয়ে তার গাড়ি বহরে হামলা চালায়। হামলায় তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রকৌশলী শেখ মুজিবুর রহমান ও সাংবাদিকসহ দলীয় অনেক নেতা-কর্মী আহত হন। তখনকার সাতক্ষীরা-১ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম ও তাঁর নেতা-কর্মীরা এ হামলার পেছনে ছিলেন বলে সেসময় অভিযোগ ওঠে।
এ ঘটনায় ওই বছরের ২ সেপ্টেম্বর কলারোয়া মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোসলেমউদ্দিন বাদী হয়ে যুবদল নেতা আশরাফ হোসেন, আব্দুল কাদের বাচ্চুসহ ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৭০-৭৫ জনকে আসামি করে আদালতে মামলা করেন। মামলাটি বিভিন্ন আদালত ঘুরে হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর মামলাটি এজাহার হিসেবে গণ্য হয়। পরবর্তীতে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক শফিকুর রহমান ৫০ জনের নাম উলেখ করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন।
প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহরে হামলার প্রধান আসামি গ্রেপ্তার
কে এই আলাউদ্দিন?
গ্রেপ্তারকৃত আসামি আলাউদ্দিন উক্ত হামলার পরিকল্পনাকারী এবং বিস্ফোরক বহনকারীদের মধ্যে অন্যতম। সাতক্ষীরা-১ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলামের লোক। সে তার সহযোগীদের নিয়ে শেখ হাসিনার গাড়ি লক্ষ্য করে হাতবোমা নিক্ষেপ করে। ফলে অনেক নেতা-কর্মী গুরুতর আহত হন এবং বেশ কয়েকটি সরকারি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আলাউদ্দিন যার নির্দেশে কাজটি করেছিলেন বলে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে সেই হাবিব ২০০১ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির প্রার্থী হয়ে সাতক্ষীরা-১ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৫ সালে তার বিরুদ্ধে ২০০২ সালে সাতক্ষীরায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আক্রমণ করার অভিযোগ ওঠে এবং মামলা হয়।
মামলাগুলোর বিচারকার্য শেষে ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় ২০২৩ সালের ১৮ এপ্রিল সাতক্ষীরার স্পেশাল ট্রাইবুনাল-৩ এর বিজ্ঞ আদালত হামলার সঙ্গে জড়িত আসামিদের দোষী সাব্যস্ত করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করে।
ঝিনাইদহ র্যাব-৬ এর কোম্পানি কমান্ডার ইশতিয়াক হোসাইন গণমাধ্যমকে জানান, ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া থানা এলাকায় পৌঁছালে কতিপয় সন্ত্রাসী তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র, হাত বোমাসহ তার গাড়িবহরে হামলা চালায়। ওই হামলার ঘটনায় সাতক্ষীরার কলারোয়া থানায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনসহ বিভিন্ন আইনে আলাদা তিনটি মামলা করা হয়।
কীভাবে অভিযানে ধরা পড়লো
ঝিনাইদহ র্যাব-৬ এর কোম্পানি কমান্ডার ইশতিয়াক হোসাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সাজাপ্রাপ্ত আসামি আলাউদ্দিন চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনা পৌর এলাকার মোহাম্মদপুর আত্মগোপনে রয়েছে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শনিবার রাত ২টার দিকে সেখানে অভিযান চালিয়ে আলাউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়।